বাড়ি যাবে, সুরঞ্জন?

তোমাদের ধোবাউড়া এখনও আগের মতো গ্রাম
সেই যে একটি চারা রোপেছিলে মাঠে, নীলাদ্রিদের বাগান ঘেঁষে, সেই চারা
বড় হতে হতে শেকড় ছড়িয়ে বড় এক বৃক্ষ হয়ে গেছে,
সোনালি ধানের গ্রাম, সোনালি আঁশের__
তোমাদের ধোবাউড়া
বাঁশঝাড়ের ভূতের ভয়ে সন্ধেয় ঘুমিয়ে পড়ে, এখনও সে
খুব ভোরে শিশিরকণার মতো খেলা করে সবুজ পাতায়, ফুলে

বাড়িটি আগের মতো আছে, গাছগুলো শরীরে বেড়েছে
সুপুরির বাগান, উঠোনে আম জাম লিচু কাঁঠালের সারি।
চুন-সুরকির আগের খিলান সেই
সেই কড়িকাঠ
শ্যাওলা জমেছে শুধু ঘাটলায়, নিকোনো উঠোনটিতে দূর্বা
তোমাদের বাড়ি, তোমাদের পিতার, পিতামহ, প্রপিতামহের বাড়ি
যাবে সুরঞ্জন?

ঝিঁঝিঁ ডাকে এখনও, এখনও ঝোপঝাড় থেকে হঠাৎ হঠাৎ
উঁকি দেয় ধাবমান হরিণের দ্যুতি
পাহাড় গড়িয়ে নামে আষাঢ়ের জল, ডালে বসে
কাক ভেজে, ভেজে উলঙ্গ উন্মূল শিশু, নদীতে ঝাঁপিয়ে খেলে,
মাছ ধরে, বাড়ি যাবে, সুরঞ্জন?

তোমার নিজের বাড়ি, কাঁঠালিচাঁপার ঘ্রাণ, চেনা পথ, হাডুডুর মাঠ
ছেলেবেলার ইস্কুল, যাবে?

কতকাল পরবাসে আছ,
এবার গঙ্গার জলে সব অভিমান ধুয়ে বাড়ি ফেরো, সুরঞ্জন।

রেটিং করুনঃ
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (No Ratings Yet)
Loading...
Alternative Textতসলিমা নাসরীন- র আরো পোষ্ট দেখুন