একচক্ষু

কী দেখলে তুমি? রৌদ্রকঠিন হাওয়ার অট্টহাসি দু’হাতে ছড়িয়ে দিয়ে নিষ্ঠুর গ্রীষ্মের প্রেত-সেনা মাঠে-মাঠে বুঝি ফিরছে? ফিরুক, তবু তার পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়ার মঞ্জরী তুমি একবারও দেখলে না? একবারও তুমি দেখলে না, তার বিশীর্ণ মরা ডালে ছড়িয়ে গিয়েছে নম্র আগুন, মৃত্যুর সব দেনা তুচ্ছ সেখানে, নবযৌবনা কৃষ্ণচূড়ার গালে ক্ষমার শান্ত লজ্জা কি তুমি একবারও দেখলে না?

প্রিয় সুনীলের কথা

পঞ্চাশের দশকের গোড়ার দিকের কথা। সুনীলের বয়স তখন আঠারো-উনিশের বেশি হবে না, আর আমি তখনই সাতঘাটের জল খেয়ে আনন্দবাজার পত্রিকায় এসে ঢুকেছি। কাজ করতুম রবিবাসরীয় বিভাগে। সেখানে গল্প বাছাই করতে-করতে হঠাৎ একটা গল্পে আমার চোখ আটকে যায়। গল্প ছাপোষা এক চাকরিজীবী মধ্যবয়সী ভদ্রলোককে নিয়ে। তাঁর চশমা জোড়া হারিয়েছে, অথচ আপিসে না-গিয়ে তাঁর উপায় নেই। অগত্যা […]

হঠাৎ শূণ্যের দিকে

ক্রমে স্পষ্ট হয় সব । কে সিংহ, কুকুর, হাতি, সার্কাসের ঘোড়া ; কে টিয়া, চন্দনা, কংবা হাঙর কুমির ; বঙ্গোপসাগর থেকে উঠে এসে কলকাতার ভীড় ঠেলে কে সাঁতার কাটে ; কে ধর্মতলায় পাঞ্জাবির হাতা নেড়ে উড়ে যেতে চায় হঠাত্ আকাশে । যেন একে একে সবগুলি অভ্যাসের ফোড়া ফেটে গেলে ঠিক বিকেলে তিন পা হেঁটে চিনে […]

সহোদরা

না, সে নয় । অন্য কেউ এসেছিল । ঘুমো তুই ঘুমো । এখনো রয়েছে রাত্রি, রোদ্দুরে চুমো লাগেনি শিশিরে । ওরে বোকা, আকাশে ফোটেনি আলো, দরজায় এখনো তার টোকা পড়েনি । টগর-বেলা-গন্ধরাজ-জুঁই সবাই ঘুমিয়ে আছে, তুই জাগিসনে আর । তোর বরণডালার মালাগাছি দে আমাকে, আমি জেগে আছি । না রে মেয়ে, নারে বোকা মেয়ে, আমি […]

মাটির হাতে

এ কোন্ যন্ত্রণা দিবসে, আর এ কোন্ যন্ত্রণা রাতে; আকাশী স্বপ্ন সে ছুঁয়েছে তার মাটিতে গড়া দুই হাতে। বোঝেনি, রাত্রির ঝোড়ো হাওয়ায় যখন চলে মাতামাতি, জ্বলতে নেই কোনো আকাঙ্ক্ষায় জ্বালাতে নেই মোমবাতি। ভেবেছে, সবখানে খোলা দুয়ার দ্যাখেনি দেয়ালের লেখা; এবং বোঝেনি যে বারান্দার ধারেই তার সীমারেখা। তবু সে গিয়েছিল বারান্দায়, কাঁপেনি তবু তার বুক; তবু […]

ভয়

যদি এ চোখের জ্যোতি নিবে যায় তবে কি হবে, কী হবে! দূরপথে ঘুরে ঘুরে ঢের নদীবন খুঁজে যাকে এই রাতে নিয়ে এলে মন এখনো দেখিনি তাকে দেখিনি, এখন যদি এ চোখের জ্যোতি নিবে যায় তবে কি হবে, কী হবে! সে-ও চলে যেতে পারে, যদি যায় তবে কি হবে, কী হবে! এই যে চোখের আলো, ব্যথাবেদনার […]

বাতাসি

“বাতাসি ! বাতাসি !”—লোকটা ভয়ংকর চেঁচাতে চেঁচাতে গুমটির পিছন দিকে ছুটে গেল । ধাবিত ট্রেনের থেকে এই দৃশ্য চকিতে দেখলুম । কে বাতাসি ? জোয়ান লোকটা অত ভয়ংকরভাবে তাকে ডাকে কেন ? কেন হাওয়ার ভিতরে বাবরি-চুল উড়িয়ে পাগলের মতো “বাতাসি ! বাতাসি !” ব’লে ছুটে যায় ? টুকরো টুকরো কথাগুলি ইদানিং যেন বড় বেশি— গোঁয়ার […]

দৃশ্যের বাহিরে

সিতাংশু, আমাকে তুই যতো কিছু বলতে চাস, বল। যতো কথা বলতে চাস, বল। অথবা একটাও কথা বলিসনে, তুই বলতে দে আমাকে তোর কথা। সিতাংশু, আমি যে তোর সমস্ত কথাই জেনে গেছি। আমি জেনে গেছি। কী বলবি আমাকে তুই, সিতাংশু ? বলবি যে, ঘরের ভিতরে তোর শান্তি নেই, তোর শান্তি নেই, তোর ঘরের ভিতরে বড়ো অন্ধকার, […]

দিঘির ভিতরে ছায়া

দিঘির ভিতরে ছায়া ধীরে বড় হয়, ধীরে-ধীরে নিজেকে গুটিয়ে আনে ফের । মাঝে মাঝে হাওয়া দেয় । জালের শরীরে দোলা লাগে । ত্রিকালে দণ্ডায়মান বৃদ্ধ অশথের শাখা-প্রশাখায় ছড়ায় অস্ফুট কানাকানি । তীব্র নীল আকাশে নিঃসঙ্গ চিল উড়ে চলে যায় । জলের উপরে ভাসে অশথের শান্ত ছায়াখানি । আজও ছায়াখানি সেই জলের উপর শুয়ে আছে । […]

এশিয়া

এখন অস্ফুট আলো । ফিকে ফিকে ছাড়া অন্ধকারে অরণ্য সমুদ্র হ্রদ, রাত্রির শিশির-শিক্ত মাঠ অস্থির আগ্রহে কাঁপে, আসে দিন, কঠিন কপাট ভেঙে পড়ে । দুর্বিনীত দুরন্ত আদেশ শুনে কারো দীর্ঘরাত্রি মরে যায়, ধসে পড়ে শীর্ণ রাজ্যপাট ; নির্ভয়ে জনতা হাঁটে আলোর বলিষ্ঠ অভিসারে । হে এশিয়া, রাত্রিশেষ, “ভস্ম অপমান শয্যা” ছাড়, উজ্জীবিত হও রূঢ় অসংকোচ […]