আছি

সুখে আছি, দুখে আছি, নিজস্ব বুদবুদে ডুবে আছি পোয়াতি নারীর মতো গর্তে বহু স্বপনের ভ্রুণ নিয়ে আছি সধবার নিরস্তর ভয় পাছে মুছে যায় সিঁথি-শুকজতারা সে রকমই ভয়ে-ভয়ে ঘাসের ভিতরে পোকা-মাকড়ের সঙ্গী হয়ে আছি। পাখিরা রয়েছে সঙ্গে, রুমালের পাড়ে লাল সুতো, নীল সুতো, সদীর বাঁশীর গান তারা বুনে দেয়। জঙ্গলও রয়েছে সঙ্গে, এক-শৃঙ্গ গণ্ডারও রয়েছে বাঘের […]

আজ্ঞে হ্যাঁ

সূর্য নামের ছোকরাটা বড় জ্বলতে শিখেছে, তাই না হে? আজ্ঞ হ্যাঁ। গনগণে চোখ, জ্বলজ্বলে ভূরু, উরু ভেঙে দিলে কেমন হয়? আজ্ঞ হ্যাঁ। আজকাল আর চাঁদে সে রকম রাবড়ির মতো জেল্লা নেই আজ্ঞে হ্যাঁ। টুনি বালবদের ফোলাপে ফাঁপালে প্রতিভা ছড়াবে হাজার গুণ। আজ্ঞে হ্যাঁ। নিজের লালার সরু সুতোর দিয়ে বেনারসী বোনে মাকড়সা। আজ্ঞে হ্যাঁ। আমারও তেমনি, […]

আশ্চর্য

কোমরে লাল ঘুনসি বাঁধা পোড়া বিড়ির টুকরোর মতো আমরা চতুর্দিকে ছড়ানো। কেউ মুথোঘাসের তলপেটে কেউ বুড়ো বটের গোড়ালির আড়ালে কেউ নর্দমার এটোঁ শালপাতার ডিঙিতে। নেশাখোরের মতো হাওয়া একবার দৌড়চ্ছে ডাইনে, একবার বাঁয়ে। এক জায়গায় জুটবো মন-খোলা জোৎস্নায় আড্ডা জমবে সারারাত হৈ হৈ গল্পের মাদল বাজিয়ে, তালা খুলব, যে যার খুপরির পাটে পাটে ভাঁজ করা স্মৃতি, […]

উৎকৃষ্ট মানুষ

উৎকৃষ্ট মানুষ তুমি চেয়েছিলে এই যে এঁকেছি। এই তার রক্ত-নাড়ি, এই খুলি এই তার হাড় এই দেখ ফুসফুসের চতুদিকে পেরেক, আলপিন সরু কাঁটাতার। এইখানে আত্মা ছিল গোল সূর্য, ভারমিলিয়ন ভাঙা ফুলদানি ছিল এরই মধ্যে ছিল পিকদানি পিকদানির মধ্যে ছিল পৃথিবীর কফ, থুতু, শ্লেষ্মা, শ্লেষ অপমান, হত্যা ও মরণ। উৎকৃষ্ট মানুষ তুমি খুঁজেছিলে এই যে এঁকেছি! […]

একটি উজ্জ্বল ষাঁড়

একটি উজ্জ্বল ষাঁড় লিফটে চেপে উর্ধ্বে উঠে যান, তখনই বন্দনা গান গেয়ে ওঠে, একপাল কৃতার্থ ছাগল। জুলিয়াস সীজারের মতো তিনি, মিশরের ফারাও এর মতো যেন এই শতাব্দীর তরুণ-বয়সী এক নবতম আলোকজান্ডার পাতলা ক্রীমের মতো বুদ্ধের মহন হাসি মুখে চেঙ্গিস খানের মতো চোখে বহুদূর স্বপ্নের রক্তাক্ত সিড়ি, যেন জেনে দিয়েছেন তিনি ভূ-মধ্যসাগর এসে পায়ে পড়ে হবে […]

একমুঠো জোনাকী

একমুঠো জোনাকীর আলো নিয়ে ফাঁকা মাঠে ম্যাজিক দেখাচ্ছে অন্ধকার। একমুঠো জোনাকীর আলো পেয়ে এক একটা যুবক হয়ে যাচ্ছে জলটুঙি পাহাড় যুবতীরা সুবর্ণরেখা। সাপুড়ের ঝাঁপি খুলতেই বেরিয়ে পড়ল একমুঠো জোনাকী পুজো সংখ্যা খুলতেই বেরিয়ে পড়ল একমুঠো জোনাকী। একমুঠো জোনাকীর আলো নিয়ে ফাঁকা মাঠে ম্যাজিক দেখাচ্ছে অন্ধকার। ময়দানের মঞ্চে একমুঠো জোনাকী উড়িয়ে জয়ধ্বনি দিয়ে উঠল যেন কারা। […]

এখনো

কাগজ পেলেই আঁকচারা কাটা অভ্যেস। একবার আঁকছিলুম রাজবাড়ি। আঁকতে আঁকতে হয়ে উঠলো আলকাতরা মাখা দৈত্য, কাগজ থেকে লাফ দিয়ে উঠলো দশ আঙুলের থাবা খাঁবো, খাঁবো, খাঁবো। সেই থেকে আর রাজবাড়ি আঁকি না। আঁকি রাজহাঁস, ময়ুর, জলের ঘূর্নি, আর সেই সব শিকড় যা ডুবে আছে আকুলি-বিকুলি তৃষ্ণার ভিতরে। পদ্মপাতায় ডুমুরের গুছির মতো ফলে থাকে যে শিশির […]

কবি

ওহে দেখতো দেখতো লোকটা চলে যাওয়ার সময় কি রেখে গেল? ভারী লুকনো স্বভাবের ছিল মানুষটা। ঘাড় গুজে, হাঁটু ভেঙে, চোখ জ্বালিয়ে বন-বাদাড়, নুড়ি পাথর, আগুন অন্ধকার, ঘেঁটে ঘেঁটে কী সব কুড়িয়ে বেড়াত দিনরাত। দেখতো কী রেখে গেল যাওয়ার সময়? সিন্ধুকটা খোল। ভিতরে কি? আজ্ঞে পান্ডুলিপি। ভল্টটা ভাঙো। ভিতরে কি? আজ্ঞে পান্ডুলিপি।

কে তোমাকে চেনে?

ডাইনিং টেবিলে বসে ব্রেকফাস্ট ডিনার খাচ্ছ রোজ। সে তোমাকে চেনে? যে খাট-পালঙ্গে শুয়ে স্বপ্নে তুমি চাঁদ সদাগর সে তোমাকে চেনে? যে আয়নাকে শরীরের সব তিল, সর্বস্ব দেখালে সে তোমাকে চেনে? যেন মেয়ে-দেখা, এত বেছে ঐ পর্দা কিনেছিলে ও তোমাকে চেনে? এই কালো টেলিফোন, ওয়ার্ডরোব, লং প্লেয়িং, টিভি এই সব থাক্-থাক্ বই, সোফা, নেপালী মুখোশ কে […]

কোনো কোনো যুবক যুবতী

একালের কোনো কোনো যুবক বা যুবতীর মুখে সেকালের মোমমাখা ঝাড়লন্ঠন স্তম্ভ ও গম্বুজ দেখা যায়। দেখে হিংসা জাগে। মানুষ এখন যেন কোনো এক বড় উনোনের ভাত-ডাল-তরকারির তলপেটে ডাইনীর চুলের আগুনকে অহরহ জ্বালিয়ে রাখার চেলা কাঠ, কাঠ-কয়লা-ঘুটে। মানুষ এখন তার আগেকার মানুষ-জন্মের কবচ, কুণ্ডল, হার, শিরস্ত্রাণ, বর্ম ও মুকুট বৃষের মতন কাঁধ, সিংহ-কটি, অশ্বের কদম পিঠে […]