কয়েকটি জরুরী ঘোষণা

আগামী চোদ্দ বছর মহিষ কিংবা নেউল রঙের মেঘের মুখদর্শন করব না কেউ। আগামী চোদ্দ বছর আমাদের কবিতা থেকে হিজড়ে-নাচন বৃষ্টির নির্বাসন। স্বেচ্ছাচারী এবং হামলাবাজ হাওয়াকে চোদ্দ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছি আমি আর পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় টেলিফোনে ট্রাঙ্কলে রেডিওগ্রামে জানিয়ে দিয়েছি সমস্ত বিক্ষুব্ধ জলস্রোত যেন মাটিতে নাক-খত দিয়ে ক্ষমা চেয়ে নেয় দুর্গত মানুষের কাদা-পায়ে। প্রত্যেক নদীর […]

গাছ অথবা সাপের গল্প

তোমাকে যেন কিসের গল্প বলবো বলেছিলাম? গাছের, না মানুষের? মানুষের, না সাপের? ওঃ, হ্যাঁ মনে পড়েছে। গাছের মতো একটা মানুষ। আর সাপের মতো একটা নারী কুয়াশা যেমন খামচা মেরে জড়িয়ে ধরে কখনো কখনো দুধকুমারী আকাশকে সাপটা তেমনি সাতপাকে জড়িয়ে ধরেছিল গাছটাকে। আর গাছটাও বেহায়া। লাজ-লজ্জা, লোক-লৌকিকতা ভুলে গিয়ে নৌকা ডুবে যাচ্ছে, এখুনি ঝাঁপ দিতে হবে […]

জেনে রাখা ভালো

জলের মাছের মতো অনায়াস হবে ভেবেছিলে সব হাঁটাহাঁটি? ভেবেছিলে ধোঁয়া, ধুলো, থুতু, কফ পেঁজা তুলো হয়ে উড়ে যাবে অন্য দিকে, তোমাকে ছাড়িয়ে? ভেবেছিলে পাট-ভাঙা জামায় লাগবে না পেট্রোলের, পাঁঠা-কাটা রক্তের বা নর্দমার দাগ? ভেবেছিলে টিকটিকির মতো রয়ে যাবে আজীবন মসৃণ দেয়ালে? সময়ের কারখানায় কেবল তোমারই জন্যে তৈরি হচ্ছে লক্ষ লক্ষ সরু আলপিন ব্লেড, ছুরি, ভোজালি, […]

জ্বর

স্মৃতিতে সর্বাঙ্গ জ্বলে একশ পাঁচ ডিগ্রী ঘোর জ্বর। টালমাটাল ঝড় ঘুষি মারে হাড়ে মাসে ব্রক্ষ্মতালু রক্তকণিকায় যেন তাকে ছিড়েখুড়ে অন্য কিছু বানাবে এখুনি। হঠাৎ হরিণ হয়ে হয়তো সে ছুটে যাবে বহুদূর বাঘ-ডোরা বনে তুমুল আগুন জ্বেলে পলাশ যেখানে যজ্ঞ করে। নিজের বিবিধ টুকরো জুড়ে জাড়ে হয়তো বা হলুদ শালিক অর্জুন গাছের সাদা থামে যেতে যেতে […]

দেরাদুন এক্সপ্রেস

দেরাদুন এক্সপ্রেস পড়ি-মরি দৌড়ে ছুটে গেল। কাকে ছুঁতে? জ্বলজ্বলে যুবক সেজে কার কাছে গেল? ডাকাতের মতো কালো অন্ধকারে, এই মাঝরাতে কাকে খুলে দেবে বলে পরেছে আলোয়-গাঁথা হার? চোখে তার জঙ্গলের খিদে-পাওয়া লাল চিতাবাঘ এই বন্য থাবা দিয়ে কাকে সে জড়াবে? প্রাগৈতিহাসিক কোনো স্মৃতির চন্দনগন্ধ মেখে মহেনএজাদারোর বৃষ জেগে উঠে দিয়েছে হুঙ্কার দেরাদুন এক্সপ্রেস সেইভাবে দৌড়ে […]

নেলকাটার

সুখ নেইকো মনে নেলকাটারটা হারিয়ে গেছে হলুদ বনে বনে। সাত বছর সাঁতার কাটিনি সমুদ্রের নীল শাড়ির আমিষ অন্ধকারে দশ বছর আগে শেষ ছুয়েছি পাহাড়ের স্তনচূড়া মাদল বাজিয়ে কতবার ডেকেছে হৈ-হল্লার জঙ্গল, যাইনি। আলজিভে উপুড় করে দিয়েছে মাতাল-হওয়ার কলসী, খাইনি। যাবার মধ্যে গত ডিসেম্বরে সাঁচী হাজার বছর পরে আবার দেখা যক্ষিনীদের সঙ্গে, হাসি ঠাট্টা-গল্পো। কিন্তু নেলকাটার […]

প্রজাপতি ঢুকেছে ভিতরে

সেই কবে বাল্যকালে বৃষ্টি হয়েছিল সেই কবে বৃষ্টিজলে ভিজেছিল লাজুক কদম সেই কবে কদমের ডালে এক পাখি বসেছিল সেই পাখি বলেছিলপৃথিবীর ভিতরে আরেক গর্ভকেশরের মতো গোপনীর পৃথিবী রয়েছে সেই পৃথিবীর খোঁজে চাঁদ সদাগর ঝড়ে-জলে ডুবে যাবে জেনেও নিজের নৌবহর সমুদ্রে ভাসিয়েছিল, ঘর পোড়া আগুনের মতো সাদা ফেনা সেই ফেনা পুষেছিল বড় বড় রাঘব বোয়াল সেই […]

প্রতিদ্বন্দ্বী! এসো যুদ্ধ হবে

ডালিম ফুলের লাল জার্সি পেয়ে গেছি প্রতিদ্বন্দ্বী! এসো যুদ্ধ হবে। অনন্ত হালদার এসে বলে গেল তুমি নাকি এক তরফা আশী বছরের ইজারা নিয়েছেঅ এই পৃথিবীর সব হাততালি। ধনুস্টঙ্কারের মতো তুমি নাকি বেঁকে গেছ মালা পেয়ে, মালা পেয়ে পেয়ে? অথচ জানো কাল তোমার ছায়াকে কারা পুড়িয়েছে তংসাবতী খালে। আগামী বৈশাখে সাত লক্ষ গোলাপের জনসভা ডেকেছে আমাকে […]

বুকের মধ্যে বাহান্নটা আলমারি

বুকের মধ্যে বাহান্নটা মেহগনি কাঠের আলমারি। আমার যা কিছু প্রিয় জিনিস, সব সেইখানে। সেই সব হাসি, যা আকাশময় সোনালী ডানার ওড়াওড়ি সেই সব চোখ, যার নীল জলে কেবল ডুবে মরবার ঢেউ সেই সব স্পর্ম, যা সুইচ টিপলে আলোর জ্বলে ওঠার মতো সব ঐ আলমারির ভিতরে। যে সব মেঘ গভীর রাতের দিকে যেতে যেতে ঝরে পড়েছে […]

ভাঙাভাঙি

সে এসে সমস্ত ভেঙে দিয়ে গেল বিকেল বেলায়। ইটের পাঁজার মতো থরে থরে সাজানো সুখের সাঁচীসত’প ভেঙে দিয়ে গেল। বুকের নিভৃত কোণে স্থাপত্যের এবং সি’তির কোনারক ভেঙে দিয়ে গেল। চুরমার শব্দে পাখি উড়ে গেল বৃক্ষলতা ছেড়ে নদী মুখ লুকোলো বালিতে। এত ভাঙাভাঙি এত টুকরো টুকরো কাঁচ, রক্তকণা কুঁচি কুঁচি ছেঁড়া পাপড়ি, পেরেক, আলপিন আমি একা […]