সাঁঝের পরের গ্রাম

একটা সময় ছিল যখন আমি ইংল্যান্ডের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় অহরহ ঘুরে বেড়াতাম; ভ্রমণে সপ্তাহের পর সপ্তাহ কেটে গেলেও শরীরের চনমনে ভাব বজায় থাকত। তখন ভ্রমণ থেকে প্রায়ই এক ধরনের উত্তেজনা পেতাম। কিন্তু এখন বয়স হয়ে গেছে বলে সহজেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়ি। কাজেই গ্রামে ফিরে আসার সময় সন্ধ্যার পর পরই এমন অবস্থা হয়, আমি আর কিছুতেই ঠিক মতো পা চালিয়ে হাঁটতে পারি না। আমার খুব একটা বিশ্বাস হতে চায় না, আমি এক সময় এই গ্রামে থাকতাম; সেও খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। আমি এখানে থেকেছি এবং এক রকম প্রভাব ফেলতে পারতাম এখানকার মানুষদের ওপরে।

এখানকার কিছুই আর চেনা মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে স্বল্প আলোকিত আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে আমি অবিরাম হেঁটে চলেছি। রাস্তার দুপাশে পাথরের তৈরি ছোট ছোট কুঁড়েঘর; এখানকার বাড়িঘরের অবস্থা সব সময়ই এরকম। রাস্তাটা মাঝে মাঝেই প্রচণ্ড রকমের চাপা হয়ে আসছে; বড়ো এবড়ো থেবড়ো দেয়ালের কোনো অংশে কনুই কিংবা ব্যাগ না রাখলে একটুও এগোতে পারছি না। তবু আশা ছাড়ি না আমি। অন্ধকারে হোঁচট খেতে খেতে এগোতে থাকি আর মনের ভেতরে আশা জাগে, এই তো গ্রামের ভেতরে রাস্তার মোড় পেলাম বলে। ওখানে পৌঁছতে পারলে সবকিছু ঠিক মতো চিনতে পারব, কিংবা গ্রামের চেনা জানা কারো সঙ্গে দেখা হয়ে যেতে পারে। কিছুটা সময় পার করার পরও রাস্তার মোড়ের দেখা পাই না কিংবা চেনা কারো দেখাও পাই না বলে মনটা একটু দমে যায়; ক্লান্তি এসে ভর করে। তখন সিদ্ধান্ত নিই সামনের যে কোনো একটা বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ব; অবশ্যই পরিচিত কেউ এসে দরজা খুলে দিবে। আমাকে দেখে চিনতে পারবে সে।

একটা রোগা পটকা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ি। দরজার ওপরের কড়িকাঠ খুব নিচু; ঢুকতে গেলে আমাকে অবশ্যই একদম কুঁজো হতে হবে। দরজার প্রান্তের নিচ দিয়ে ক্ষীণ আলো জিভ বের করে দিয়েছে বাইরের দিকে। ভেতরে লোকজন আছে; তাদের কণ্ঠ এবং হাসির শব্দ শুনতে পাচ্ছি। আমি খুব জোরে কড়া নাড়ি যাতে তাদের কথা বলার ভেতর দিয়েই আমার শব্দ শুনতে পায় তারা। কিন্তু ঠিক ওই মুহূর্তেই আমার পেছনের দিক থেকে একজন বলে ওঠে, হ্যালো।

পেছনে তাকিয়ে দেখতে পাই বছর বিশেক বয়স একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে ছেঁড়া জিন্স এবং ন্যাতানো জাম্পার। আমার থেকে একটু দূরে অন্ধকারের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে সে।

মেয়েটা বলে, একটু আগে আপনি আমাকে পাশ কাটিয়ে চলে এসেছেন। আমি আপনাকে ডাক দিয়েছিলাম। আপনি শুনতে পাননি মনে হয়।

সত্যি? আমি খেয়াল করিনি, দুঃখিত। সত্যিই আমি এতটা অবিনয়ী হতে চাইনি।

আপনি তো ফ্লেচার, তাই না?

তার কথায় কিছুটা মজে গিয়ে আমি বলি, হ্যাঁ।

আপনি আমাদের ঘরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ওয়েন্ডি ঠিক আপনার কথাই বলেছে। আমরা খুব উত্তেজিত বোধ করছি। আপনি ওই দলের একজন ছিলেন, তাই না?

হ্যাঁ, আমি বলি। তবে ম্যাগিস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। আমি বিস্মিত হয়েছি তুমি ওকে এভাবে এত ওপরে তুলে দেখছ বলে। আরো অনেকে ছিল; তারা ওর চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

আমি একের পর এক আরো অনেকের নাম বলে যাই। তাদের সবাইকে সে চিনতে পারে বলে মাথা ঝাঁকায়। দেখতে বেশ লাগে।

আমি আবার বলি, কিন্তু সেসব তো তোমাদের বোঝার বয়স হওয়ার আগে ঘটেছে। আমি বিস্মিত তুমি এসব বিষয় শুনেছ।

মেয়েটা বলে, আমাদের বোঝার বয়স হওয়ার আগের ঘটনা হলেও শুনতে শুনতে আমরা আপনাদের সবকিছু সম্পর্কে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল হয়েছি। এমনকি যারা তখন এখানে ছিল তাদের অনেকের চেয়ে আমরা অনেক বেশি জানি। ওয়েন্ডি আপনার ফটো দেখে সাথে সাথে আপনাকে চিনে ফেলেছে।

আমি তো জানতামই না তোমরা অল্প বয়সী ছেলেমেয়েরা আমাদের ব্যাপারে এতটা উৎসাহী। স্যরি, তোমাকে পাশ কাটিয়ে চলে এসেছি। তবে বুঝতে পারছ তো এখন অনেক বয়স হয়েছে। কোথাও ভ্রমণ করার সময় ঠিক মতো হাঁটা চলা করতে পারি না।

দরজার পেছন থেকে হৈচৈপূর্ণ কথাবার্তা ভেসে আসছে শুনতে পাই। আমি দরজার ওপরে আবার চাপড় মারি, এবার আরেকটু বেশি অধৈর্য হয়ে জোরে মারি। অবশ্য সামনের মেয়েটার সাথে কথাবার্তা খুব তাড়াতাড়ি শেষ করে দিতে এরকম করি তা নয়।

মেয়েটা আমার দিকে এক মুহূর্ত তাকিয়ে থেকে বলে, ওই সময়ের আপনারা সবাই এরকমই। ডেভিড ম্যাগিস কয়েক বছর আগে এখানে এসেছিলেন। ’৯৩ কিংবা ৯৪ সালে হবে। তাঁকেও এরকমই মনে হয়েছে। কিছুটা রহস্যঘেরা। কিছুক্ষণ পর আপনারও সে রকম অবস্থাই দাঁড়াবে, সব সময় তো ভ্রমণের ওপরই আছেন।

আমি বলি, ও আচ্ছা, তাহলে ম্যাগিস এখানে এসেছিল। বেশ মজার কথা তো। জানো তো, আসলে সে সত্যি সত্যি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের কারো মতো নয়। তাকে নিয়ে এরকম ধারণা পোষণ করার দরকার নেই। অবিশ্বাস্য হলেও মনে হয় তুমি বলতে পারবে এখানে এই কুঁড়েঘরটাতে কারা থাকে।

আমি আবারো দরজায় আঘাত করি। মেয়েটা বলে, পেটারসনরা থাকেন। তারা এখানে অনেক দিন ধরেই আছেন। তারা মনে হয় আপনাকে চিনতে পারবেন।

পেটারসনরা থাকেন? আমি তার কথারই পুনরাবৃত্তি করি। কিন্তু এরকম নাম আমার পরিচিত বলে মনে হয় না।

মেয়েটা বলে, আপনি আমাদের ঘরে আসেন না কেন। ওয়েন্ডি খুব উত্তেজিত অবস্থায় আছে। আমাদের বাকি আর সবাইও সেরকমই। আগের দিনের কারো সাথে কথা বলার সুযোগ পাওয়া আমাদের জন্য সত্যিই সৌভাগের ব্যাপার।

আমি বলি, তোমাদের সাথে কথা বলতে আমারও সেরকমই লাগবে। তবে তার আগে আমার একটু থিতু হওয়া দরকার। তাহলে পেটারসনরা থাকে এখানে বলছ, তাই না?

আমি দরজায় আবার আঘাত করি, এবার মোটামুটি ভয়ানক রকমের জোরে। এবার দরজা খুলে যায়; সাথে সাথে বাইরের রাস্তায় আলো আর উষ্ণতা ছড়িয়ে পড়ে। দরজায় একজন বৃদ্ধ লোক দাঁড়িয়ে। আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তিনি জিজ্ঞেস করেন, নিশ্চয় তুমি ফ্লেচার নও, নাকি ফ্লোচার?

হ্যাঁ, আমি ফ্লেচার। একটু আগে গ্রামে ঢুকেছি। বেশ কদিন ভ্রমণের ওপরেই আছি।

আমার কথাটা নিয়ে কিছুক্ষণ কী যেন ভাবলেন তিনি। তারপর বললেন, তুমি বরং ভেতরেই এস।

কাজুও ইশিগুরোখুব অপরিচ্ছন্ন রুমটাতে ঢুকে দেখতে পাই বিভিন্ন জিনিসপত্র গাদাগাদি করে রাখা আছে। এলোমেলো অকেজো কাঠ, ভাঙা আসবাবপত্র ইত্যাদি এখানে ওখানে ছড়িয়ে আছে। ফায়ারপ্লেসে কাঠের একটা গুড়ি জ্বলছে; ঘরের মধ্যে সেটাই আলোর একমাত্র উৎস। সে আলোতে দেখতে পাই রুমের ভেতর এখানে ওখানে ছড়িয়ে বসে আছে কয়েকজন মানুষ। বৃদ্ধ লোকটা গজগজ করতে করতে আমাকে আগুনের পাশের একটা চেয়ারের কাছে নিয়ে যান। তার বিড়বিড় কথা থেকে বুঝতে পারি এইমাত্র তিনিই খালি করেছেন চেয়ারটা। চেয়ারে বসার পর দেখতে পাই আমার চারপাশের জিনিসপত্র কিংবা মানুষজন দেখার জন্য ঘাড় ঘোরাতে পারছি না। তবে আগুনের ওম বেশ আরামদায়কই মনে হচ্ছে। মুহূর্তখানেকের জন্য আমি আগুনের শিখার দিকে তাকিয়ে থাকি। দুর্বলতার মতো নিদ্রালস্য ছড়িয়ে পড়তে থাকে আমার ওপরে। আমার পেছনের দিক থেকে কারো কারো কণ্ঠ ভেসে আসে; তারা জিজ্ঞেস করে আমি ভালো আছি কি না, আমি অনেক দূর থেকে এসেছি কি না, আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে কি না ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি যথাসাধ্য তাদের প্রশ্নের জাবাব দিয়ে যাই। তবে আমি বুঝতে পারি আমার উত্তর তাদের প্রশ্নের জন্য যথেষ্ট মনে হচ্ছে না। অবশেষে তাদের প্রশ্ন থেমে যায় এবং আমার মনে হয় আমার উপস্থিতি তাদেরকে অসহনীয় বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। কিন্তু রুমের ভেতরকার উষ্ণতা আর আমার বিশ্রাম নেয়ার সুযোগের কারণে আমি কিছু বলি না। থাকুক তারা এরকম অবস্থায়।
তবু আমার পেছন পাশে বসে থাকা মানুষদের মধ্যে অটুট নীরবতা কয়েক মিনিটি বজায় থাকার পর আমার মনের ভেতর তাদের সাথে কথা বলার সংকল্প জেগে ওঠে। অন্তত ভদ্রতার খাতিরে হলেও তাদের সাথে কথা বলা দরকার। চেয়ারে বসা অবস্থাতেই আমি মাথা ঘুরিয়ে তাদের দিকে তাকাতেই আমি তাদের চিনতে পারছি এমন একটা বোধ চলে আসে। খুব নিশ্চিত না হয়েই আমি এ বাড়ির দরজায় কড়া নেড়েছি। তবু এখন বুঝতে পারছি এ গ্রামে যে কয়েক বছর আমি ছিলাম তখন এ বাড়িটাতেই ছিলাম। আমার দৃষ্টি ঘরের দূরের কোণার দিকে ধাবিত হলে মনে আসে এখানটাতেই আমি থাকতাম। এ মুহূর্তে আবছা অন্ধকারে ঢেকে আছে। এখানেই পাতা ছিল আমার জাজিমটা। এখানেই বইয়ের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে কত প্রশান্ত ঘণ্টা পার করেছি আমি, কিংবা যে কেউ এলে এখানে বসেই কাটিয়ে দিয়েছি আমাদের কথোপকথনের নিবিড় ঘণ্টাগুলো। গরমের মৌসুমে বিশুদ্ধ বাতাস ঘরের মধ্য দিয়ে প্রবাহের জন্য ঘরের জানালা এবং কখনও কখনও দরজাও খুলে রাখা হতো। তখনকার দিনে এই কুড়ে ঘরটার চারপাশেই খোলা মাঠ ছিল। আর আমার বন্ধুদের কণ্ঠস্বর ভেসে আসত লম্বা ঘাসের ওপর দিয়ে। তারা কবিতা কিংবা দর্শন নিয়ে তুমুল তর্ক বিতর্কে মেতে থাকত। টুকরো টুকরো অতীত আমার কাছে এতটাই মূল্যবান হয়ে ফিরে আসতে থাকে যে আমি আর সহজে এই ঘরের আমার পুরনো কোণটাতে উঠে যেতে পারি না। আচ্ছন্নের মতো অনড় হয়ে বসে থাকি।

তাদের আরেকজন আমার সাথে কথা বলা শুরু করে। মনে হয় আরেকটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে। তার কথা খুব পরিষ্কার শুনতে পাই না। তাদের শরীরের ছায়ার ভেতর দিয়ে দৃষ্টি চালিয়ে দিয়ে আমার থাকার সেই আগের জায়গাটা দেখার চেষ্টা করি। একটা সরু বিছানা একটা পুরনো পর্দা দিয়ে ঢাকা আছে। আমার জাজিমটা যেখানে ছিল সে জায়গাটা প্রায় পুরোপুরি ঢেকে রেখেছে পর্দাটা। বিছানাটা দেখে মনে হয়ে আমাকে যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। তবে তখনই আমি বৃদ্ধ লোকটার সাথে কথা বলা শুরু করি।

আমি বলি, শুনুন, বলতে খুব বেমানান লাগছে। তবু বলি, বুঝতে পারছেন তো আমি অনেক দূর থেকে এসেছি। আমি খুব ক্লান্ত। আমার এখনই শুয়ে পড়া উচিত। চোখ বন্ধ করা দরকার। কয়েক মিনিটের জন্য হলেও দরকার। তারপর আমি সন্তুষ্ট। আপনাদের সবার সাথে কথা বলতে পারব।

দেখতে পাই রুমের সবাই অস্বস্তি নিয়ে জায়গা ছেড়ে এদিক ওদিক সরে যাচ্ছে। তখন নতুন আরেকজনের কণ্ঠ শুনতে পাই, কিছুটা অনুযোগের সুর তার কণ্ঠে, ঠিক আছে। যাও। ঘুমিয়ে নাও খানিক। আমাদের জন্য কিছু মনে নিও না।

তবে যে যা-ই বলুক সেদিকে বেশি গুরুত্ব না দিয়ে তাদের উপস্থিতির ভীড় এড়িয়ে আমি কোণের বিছানার দিকে এগিয়ে যাই। বিছানাটা মনে হয় বেশ আর্দ্র। আমার শরীরের ভারেই স্প্রিং কচকচ করে ওঠে। তবে তাদের দিকে পেছন ফিরে হাত-পা কুঁকড়ে কোনো রকমে শুয়ে পড়ার পরই আমার দীর্ঘ ভ্রমণের দৃশ্যগুলো ফিরে আসতে থাকে। দৃশ্যগুলোর ভেতর দিয়ে ঘুমের ভেতর ডুবে যেতে যেতে আমি শুনতে পাই বৃদ্ধ লোকটা বলছেন, নিশ্চয় ও ফ্লেচার। হায় ঈশ্বর, ওরও বয়স হয়ে গেছে কত!

আরেকজন মহিলা কথা বলে ওঠে, আমরা কি ওকে এভাবে ঘুমাতে দেব? কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হয়তো ও জেগে উঠবে। তখন ওর সাথে আমরা জেগে থাকতে পারব।

আারেকজন বলে, ওকে ঘণ্টাখানেকের জন্য ঘুমাতে দেয়া দরকার। ও যদি এক ঘণ্টার পরে আরো ঘুমিয়ে থাকেই তখন না হয় ওকে ডেকে জাগিয়ে দেয়া যাবে।

সে মুহূর্তে আমি পুরোপুরি ক্লান্তির অতলে ডুবে আছি।

আমি একটানা আরামে ঘুমাতে পারি না। ঘুম আর জাগরণের মাঝে আমার যাওয়া আসা চলতে থাকে। রুমের মধ্যে তাদের কণ্ঠের টুকটাক কথাবার্তা আমার চেতনায় জেগে থাকে। এক সময় তাদের একজনের কণ্ঠে শুনতে পাই, আমি জানি না আমার ওপরে তার প্রভাব কীভাবে এতদিন ধরে রয়ে গেল। এখন তাকে কী রকম নোংরা লাগছে।

আধো ঘুম আধো জাগরণের মধ্যে আমি নিজের সাথেই বিতর্কে জড়িয়ে পড়ি- তার কথাগুলো আমাকেই বুঝাচ্ছে, না কি ডেভিড ম্যাগিসকে বুঝাচ্ছে। বিষয়টা পরিষ্কার হওয়ার আগেই আবার ঘুমের অতলে তলিয়ে যাই আমি।

পরে আবার যখন জেগে উঠি বুঝতে পারি রুমটা আগের চেয়ে আরো অন্ধকার হয়েছে, আরো ঠাণ্ডা হয়েছে। আমার পেছনে তাদের কণ্ঠ আরো নিচু হয়েছে। তবে তাদের কথাবার্তার মাথামুণ্ডু কিছু বুঝতে পারছি না। এখানে এভাবে ঘুমিয়ে পড়ার জন্য বিব্রতবোধ হতে থাকে। আরো কয়েক মুহূর্ত অনড় হয়ে দেয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়েই শুয়ে থাকি। তবে আমার কোনো আচরণে হয়তো তারা বুঝে ফেলেছে আমি জেগে আছি। কেননা তাদের সবার আলাপের মধ্য থেকে একজন মহিলার কণ্ঠ আলাদা মনে হয় আমার। অন্যদের লক্ষ করে সে বলে, দ্যাখো, দ্যাখো!

তারা একে অন্যের সাথে ফিসফিস করে কী যেন বলাবলি করে। তারপর বুঝতে পারি আমার দিকে কে যেন এগিয়ে আসছে। অনুভব করতে পারি আমার কাঁধের ওপরে আলতো করে হাত রাখছে। তার দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে দেখতে পাই একজন মহিলা হাঁটু মুড়ে আমার ওপরে ঝুঁকে আছে। রুমের ভেতরে ভালো করে দেখার জন্য আমার শরীর খুব একটা ঘুরাইনি। তবে বুঝতে পারি রুমের মধ্যে হালকা এই আলোটুকু ছড়িয়ে পড়ছে নিভন্ত কয়লার আগুন থেকে। আর মহিলার মুখটা দেখা যাচ্ছে ছায়া ছায়া আধো আলোয়।

আমাকে উদ্দেশ্য করে সে বলে, ফ্লেচার, এবার আমাদের কথা বলা দরকার। তোমার ফিরে আসার জন্য আমি অনেক দিন অপেক্ষায় আছি। তোমার কথা আমার প্রায়ই খুব মনে পড়েছে।

তার দিকে ভালো করে তাকিয়ে তার মুখটা আরো ভালো করে দেখার চেষ্টা করি। তার বয়স চল্লিশের কোঠায়। রুমের ভেতরের আবছা অন্ধকারেও বুঝতে পারি তার মুখের ওপরে ছড়িয়ে আছে ঘুম ঘুম দুঃখি ভাব। কিন্তু তার মুখ দেখে আমার ভেতরে কোনো অস্পষ্ট স্মৃতিও জাগে না।

আমি বলি, দুঃখিত। আপনাকে দেখে আমার তো কিছু মনে পড়ছে না। আমাদের মধ্যে আগে যদি দেখা হয়েই থাকে আমার এই অক্ষমতার জন্য মাফ করবেন। ইদানিং আমার কিছু মনে থাকে না।

সে বলে, ফ্লেচার, আমরা দুজন দুজনকে যখন চিনতাম আমার বয়স অল্প ছিল। আমার চেহারাও সুন্দর ছিল। আমি তোমার খুব ভক্ত ছিলাম। তোমার সব কথাই মনে হতো সকল রহস্যের উত্তরের মতো। এখন তুমি আবার এখানে ফিরে এসেছ। অনেক দিন ধরেই তোমাকে বলতে চেয়েছি তুমি আমার জীবনটা ধ্বংস করে দিয়েছ।

আমি বলি, আপনি ঠিক বলছেন না। হতে পারে আমি অনেক বিষয়ে ভুলত্রুটি করেছি। কিন্তু আমার কাছে সব প্রশ্নের উত্তর আছে বলে কখনও দাবি করিনি। সেসব দিনে আমি শুধু বলেছি আমাদের সবারই উচিত চলমান বিতর্কে অবদান রাখা। কারণ এখানকার সাধারণ মানুষদের চেয়ে আমরা এসব ব্যাপারে বেশি ওয়াকিবহাল ছিলাম। লোকজন যদি আমরা বেশি কিছু জানি না বলে আমাদের সময় ক্ষেপণ করে থাকত তাহলে কাজে নামতো কারা? তবে আমার কাছে সব প্রশ্নের উত্তর আছে বলে কখনও দাবি করিনি। আমি নিশ্চিত আপনি ঠিক বলছেন না।

কাজুও ইশিগুরোএবার তার কণ্ঠ অস্বাভাবিক রকমের নরম হয়ে আসে, ফ্লেচার, আমি এখানে তোমার রুমে যখনই এসেছি প্রায় প্রতিবারই আমরা মিলিত হয়েছি। তোমার এই কোণার রুমে আমরা কত রকমের গোপন কাজ করেছি। লোকের চোখে খারাপ দেখা গেলেও আমরা কী সুন্দর উপভোগ করেছি। এখন ভাবতেই অবাক লাগে অথচ এক সময় তুমি আমাকে শারীরিকভাবে কী রকম উত্তেজিত করে তুলতে! আর এখন তুমি দুর্গন্ধযুক্ত ন্যাকড়ার পুটলি ছাড়া আর কিছু নও। আমার দিকে ভালো করে তাকিয়ে দ্যাখো। আমি এখনও আকর্ষণীয়া। আমার মুখে শুধু দুচারটে দাগ পড়ে গেছে। গ্রামের রাস্তায় বের হওয়ার সময় এখনও আমি আমার শরীর দেখানোর জন্য তৈরি বিশেষ পোশাকগুলোই পরি। এখনও কত পুরুষ আমাকে চায়। আর তুমি? তোমার অবস্থা যা হয়েছে, কোনো নারীই তোমার দিকে ফিরে তাকাবে না। দুর্গন্ধযুক্ত মাংসের দলা আর ন্যাকড়ার পুটলি!
আমি বলি, আমি আপনাকে চিনতে পারছি না। আর ইদানিং আমার যৌনকর্ম করার কোনো ইচ্ছে নেই। আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে মাথা ঘামানোর। হতে পারে সেসব দিনে আমার কোনো কাজে ভুলত্রুটি হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু আরো অনেকের চেয়ে আমি বেশিই চেষ্টা করেছি ভুলত্রুটি শোধরানোর। দেখতেই পাচ্ছেন আমি এখনও ভ্রমণের ওপরেই আছি। আমি কখনও থামিনি। এক সময় যদি কোনো ভুল করেই থাকি সে ভুল শোধরানোর চেষ্টায় একটানা ভ্রমণ করেই যাচ্ছি। সেসব দিনের আর সবার চেয়ে আমার কাজ এখনও বেশি। যেমন ম্যাগিসের কথাই বলা যায়, আমি জোর গলায় বলতে পারি সে কখনও আমার মতো কঠোর পরিশ্রম করেনি।

মহিলা আমার চুলের ভেতর দিয়ে তার আঙুল চালাতে থাকে, খেয়াল করে দ্যাখো, আমি এভাবে তোমার চুলের ভেতর দিয়ে আঙুল চালাতাম। তোমার এই ময়লা জড়ানো চুলের দিকে দ্যাখো। মনে হয় সব রকমের ছোঁয়াচে আগাছা তোমার চুলের মধ্যে এসে জড়ো হয়েছে।

মুখে এরকম কথা বললেও সে আঙুল চালানো থামায় না। তবে তার এরকম আদরে আমার মধ্যে কোনো রকম প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় না। সে হয়তো আমার মধ্যে যৌন আবেশ তৈরি করতে চেয়েছিল। কিন্তু সেরকম কিছুই আমার মধ্যে তৈরি হচ্ছে না। তার ছোঁয়া বরং মাতৃসুলভ মনে হতে থাকে আমার। সত্যিই এক সময় আমার মনে হতে থাকে আমি যেন সুরক্ষিত আশ্রয় পেয়ে গেছি। আরেকবার ঘুমিয়ে পড়ার মতো আবেশ তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু সে আমার চুলের ভেতর আঙুল চালানো হঠাৎ থামিয়ে দেয়।

আমার কপালের ওপরে চাপড় মেরে বলে, এখন আমাদের সবার সাথে কথাবার্তায় ফিরে আসছ না কেন? তোমাকে আরো অনেক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে হবে।

তার কথা শেষ করার সাথে সাথে সে উঠে পড়ে।

এবারই প্রথম আমি শরীরটা অনেকখানি ঘুরিয়ে রুমের ভেতরটা দেখতে চেষ্টা করি। মহিলা রুমের অন্যদের ভীড় ঠেলে এগিয়ে যাচ্ছে। আগুনের পাশে রাখা খালি দোল চেয়ারটাতে সে বসল। নিভন্ত আগুনের পাশে আরো তিন জনের ছায়া ছায়া শরীরের অবয়ব দেখতে পাই। একজনকে চিনতে পারছি: যে বুড়ো লোকটা দরজা খুলে দিয়েছিলেন তিনি। অন্য দুজন একটা বাক্সের মতো কিসের ওপরে যেন বসে আছে। দুজনই মহিলা। আমার কাছে এসে কথা বলে গেল যে মহিলা তার মতোই বয়স হবে হয়তো।

আমার নড়াচড়া বুড়ো লোকটার নজরে পড়েছে। তিনি আঙুল তুলে অন্যদের দেখাতে থাকেন আমি জেগে উঠেছি। তারা চারজনই শক্ত হয়ে জুৎ করে বসে, তবে মুখে কোনো কথা বলে না। তাদের ভাব দেখে বোঝা যায় আমি ঘুমিয়ে থাকাকালীন তারা আমার কথাই আলোচনা করেছে। আসলে তাদের দিকে তাকিয়ে আমি মোটামুটি বুঝতে পারি তাদের আলোচনা কী আকার পেয়েছে। যেমন আমার সাথে বাইরে যে মেয়েটার দেখা হয়েছে তাকে নিয়ে তাদের চিন্তার কথা এবং মেয়েটার সমবয়সীদের ওপরে আমার প্রভাবের কথা তাদের আলোচনায় এসেছে।

বুড়ো লোকটা হয়তো মহিলাদের বলেছেন, এখনকার অল্পবয়সীদের সবাই সহজেই মুগ্ধ হয়ে যাওয়ার মতো। এই মেয়েটা অন্যদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলছিল ওকে।

তার কথার সুর ধরে ট্রাঙ্কের ওপরে বসা মহিলাদের কোনো একজন হয়তো বলেছে, তবে ও এখন আর কারো খুব বেশি ক্ষতি করতে পারবে না। আমাদের সময়ের ব্যাপার আলাদা ছিল: ওরা সবাই বয়সে অল্প ছিল আর চেহারায় ওদের চাকচিক্য ছিল। কিন্তু এখন সময় বদলেছে। এখন ওরা সংখ্যায় কমে গেছে। মাঝে মধ্যে দুএকজনকে দেখা গেলেও চেহারায় আর সেই জৌলুস নেই। ওর মতো ভাঙা-চোরা চেহারায় কাউকে দেখলে বরং আগের দিনের রহস্যের জাল ছিড়ে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যায়। তাছাড়া ওর মতো লোকদের ইদানিং অবস্থানেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। তাদের বিশ্বাস সম্পর্কে নিজেরাই জানে না কিছু।

মহিলার কথা বুড়ো লোকটা নিশ্চয় মাথা ঝাঁকিয়ে বলেছেন, ওই মেয়েটা ওর দিকে কীভাবে তাকিয়েছিল আমি দেখেছি। ঠিক আছে, ওর ভাঙাচোরা চেহারা দেখে এখন করুণা ছাড়া আর কী হতে পারে? কিন্তু অল্পবয়সী পোলাপান ওর অহংয়ের খোরাক জোগাতে পারে আবারও। আবারও অল্পবয়সীদের কাছ থেকে প্রশংসা পাচ্ছে ও। তারা ওর চিন্তাচেতনা সম্পর্কে শুনতে চায়। এমনও হতে পারে তখন আর ওকে থামানো যাবে না হয়তো। অবস্থা হয়তো আগের মতোই হয়ে যাবে। ও তখন ওর পক্ষে কাজ করার জন্য সবাইকে পেয়ে যাবে। বাইরের মেয়েটার সমবয়সী আরো যারা আছে তারা বিশ্বাস স্থাপনের মতো তেমন কিছুই পাচ্ছে না এখন। এমন কি গায়ে দুর্গন্ধঅলা এই ভবঘুরের কাছ থেকে কিছু পেলেও তারা সেটাকেই বিশ্বাস করে বসতে প্রস্তুত আছে।

আমি যতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম তাদের কথাবার্তা এরকমই হয়তো চলেছে। কিন্তু এখন যেহেতু আমি জেগে উঠেছি তাদের সামনের নিভন্ত আগুনের দিকে তাকিয়ে অপরাধবোধের নীরবতার ভেতর চুপচাপ বসে আছে। কিছুক্ষণ পরে আমি উঠে দাঁড়াই। তারা চারজনই কোনো কারণ ছাড়াই আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। মনে হচ্ছে আমার দিকে সরাসরি তাকাতে চাচ্ছে না। আমি আরো কয়েক মুহূর্ত অপেক্ষা করতে থাকি তাদের কেউ কিছু বলে কি না। তারা কিছু বলে না দেখে শেষে আমিই কথা বলে উঠি, ঠিক আছে, আমি একটু আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আমি অনুমান করতে পারি আপনারা কী বিষয়ে কথা বলছিলেন। শুনে আপনাদের আগ্রহ বাড়তে পারে- আপনারা যেটা নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন আমি সেটাই করতে যাচ্ছি। আমি অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের সবার বাড়িতে তাদের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। জগতে স্থায়ী মঙ্গলজনক কোনো কিছু অর্জন করার জন্য তাদের সর্বশক্তি, তাদের সব স্বপ্ন এবং তাদের প্রবল তাড়না নিয়ে তারা কী কী করতে পারে সেসব বলতে যাচ্ছি। আপনারা নিজেদের দিকে ভালো করে তাকান; কেমন করুণ দেখাচ্ছে আপনাদের জটলাটাকে। যে কোনো কাজকেই আপনারা ভয় পান; আমাকে নিয়ে আপসাদের ভয়, ম্যাগিসকে নিয়ে ভয়, আগের দিনের কোনো ব্যক্তিকেই আপনাদের ভয়। ভয়ে আপনারা ঘরের কোণে গুটিসুটি মেরে বসে আছেন। জগতের যে কোনো কাজকেই আপনারা ভয় পাচ্ছেন আমরা একবার সামান্য কয়েকটা ভুল করেছিলাম বলে। এত কয়েক বছর ধরে আপনারা ওদের কাছে আলস্যের পক্ষে বয়ান প্রচার করেছেন তবু অল্প বয়সী ওরা অতটা হতাশায় ডুবে যায়নি। আমি ওদের সাথে কথা বলব। আপনাদের হতভাগ্য প্রচেষ্টার যে করুণ প্রভাব ওদের ওপর ফেলেছেন সেটা আমি মাত্র আধাঘণ্টা সময়ের মধ্যে ওদের ওপর থেকে দূর করে দেব।

বুড়ো লোকটা অন্যদের উদ্দেশ্য করে বললেন, দেখেছ? আমি জানতাম এরকমই হবে। ওকে আমাদের থামানো উচিত। কিন্তু ওকে থামানোর জন্য আমরা কী-ই বা করতে পারি!

উঠে রুমের ভেতর দিয়ে এগিয়ে গিয়ে আমার ব্যাগটা তুলে বাইরে রাতের ভেতর গিয়ে পড়লাম।

বের হয়ে দেখলাম মেয়েটা তখনও আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমার আসার পথের দিকে সে তাকিয়ে ছিল। আমাকে দেখে একটুখানি মাথা নত করে আমাকে পথ দেখিয়ে আগে আগে চলল।

অন্ধকার রাত। মাথার ওপরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ফোটা পড়ছে। কুড়েঘরগুলোর মাঝখান দিয়ে চাপা পথে আমরা এঁকেবেঁকে চলছি। ঘরগুলেরার অবস্থা খুবই জীর্ণ। কোনোটার অবস্থা এমনই নাজুক যে আমার মতো মানুষের গায়ের জোর দিয়ে ঠেলা দিলেই পড়ে যাবে।

কাজুও ইশিগুরোমেয়েটা আমার চেয়ে কয়েক কদম এগিয়ে আছে সব সময়ই। মাঝে মাঝে কাঁধের ওপর দিয়ে পেছনে ফিরে দেখছে। একবার বলে ফেলল, ওয়েন্ডি আপনাকে দেখলে ভীষণ খুশি হবে। এখানে ঢোকার সময় আপনি ঘরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন সে বলেছে নিশ্চয় আপনিই যাচ্ছেন। এতক্ষণ সে আরো নিশ্চিত হয়ে গেছে তার অনুমানই ঠিক। কারণ আমি এতক্ষও বাইরেই আছি। সবাইকে হয়তো ডেকে জড়ো করেছে। তারা সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে হয়তো।
তোমরা কি ডেভিড ম্যাগিসকেও এভাবে স্বাগতম জানিয়েছ?
ওহ, হ্যাঁ। তিনি যখন এলেন তখন আমরা আনন্দে খুব উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলাম।
আমি নিশ্চিত সে খুব খুশি হয়েছিল। নিজের গুরুত্ব সম্পর্কে তার ধারণা সব সময়ই একটু অতিরঞ্জনের দিকে।
ওয়েন্ডি বলে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অন্যতম। ওয়েন্ডি আপনার প্রসঙ্গে বলে আপনি আসলেই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি।
মেয়েটার কথা শুনে এক মুহূর্তের জন্য আমার সে রকমই মনে হলো। আমি বলি, জানো তো আমি অনেক বিষয়ে আমার মতামত পাল্টেছি। আমি আগের দিনগুওলোতে যেসব কথা বলতাম সেগুলো নিয়েই যদি ওয়েন্ডি মেতে থাকে তাহলে আমার মনে হয় সে হতাশ হতে পারে।
দেখে মনে হচ্ছে মেয়েটা আমার কথা শুনতে পায়নি। কুড়েঘরগুলোর মাঝখান দিয়ে সে আমাকে পথ দেখিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর মনে হলো কারা যেন আমাদের অনুসরণ করছে। প্রায় দশ বারোজন মানুষের পায়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। প্রথমে মনে হলো তারা সবাই গ্রামেরই লোক। বাইরে হাঁটতে বের হয়েছে। হাঁটতে হাঁটতে এক দিকেই চলেছে। ফিরে যাচ্ছে না। কিন্তু তারপর মেয়েটা রাস্তার একটা বাতির নিচে হঠাৎ থেমে গিয়ে আমাদের পেছনে তাকায়। তার দেখাদেখি আমিও থেমে গিয়ে পেছনে তাকাই। কালো ওভারকোট গায়ে মাঝবয়সী একটা লোক আমাদের দিকে আসছিল। কাছে এসে হাত বাড়িয়ে আমার সাথে হ্যান্ডশেক করল। তবে তার মুখে হাসি দেখলাম না।
সে বলল, তাহলে ফিরে এসেছ?
তখন বুঝতে পারলাম ওকে তো চিনি। আমাদের বয়স যখন দশ বছর তার পর থেকে আর আমাদের দেখা হয়নি। ওর নাম রজার বার্টন। স্কুলে আমরা একই ক্লাসে পড়তাম। আমার পরিবার ইংল্যান্ডে ফিরে আসার আগে আমি দুবছর কানাডায় পড়াশোনা করেছি। সে যে আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল তা নয়। স্বাভাবে সে খুব চাপা ছিল এবং সেও ইংল্যান্ড থেকে গিয়েছিল বলে কিছুদিন সে আমার সাথে ঘুরঘুর করত। সে সময়ের পর থেকে তাকে কোথাও দেখিনি, তার সম্পর্কে কিছু শুনিওনি। রাস্তার আলোর নিচে দাঁড়িয়ে তার চেহারা খুঁটিয়ে দেখতে গিয়ে বুঝলাম সময় তার প্রতি খুব একটা সদয় হয়নি। মাথা টাক হয়ে গেছে, মুখে বসন্তের দাগের মতো ছোট ছোট দাগ বোঝাই, মুখের এখানে ওখানে কাটা দাগ, গোটা শরীরই যেন খালি বস্তার মতো চুপসে গেছে। চেহারায় এত পরিবর্তন হয়ে থাকলেও আমার পুরনো দিনের সহপাঠীকে চিনতে ভুল হয়নি।

আমি বলি, রজার, আমি এই মেয়েটার বন্ধুদের সাথে দেখা করতে বের হয়েছি। আমাকে স্বাগত জানানোর জন্য ওরা সবাই একত্রিত হয়েছে। না হলে হয়তো সরাসরি তোমার খোঁজই করতাম। পরে আমি অবশ্য ঠিক করেছি ওদের ওখান থেকে ফিরে এসে তোমার কাছেই যাব। ঘুমানোর আগে হলেও যাব। মনে মনে সেরকমই ভাবছিলাম। ওদের ওখানে কথাবার্তা শেষ করতে রাত যতই হোক না কেন তোমার ওখানে যেতামই, তোমার দরজায় নক করতামই।

আমরা সবাই আবার হাঁটা শুরু করি এবং রজার বার্টন বলে, আরে চিন্তা করো না। আমি জানি তুমি কত ব্যস্ত। তবে আমাদের কথা বলা দরকার। পুরনো দিনের স্মৃতিচারণ। তোমার সাথে আমার সর্বশেষ দেখা হয়, তখন আমি স্কুলে। আমার শারীরিক অবস্থা খুব দুর্বল ছিল। তবে জানো তো আমার বয়স চৌদ্দ পনেরো পড়ার সাথে সব কিছুই বদলে যায়। আমি বেশ শক্তপোক্ত হয়ে উঠি। মনে করো নেতা টাইপের আর কি। তুমি তো তার অনেক আগেই কানাডা ছেড়ে চলে এসেছ। সব সময় আমার খুব কৌতুহল হতো পনেরো বছর বয়সের দিকে আমাদের দুজনের দেখা হয়ে গেলে কেমন হতো। আমি তোমাকে নিশ্চিত করে বলতে পারি আমাদের মধ্যে সবকিছু ভিন্ন রকম হয়ে যেতে পারত।

তার কথাগুলো শুনে আমার স্মৃতিতে অতীতের সবকিছু স্রোতের মতো ফিরে আসতে থাকে। সে সব দিনে রজার বার্টন আমাকে আদর্শ মানত। আর বিনিময়ে আমি তাকে সব সময় কত জ্বালাতন করেছি। তবে আমাদের মধ্যে একটা কৌতুহলী বোঝাপড়া ছিল: আমার সব জ্বালাতন তার ভালোর জন্যই ছিল। যেমন খেলার মাঠে কিংবা করিডোরে দেখা হলে কোনো কিছু না বলেই তার পেটে একটা ঘুষি মেরে দিলাম। কিংবা কোনো উদ্দেশ্য ছাড়াই তার হাতদুটো পেছনের দিকে পেচিয়ে মোচড় দিয়ে ধরে থাকলাম তার মুখ দিয়ে চিৎকার বের না হওয়া পর্যন্ত। আমার এসব করার পেছনে কারণ হলো আমি চাইতাম সে শক্ত হোক। কিন্তু তার ফলে আমাদের মধ্যে যে সম্পর্ক ছিল সেখানে দেখা গেল আমার প্রতি এক ধরণের ভীতি তৈরি হয়েছে। আমার পাশে হেঁটে যাওয়া এখনকার ক্লান্ত চেহারার এই মানুষটার কথা শুনতে শুনতে এসবই আমার স্মৃতিতে ভেসে আসছে।

সম্ভবত আমার চিন্তা প্রবাহ অনুসরণ করেই সে বলে চলে, অবশ্য তুমি আমার সাথে যে আচরণ করেছ সেটা না করলে পনেরো বছর বয়সে আমি যা হয়েছিলাম সেটা আর হতে পারতাম না। সে যা-ই হোক, পরে আমার কৌতুহল হয়েছে তোমার সাথে আরো কয়েক বছর পরে দেখা হলে কেমন কী হতো। তখন দেখা হলে অবশ্যই তোমার সাথে হিসাব নিকাষ মেটানোর একটা ব্যাপার দাঁড়িয়ে যেত নিশ্চয়।

আমরা কুটিরগুলোর মাঝখান দিয়ে সরু আঁকাবাঁকা পথ দিয়ে যাচ্ছি। মেয়েটা এখনও আমাদের আগে আগে পথ দেখিয়ে চলছে। তবে এখন সে আগের চেয়ে একটু বেশি দ্রুত গতিতে হাঁটছে। সামনে যেতে যেতে মাঝে মাঝে সে চোখের আড়াল হয়ে যাচ্ছে; মাঝে মাঝে মোড় ঘোরার সময় আবার দৃষ্টি সীমার মধ্যে চলে আসছে। আমার মনে হলো আমাদের আরো সতর্ক হয়ে হাঁটা দরকার যাতে মেয়েটাকে হারিয়ে না ফেলি।

রজার বার্টন বলে চলে, এখন আমি নিজেকে মোটামুটি আরাম আয়েশের মধ্যেই ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু তোমার পুরনো অবস্থার তুলনায় বলতেই হবে তোমার এখনকার অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে গেছে। তোমার এখনকার অবস্থার তুলনায় আমি তো একজন অ্যাথলেট বলা যায়। খুব অপ্রিয় হলেও সত্য, তুমি এখন এক নোংরা ভবঘুরে ছাড়া আর কিছু নও, ঠিক না? তবে তোমার জানা থাকা দরকার, তুমি চলে আসার অনেক দিন পরও তোমাকেই আমি আদর্শ মানতাম: ফ্লেচার এটা করতে পছন্দ করত কি? ফ্লেচার আমাকে এ কাজ করতে দেখলে কী ভাবত? আরে হ্যাঁ, পনেরো বছর বয়সে আমি পেছনের দিকে তাকিয়ে এসবই ভাবতাম। তখন তো আমার মেজাজ সব সময় গরমই থাকত। এখনও মাঝে মধ্যে মনে পড়ে এসব। এখনও তোমার কথা মনে হলে মেজাজ বিগড়ে যায়। তখন মনে হয় আরে সে তো পুরোপুরি নোংরা একটা লোক ছিল। ওই বয়সে সে আমার চেয়ে ওজনে একটু বেশি ছিল, তার পেশিগুলো আমার পেশির চেয়ে একটু বেশি শক্ত ছিল, আমার চেয়ে আত্মবিশ্বাস একটু বেশি ছিল। এসব কারণেই সে আমার ওপরে পুরো সুবিধা নিত। হ্যাঁ, অতীতের দিকে তাকালে সব পরিষ্কার হয়ে আসে। তুমি কী রকমের নোংরা এক ব্যক্তি ছিলে! অবশ্য আমি বলছি না তুমি এখনও সে রকমই আছ। আমরা সবাই বদলে গেছি তা তো স্বীকার করতেই হবে।

আলাপের বিষয় পরিবর্তনের জন্য আমি জিজ্ঞেস করি, তুমি কি এখানে অনেক দিন আছ?

হ্যাঁ, সাত বছর। তোমার কথা এখানে সবাই বলে খুব। মাঝে মধ্যে আমাদের আগেকার দিনের পরিচয়ের কথা বলি ওদের। আমি সব সময় ওদের বলি, অবশ্য সে এখন আর আমাকে চিনবে না মনে হয়। একটা হাড্ডিসার ছেলের কথা তার মনে থাকবেই বা কেন। যাকে সে সব সময় জ্বালাতন করত, হুকুমের গোলাম হিসেবে চালাত তাকে সে মনে রাখবে কেন। যা-ই হোক, এখানকার অল্পবয়সী পোলাপান ইদানিং তোমার কথা খুব বেশি বেশি বলে। বিশেষ করে যারা আগে তোমাকে কখনও দেখেনি তারা তোমাকে সবচেয়ে বেশি আদর্শ মানে। আমার মনে হয় তুমি ওদের সেই বিশ্বাসের ওপরে সুবিধা নিতে এসেছ। তবু তোমাকে দোষ দিচ্ছি না। নিশ্চয় তুমি আত্মসম্মান উদ্ধার করার চেষ্টা করতেই পারো।

হঠাৎ দেখতে পেলাম আমরা একটা খোলা মাঠের সামনে চলে এসেছি। আমরা দুজনই থামলাম। দেখতে পেলাম আমরা গ্রামের রাস্তা থেকে অন্য দিকে চলে এসেছি। গ্রামের সর্বশেষ কুটিরগুলো আমাদের পেছনে বেশ খানিকটা দূরে। যেটা আশঙ্কা করেছিলাম, আমরা মেয়েটাকে হারিয়ে ফেলেছি। বুঝতে পারলাম মেয়েটাকে অনেকক্ষণ আগে থেকেই চোখের সামনে দেখতে পাইনি।

এই মুহূর্তে মেঘের আড়াল থেকে চাঁদ বের হয়ে এল। দেখতে পেলাম আমরা একা বিশাল ঘাসী মাঠের প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি। চাঁদের আলোয় দেখতে পারি তার চেয়েও অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে আছে মাঠটা।

রজার বার্টন আমার দিকে ফিরে তাকিয়েছে। চাঁদের আলোয় দেখা যাচ্ছে তার মুখ অনেকটা প্রশান্ত, তার চেয়েও বেশি মমতা জড়ানো।

রজার বার্টন বলে, তবু এখন ক্ষমা করে দেয়ারই সময়। এ নিয়ে তোমার দুশ্চিন্তার কিছু নেই। জানো তো অতীতের কিছু কিছু বিষয় শেষ পর্যন্তও বার বার ফিরে আসবে। তবে আমরা ছোটবেলায় কী করেছিলাম না করেছিলাম তার জন্য আমাদের জবাবদিহি করতে হবে বলে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

আমি বলি, তোমার কথাই ঠিক তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তারপর ঘুরে অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে বলি, কিন্তু আমি তো এখন নিশ্চিত হতে পারছি না কোথায় যাওয়া যেতে পারে। তুমি হয়তো জানো ওদের কুটিরে আমার জন্য কয়েকজন অল্পবয়সী ছেলেমেয়ে অপেক্ষা করছে। এতক্ষণে ওরা হয়তো আমার জন্য ফায়ার প্লেসে আরামদায়ক আগুন তৈরি করে ফেলেছে, হয়তো গরম চা-ও তৈরি হয়ে গেছে। বাড়িতে তৈরি কেক এবং একটুখানি খাবারও তৈরি করেছে ওরা। ওই মেয়েটার পিছু পিছু যখন আমি এগিয়ে আসছিলাম ওরা তখন খুশিতে হাততালিও দিচ্ছিল। আমার চারপাশে হাসিখুশি আর আদর আপ্যায়নের মুখও দেখার কথা। আমার জন্য সেরকম সংবর্ধনাই অপেক্ষা করছে কোথাও। শুধু আমি জানি না কোথায় যেতে হবে আমাকে।

রজার বার্টন কাঁধ ঝাঁকি দিয়ে বলে, চিন্তা করো না, তুমি ঠিক জায়গা মতোই পৌঁছে যাবে। তবে মেয়েটা তোমাকে ঠিক বলেনি। যদি ওয়েন্ডির কুটিরে যাওয়ার কথাই বলে থাকে তবে সে তো বেশ দূরে। তোমাকে ঠিকই বাস ধরে যেতে হবে। আবার বাসের পথ শেষ হলেও অনেকটা দূর এগোতে হবে। আমি বলতে পারি তোমার দুঘণ্টা লাগবে তো বটেই। তবে চিন্তা করো না, আমি তোমাকে বাস ধরার জায়গা চিনিয়ে দেব।

কাজুও ইশিগুরোএরপর ও পিছু ফিরে কুটিরগুলোর দিকে হাঁটা শুরু করে। ওকে অনুসরণ করতে করতে বুঝতে পারি রাত অনেক হয়েছে এবং আমার সঙ্গীর ঘুম দরকার। কুটিরগুলোর পাশ দিয়ে কয়েক মিনিট হেঁটে আমরা অনেকটা পথ পেরিয়ে এলাম। এবার সে আমাকে গ্রামের রাস্তার মোড়ের কাছে নিয়ে এল। জায়গাটা অবশ্য খুব ছোট; এটাকে মোড় বলাও কঠিন। রাস্তার নিঃসঙ্গ একটা আলোর পাশে এ জায়গাটাকে বড় জোর এক টুকরো সবুজ বলা যেতে পারে। চারপাশে অখণ্ড নীরবতা বিরাজ করছে, কোনোখানে কোনো কিছুর নড়াচড়া পর্যন্ত নেই। মাটির ওপর দিয়ে হালকা একটা কুয়াশার স্রোত বয়ে যাচ্ছে।
আমরা সবুজ জায়গাটাতে পৌঁছনোর আগেই রজার বার্টন থেমে গেল এবং তর্জনী তুলে সামনের দিকে ইঙ্গিত করে বলল, ওই যে ওখানে দাঁড়ালে যে কোনো বাস তোমাকে নিয়ে যাবে। তবে আগে যা বলেছিলাম- পথ কিন্তু কম নয়, দুঘণ্টা তো লাগবেই। চিন্তা করো না। আমি নিশ্চিত তোমার জন্য ওই ছেলেমেয়েগুলো অপেক্ষা করবে। জানো, ইদানিং ওদের সামনে বিশ্বাস স্থাপন করার মতো তেমন কিছুই নেই।
আমি বলি, রাত বেশ হয়ে গেছে। বাস কি পাওয়া যাবে?

হ্যাঁ, হ্যাঁ, অবশ্যই পাওয়া যাবে। তবে তোমাকে একটু অপেক্ষা করতে হবে। বাস একটা না একটা আসবেই। তারপর সে আমার কাঁধে ভরসার হাত রেখে বলে, বুঝতে পারছি এখানে এত রাতে দাঁড়িয়ে থাকা একা একা লাগবে। তবে বিশ্বাস করো বাস এসে গেলে তোমার ভালো লাগবে। হ্যাঁ, বাসটা তো আলোয় ভরা থাকবে; ভেতরেও অনেক লোকজন থাকবে। সবাই হাসি তামাশা করতে থাকবে আর বাইরের দিকে আঙুল তুলে দেখাতে থাকবে। বাসে উঠে পড়লে তুমি উষ্ণতা পাবে, তোমার আরাম লাগবে। অন্য যাত্রীরা তোমার সাথে এটা ওটা নিয়ে আলাপ জুড়ে দিবে, কোনো খাবার কিংবা পানীয়ও এগিয়ে দিবে হয়তো। বাসের মধ্যে গানও চলবে হয়তো। সেটা অবশ্য চালকের ওপর নির্ভর করে। কোনো কোনো চালক গান পছন্দ করে, আবার কোনো চালক করে না। আচ্ছা, ফ্লেচার, তোমার সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগল।

আমরা হ্যান্ডশেক করলাম এবং সে ঘুরে হাঁটা শুরু করল। দেখলাম সে দুটো কুটিরের মাঝখানে অন্ধকারে মিশে যাচ্ছে। আমি সবুজ জায়গাটার দিকে এগিয়ে গিয়ে ল্যাম্পপোস্টের নিচে ব্যাগটা নামিয়ে রাখলাম। শুনতে পেলাম দূরে কোথাও থেকে একটা বাসের শব্দ ভেসে আসছে। তবে রাত খুব নীরব নিস্তব্ধ। তবু আমার মনটা ফুল্ল হয়ে উঠছে রজার বার্টনের বাসের বর্ণনা মনে পড়ে যাওয়ায়। তাছাড়া ভ্রমণ শেষে ওরা আমাকে যেভাবে সাদরে গ্রহণ করবে সেটা ভাবতেও ভালো লাগছে। ওদের সবার মুখ থাকবে হাসিখুশি; আমাকে ওরা বরণ করে নেবে। আমার মনের গভীরে আশাবাদের দোলা অনুভব করছি।
অনুবাদ : দুলাল আল মনসুর

রেটিং করুনঃ
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (No Ratings Yet)
Loading...
কাজুও ইশিগুরো- র আরো পোষ্ট দেখুন

One thought on “সাঁঝের পরের গ্রাম”

Comments are closed.