বোবা মেয়েটিকে

তোমার পৃথিবী নিঃশব্দচারী রাতের করতল দেখে,
শব্দহীন একা তুমি। নিঃশব্দে ভেসে যাও আলোকিত
স্বপ্নের বেহুলা ভেলায়। আর অন্ধকার তোমার শব্দহীনতায়
হাসে, যেন কংস প্রতিবাদহীন পজার সম্মুখে, তুমি
পার না থামাতে তার হাসি, পার না দিতে
নিস্তব্ধতার বধির প্রান্তরে কোন অখিল সীমানা।

তোমার নিস্তব্ধতা ক্রমশ বিস্তারিত হচ্ছে
আলো থেকে অন্ধকারে
অস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ব ভাঙনের ঢলে, তুমি নিমষ্মানা
এখন তোমার সাঁতার শুধু ঈঙ্গিতে দীতি নদী
তুমি দুই পার ছুঁই ছুঁই করে গুণছো একাকীত্ব
ধ্বংস আর সাফল্যের তরঙ্গমালা।

তুমি শুধু শব্দহীন দৃশ্যে খোঁজ চোখের প্রশান্তি
আর ভাষার অনুভবে দিয়েছো গভীর টান, জন্মসূত্রে প্রজনন।
তোমার পৃথিবী ভাঙছে, তুমি শুনতে পাওনা
তোমার পৃথিবী কাঁদছে, তুমি শুনতে পাওনা
তোমার পৃথিবী ডাকছে, তুমি শুনতে পাওনা।

তোমার প্রেম চায় প্রকাশিত শব্দ অনুভব গুচ্ছ
তোমার ভালোবাসা চায় বাক-বন্ধনের সুপ্রিয় গ্রন্থি
তোমার সঙ্গীত চায় ঝরাপাতার কলতান
তুমি তার কোনটাই প্রকাশ করলে না
এই শব্দ-ভুবন শরীরে, তুমি অপ্রকাশিত পারিজাত।

তোমার দৃশ্য শুধু গোলাপের সুগন্ধ শ্রাবণ
তোমার দৃশ্য শুধু বৃরে মায়াবী ফলন
তোমার দৃশ্য শুধু পাখির অস্থির ডানার কম্পন
তোমার দৃশ্য শুধু পাথরের গায়ে শিশিরের ঝড়ো কান্না।

তবুও যেন তোমার নিস্তব্ধতার মধ্যে এক সিংহের গর্জন
তোমার ছায়ার মধ্যে একজন মুক্তিযোদ্ধার ছায়া
তোমার হাসির মধ্যে যেন এক অনিবার্য উৎপাত।

তোমার পৃথিবী আজ আমাদের জাতীয় যোদ্ধার ভাস্কর্যে
দন্ডায়মান আগামী পৃথিবীর দিকে
আমাদের ‘অপরাজেয় বাঙলা’
শব্দহীনতার বিপীয় স্বাধীনতা, নির্বাক প্রতিবাদ।
তুমি আমাদের আগামী আন্দোলনের নীরবতাকাল
প্রস্তুতির ভয়াল অন্তরভেদী গুহা, স্বাধীনতার নির্ভীক
সূর্য-সাথী সবুজ অন্তর্বাস, বিশ্বস্ত পতাকা।
তুমি শোকাহত জননীর একাত্তর, বাঙলাদেশ
তুমি বাকহীনতায় বিক্ষুব্ধ এক উজ্জ্বল গণতন্ত্রের দিন।