যাওয়া-আসা-২

অফিস থেকে বেরোতে বেরোতেই প্রায় পাঁচটা বেজে গেল। অবশ্য খাতায়-কলমে ওদের অফিস সাড়ে দশটা থেকে সাড়ে পাঁচটা অবধি রোজ-ই-সপ্তাহে ছ-দিন। কিন্তু এগারোটার আগে কেউই বড়ো একটা আসে না। কেউ কেউ তো সাড়ে এগারোটায় আসে–আর বিকেলে সাড়ে চারটের পর-ই অফিস ফাঁকা হয়ে যায়। আজ দেরি হয়ে গেল, কারণ সাহেব দেরি করে উঠলেন। সবুজ ওঁকে বলে একটু […]

যাওয়া-আসা-৩

সবুজ অফিসে চলে যাওয়ার পর, হাসি খোকাকে স্কুলে পাঠিয়ে রান্নাঘরে ঢুকেছিল। ভালো করে কচুর শাক রেঁধেছিল ইলিশমাছের মাথা দিয়ে। টক রেঁধেছিল। কালকের ঝোল ছিল। দু টুকরো গাদার মাছে নুন-হলুদ মাখিয়ে রেখেছিল, ফণী এলে গরম গরম ভেজে দেবে। ফণীর সকালে আসার উপায় নেই। আসতে আসতে সেই একটা-দেড়টা। দোকানের পেছনের উঠোনে টিউবওয়েলে চান করে এতখানি পথ ভাদ্রমাসের […]

যাওয়া-আসা-৪

শেষরাতে একবার বাথরুমে গিয়েছিল সবুজ। গলিতে দুটো কুকুরে মিলে কামড়া-কামড়ি, ঝগড়া-ঝগড়ি করছিল। খোকা পাশের ঘরে কুঁকড়ে-মুকড়ে শুয়েছিল মাথার বালিশটাকে কোলবালিশ করে। রাতে বৃষ্টি হওয়ায় শেষরাতে বেশ গা ম্যাজম্যাজ করছিল। উঠে গিয়ে পাখার রেগুলেটরে হাত দিয়ে ও খোকার ঘরের পাখার গতিটা কমিয়ে দিল। তাও খোকাকে একটা আলাদা ঘর দিতে পেরেছে ও। বহুদিনের পুরোনো ভাড়াটে ওরা। চল্লিশ […]

যুযুধান-১

এখন রাত সাতটা। যুযুধান মিনিবাসের সামনের দিকের জানালার পাশে বসেছিল। বাসটা এসে সুরেন বাঁড়ুয্যে রোড আর চৌরঙ্গির মোড়ে দাঁড়াল। অন্যদিনের তুলনাতে আজ তাড়াতাড়িই বেরিয়েছিল কিন্তু কলেজস্ট্রিটে যাওয়াতেই দেরি হয়ে গেল। বাসটা প্রায় ভরতিই বলতে গেলে! তবুও দাঁড়িয়ে আছে। এদিকে ভ্যাপসা গরম। প্রচন্ড মিশ্র আওয়াজ উঠছে চারদিক থেকে। সে আওয়াজের ডেসিবেলে-এর হিসেব কষা মুশকিল। মাথার মধ্যে […]

যুযুধান-২

০৬. রবিবার সকালে সোম-এর কার্ডটা পকেটে নিয়ে হাজরার মোড় অবধি হেঁটে এসে বাস ধরল যুযুধান কুদঘাটের। কনডাক্টরকে জিজ্ঞেস করল কোথায় হবে জায়গাটা। কনডাক্টর বলল, তা জানি না দাদা, তবে এমন জায়গায় নামিয়ে দেব যে, খোঁজ করলেই পেয়ে যাবেন। মনে হচ্ছে কুঁদঘাটের শেষ প্রান্তেরও শেষ প্রান্তে। এর আগে কখনো আসেনি যুযুধান কুদঘাট। মোড়ের পানের দোকানে জিজ্ঞেস […]

প্রথম প্রবাস-১

০১. বোম্বে থেকে লুফতহানসার উড়ান কাল খুব সকালে। একটানা। না থেমে ফ্রাঙ্কফার্ট। বোম্বেতে ইতিপূর্বে কাজে এসেছি অনেকবার। এবার অকাজে। কলকাতা থেকে বোম্বে ইণ্ডিয়ান এয়ার লাইনসের উড়ান মাত্র ঘণ্টা তিনেক লেট ছিল। নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করলাম। শহরে অনুপস্থিত এক বন্ধুর গাড়ি ও তার সেক্রেটারি-ছিপছিপে সুন্দরী একটি পারশি মেয়ে, নাম জারীন, নিতে এসেছিলেন সান্টা-ক্রুজে। তখন শেষ […]

প্রথম প্রবাস-২

০৩. ফ্ল্যাটের বসবার ঘরের প্রকান্ড কাঁচমোড়া জানলা দিয়ে চোখে পড়ে একটা বিরাট গাছ। শাখা-প্রশাখা বিস্তার করে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে এই পাঁচতলা অ্যাপার্টমেন্টের লোকাল গার্জেনের মতো ঝুঁকে পড়ে এর রক্ষণাবেক্ষণ করছে যেন। বড়ো গাছমাত্রই প্রতিষ্ঠান বিশেষ। এই কুয়াশা-ভেজা দূর দেশের গাছ আর আমাদের দেশের গাছের চেহারায় অমিল থাকলেও চরিত্রে কোনোই অমিল নেই। সেই কোটর, পাখি, […]

প্রথম প্রবাস -৩

০৪. আমরা টবীর খাওয়ার ঘরে বসে প্রাতরাশ খাচ্ছিলাম। প্রাতরাশ খাওয়ার পরই টবী ও স্মিতা দুজনেই আমাকে ভিক্টোরিয়া স্টেশানে ছাড়তে যাবে। সেখান থেকে কসমস ট্যুরস-এর ট্যুর নিয়ে আমি কন্টিনেন্টে যাব। বারো দিনের জন্যে। বেশ রোদ উঠেছে আজ। টবীদের বাড়ির নীচে যেখানে গাড়িগুলো পার্ক করানো থাকে সেখানে ও বাগানে বাচ্চারা খেলছে দৌড়াদৌড়ি করে। তাদের গলার চিকন স্বর […]

প্রথম প্রবাস-৪

০৫. দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর অষ্ট্রিয়ার ন্যাটো কি সেন্টো কোনো জোটেই যোগ দেওয়ার উপায় নেই। তাহলে ভার্সাইলস-এর চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া সঙ্গে সঙ্গে আক্রমণ করে বসতে পারে অস্ট্রিয়াকে। ইনসত্ৰুক জায়গাটা চমৎকার। ইন নদীর উপত্যাকায় এই ইনসব্রুক। ইন নদীর সঙ্গে ইছামতীর তুলনা করা চলে–যদিও চওড়ায় অনেক কম এই নিটোল টলটলে নদী। নদীর ওপর কাঠের সাঁকো। রাজহাঁস চরে বেড়াচ্ছে। […]

হাজারদুয়ারি –১

রান্না হল? প্রায়। ভরত কোথায়? ওর ভাষা বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না? না। সারল্য ভাষার বাধা ভেঙে দেয় যে! ভারি সরল ছেলেটি! কোথায় সে? বাগানে আছে বোধহয়। আমাকে একটা জলচৌকি আর হামনদিস্তা এনে দিতে হবে কিন্তু কাল। দেব, দেব। এত দূর নিয়ে এলাম তোমাকে আর এসব তো… বেশিদূর আর কোথায়? মাত্র শচারেক মাইল তো! শ্ৰী ঘাড় […]