তুমি মাটি? কিংবা তুমি আমারই স্মৃতির ধূপে ধূপে কেবল ছড়াও মৃদু গন্ধ আর আরকিছু নও? রেখায় রেখায় লুপ্ত মানচিত্র-খণ্ডে চুপি চুপি— তোমার সত্তাই শুধু অতীতের উদ্দাম উধাও বাল্যসহচর! তুমি মাটি নও দেশ নও তুমি। নদী তুমি? সে তোমারই শৈবালের আচ্ছাদনে ঢাকা বেদনার ধারা চলে আসমুদ্রহিমাচল ক্ষীণ— আমার হৃদয় তার দ্বীপে দ্বীপে পুঞ্জ করে তাকে খালে […]
স্বদেশ স্বদেশ করিস কারে
ঈশ্বরী
যখন বরফে সব ঢেকে আছে, তুমি একা জেগে যখন বিকল স্মৃতি, কে কোথায় মনেও পড়ে না এইখানে টিলা ছিল ওইখানে ছিল বুঝি লেক আজ সব শ্বেতাভায় কালো শুধু তোমার কালিমা যখন শপথ মানে কেবলই শ্বাসের অপঘাত যখন জীবন মানে কেশর নখর আর দাঁত যখন নিজেকে শুধু মনে হয় তুষারের হিমে ঝরে-যাওয়া জমে-যাওয়া নিরুদ্দেশে মরে-যাওয়া পাতা […]
মধ্যরাত
আজ আর কেউ নেই , ঘুমন্ত ঘরের নীল জল , ঠান্ডা বারান্দায় গায়ে মধ্যরাত দেবতার দীপে – হাতে খেলে যায় হাওয়া । আজ চুপ করে ভাবো , এই রাত মৃদুজলঢেউ , বড়ো একাকিনী গাছ , মাঝে মাঝে কার কাছে যাব , ঘুমায় ঘরের গায়ে ছায়াময় বাহিত প্রপাত বুকে খেলে যায় হাওয়া । দুইজনে পাশাপশি,মাঝে কি […]
আয়, আরও বেঁধে বেঁধে থাকি
আমাদের ডান পাশে ধ্বস আমাদের বাঁয়ে গিরিখাত আমাদের মাথায় বোমারু পায়ে পায়ে হিমানীর বাঁধ আমাদের পথ নেই কোনও আমাদের ঘর গেছে উড়ে আমাদের শিশুদের শব ছড়ানো রয়েছে কাছে দূরে আমরাও তবে এই ভাবে এ-মূহুর্তে মরে যাব নাকি? আমাদের পথ নেই আর আয়, আরও বেঁধে বেঁধে থাকি। আমাদের ইতিহাস নেই অথবা এখনই ইতিহাস আমাদের চোখমুখ ঢাকা […]
স্তম্ভিত ইতিহাস : নজরুল
নিজেকে ‘স্বেচ্ছাচারী’ বলে ঘোষণা করেছিলেন আমাদের কোন্ কবি? বাংলা কবিতা পড়তে যাঁরা অভ্যস্ত, এ-প্রশ্নের উত্তর দিতে তাঁদের কোনো দ্বিধা হবার কথা নয়, তাঁরা নিশ্চয় সঙ্গে সঙ্গেই মনে করতে পারবেন শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের নাম, তাঁর ‘আমি স্বেচ্ছাচারী’ লাইনটি, বা বিভিন্ন কবিসভায় প্রায় শারীরিক উৎক্ষেপের মধ্যে এই লাইনটি নিয়ে তাঁর নানা ভঙ্গিমার উচ্চারণ। ঠিকই, শব্দটির সঙ্গে শক্তির নাম […]
আধখানা মুখ
আধখানা মুখ বাইরে রেখো, আধখানা মুখ অন্ধকারে, দূর থেকে যেন সবাই তোমায় দেখতে পারে। ঘুম যদি পায় রাত্রিবেলা, শীতের জটিল অন্ধকারে, জ্বেলে নিয়ো তাপ উড়কি পাতায়, শুকনো খড়ে। দূর থেকে তাপ দেখতে পাব, আগুনের জ্বালা অন্ধকারে, হঠাৎ পথে কী দস্যুতা রে! কেড়ে নিয়ে যায় ঝরনার মতো ছুটে চলে যায় অন্ধকারে নিয়ে যায় সব অস্থি-মজ্জা-মাংস কেড়ে। […]
চলা
পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল । কিন্তু আমি দেখেও দেখিনি । হয়তো সতর্ক কথা শোনাতেই চেয়েছিল এসে ——– আমি তবু শুনেও শুনিনি । এগোতে চেয়েছি শুধু অবুঝ সামনের দিকে । সামনে বলে সত্যি কিছু আছে ? থাক বা না-ই থাক, ভেবেছি চলেছি । জানিনি যে কোন এক অসফলি প্রান্তরের থাবার ভিতরে অপব্যয়ে ভরে গেছে আমার সমস্ত উন্মুখতা […]
সূর্যমুখী
ইচ্ছে হলো ব্যাকুল, তবু খুলল না সে ঘর অন্ধকারে মুখ লুকিয়ে কেঁদে উঠল স্বর ‘এ যে বিষম! এ যে কঠিন!’ কী যে ছোট্ট বাড়ি— সকালও তার মুখ দেখে না, বিকেল করে আড়ি! পীতল মুখে শূন্যে ঝোলে সূর্য সারা দুপুর ঘরেতে তার তাপ পৌঁছয়, জ্বর হয়েছে খুকুর। শুকনো ভাঙা বেদানা তার মাথার কাছে খোলা, ছোট্ট দুটো […]
শ্লোক
সেই মেয়েটি আমাকে বলেছিল: সঙ্গে এসো, বেরিয়ে এসো, পথে। আমার পায়ে ছিল দ্বিধার টান মুহূর্তে সে বুঝেছে অপমান জেনেছে এই অধীর সংকটে পাবে না কারো সহায় একতিলও– সেই মেয়েটি অশথমূলে বটে বিদায় নিয়ে গাইতে গেল গান। আমি কেবল দেখেছি চোখ চেয়ে হারিয়ে গেল স্বপ্নে দিশাহারা শ্রাবণময় আকাশভাঙা চোখ। বিপ্লবে সে দীর্ঘজীবী হোক এই ধ্বনিতে জাগিয়েছিল […]
বইতে পারো আর?
মনে পড়ে? সেইসব চেতাবনি? উন্মুখর দিন? যা-কিছু ঘটেছে তার কিছুই নতুন নয়, সবেরই সংকেত ছিল চেনা তুমি শুধু দেখেও দেখোনি কিংবা জেনেও জানোনি রেখাগুলি। কতবার কানে কানে জপেছি বলো তো শোনো একবার দেখো চক্রবাল একবার মুখোমুখি হও জলাধারে দর্পের মহিমা নিয়ে তুমি সরে গেছ শুধু দূরে শুনেও শোনোনি কোনো কথা। আমাকে যে তুচ্ছ করো এ […]