হাসপাতালে লেখা

আবার এখানে এসে বসা গেলো তবে,

এই জল নীলের নিকটে ফের বহুদিন পরে,

এখনো এখানে রোদ সেদিনের উজ্জ্বল বৈভবে

আমাকে করালো স্নান, আরো কিছু ঘটে তার পরে।

একটি বালিকা এসে হাত পেতে দাঁড়ায় সে আজও,

ভিক্ষা চায়, বুকের ওড়না থেকে বকুলের ফুল,

তবে বাঁশি সেদিনের ইমনের সুরে তবে বাজো,

যেন ভেসে যেতে থাকে পৃথিবীর একূল ওকূল।

ভাসুক বন্যায় ফের, উঠুক সোনার মতো তারা

একবিন্দু সন্ধ্যার আকাশে আজ সেদিনের মত,

ভেঙে যাক দেয়ালের বিস্মৃতির সকল পাহারা,

কেবল থাকুক জেগে পুরাতন সেদিনের ক্ষত।

উন্মাদ বেরিয়ে এসে দরজায় স্থির হয়ে যায়,

প্রেমিক নাকি সে কবি, অথবা সে খুবই সাধারণ,

সকলেরই বাড়িঘর আছে বৈকি এবং স্বজন,

নর্দমায় ঘোলা জল, ঘড়িতেও ঘণ্টা বহে যায়।

তবু সে দাঁড়িয়ে থাকে, রাত বাড়ে, দাঁড়িয়েই থাকে,

বালিকা ফুলের মালা ফুটপাতে ফেরি করে চলে,

যানবাহনের ভিড়ে এ পথ দুস্কর, ঘোলা জলে

একটি বিমর্ষ চাঁদ অভিমানে মুখ গুঁজে থাকে।

আমিও দাঁড়িয়ে থেকে সন্ধ্যাকাল থেকে দেখে চলি,

ফুলের বালিকা আর লোকটিকে, মধ্যরাত নামে,

জ্বরের উত্তপ্ত মাথা রেখে আসি দালানের থামে,

মাথার ভেতরে হাঁটি, ভেঙে চলি কত অলিগলি।

অবশেষে পৌঁছোই যদি যে অতীত ভুলে যাওয়া ভালো,

একদার তুমি আর অধুনার তুমির ভেতরে,

দেখি যদি একবার মেধাবীর মতো ধ্যান করে,

তাহলে দেখতে পাবো আমাদের দুচোখ ভেজালো।

যেসব কাহিনী কথা, তার মধ্যে আমি তুমি নেই

আছে সব বাহিরের লোক আর তাদেরই চরণ

আঘাতে পেয়েছে দিন অমাবস্যা রাতের মরণ—

এবং উন্মাদ পাবে সুস্থিরতা, পায় আমাকেই

রয়েল মার্সডেন হাসপাতাল, লন্ডন

১১.৬.২০১৬