ব্রাজিল ভক্তদের কাছে খোলা চিঠি

সুমি, এতো মন খারাপ করো না। যে প্রশ্নটা আমি অনেকদিন আগে থেকে করে আসছি, তা আবার আজও বলি- ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনা আমাদের কে? সারা ফুটবলবিশ্বই আমাদের বন্ধু। সমগ্র বসুন্ধরাই আমাদের কাছে কুটুম্ববৎ। জাপান আমাদের সবচেয়ে বড় সাহায্যদাতা দেশ। বিশ্বকাপে তাদের আমরা সমর্থন করি না। মুসলমান দেশ হিসেবে ইরানকেও আমরা সমর্থন করি নি। এশীয় দেশগুলির কোনো পতাকা আমার চোখে পড়েনি ঢাকার কোনো বাড়ির ছাদে।

ভালো খেলাই যদি আমাদের সমর্থনের ভিত্তি হয় তবে, জার্মানি তো ভালো খেলেই জিতেছে। সে তিনবারের বিশ্বকাপ জয়ী। তার জয়ে খুশি হও। গত বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে ৫-১ গোলে বিধ্বস্ত করে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় দিয়েছে হল্যান্ড। তাকে সমর্থন করো।

যাকে সমর্থন করি তার পরাজয়টাই শুধু বড় হয়ে বুকে বাজবে, আর প্রতিপক্ষের বিজয়ের নান্দনিক সৌন্দর্যটা আমাদের চোখের জলে ভেসে যাবে? একবারও চোখে পড়বে না- এ কেমন কথা?

তবে এটা মানি- জার্মানির কাছে ব্রাজিলের পরাজয়ের ব্যবধানটা বড়ই দুঃখজনক। এটা একটা বিশ্ব রেকর্ড। এরকম বড় ব্যাবধানে বিশ্বকাপ ফুটবলের সেমি ফাইনালে আর কেউ কখনও হারেনি। হঠাৎ করে নেঈমার আর রক্ষণভাগের ( নামটা ভুলে গেছি) ঐ ছেলেটা না-থাকার ধাক্কাটা সামলে উঠতে পারেনি ব্রাজিল। জার্মান তার সুযোগ পুরোপুরি নিয়েছে।

সুনীল গাভাসকার একবার আক্ষেপ করে বলেছিলেন, আমি যখন আউট হই তখন দর্শকরা আমার নিন্দা করেন, কিন্তু আমি যে বোলারের করা একটা আনপ্লেয়েবল ভালো বলে আউট হয়েছি, সে কথা তারা বলেন না। বোলারের প্রশংসা করতে তারা ভুলে যান। তাদের কাছে আমার আউট হওয়াটাই যেন অপরাধ।

আমার কাছে তোমার মুখশ্রী ব্রাজিলের বিরুদ্ধে জার্মানির নান্দনিক বিজয়ের চেয়েও সুন্দর। ব্রাজিলের পরাজয়ের বেদনায় সেই মুখে দুঃখের কালো ছায়া পড়ুক, তা আমি চাই না। প্রাণখুলে হাসো। আনন্দ করো। মনে হচ্ছে- গত বিশ্বকাপের মতো এবারের বিশ্বকাপটিও ইউরোপীয় কাপেই পরিণত হতে চলেছে। জার্মানির কাছে বড় ব্যবধানে ব্রাজিলের পরাজয়ের মনস্তাত্বিক প্রভাব পড়বে আর্জেন্টাইন শিবিরে।

ব্রাজিলের রোনাল্দো ১৫ গোলের রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন বিশ্ব রেকর্ড(১৬ গোল) গড়ার জন্য জার্মানির বর্ষিয়ান স্ট্রাইকার মিরোস্লাভ ক্লোসাকে উষ্ণ-অভিনন্দন জানিয়ে লেখাটি শেষ করছি।