হুলিয়া

আমি যখন বাড়িতে পৌঁছলুম তখন দুপুর, আমার চতুর্দিকে চিকচিক করছে রোদ, শোঁ শোঁ করছে হাওয়া। আমার শরীরের ছায়া ঘুরতে ঘুরতে ছায়াহীন একটি রেখায় এসে দাঁড়িয়েছে৷ কেউ চিনতে পারেনি আমাকে, ট্রেনে সিগারেট জ্বালাতে গিয়ে একজনের কাছ থেকে আগুন চেয়ে নিয়েছিলুম, একজন মহকুমা স্টেশনে উঠেই আমাকে জাপটে ধরতে চেয়েছিল, একজন পেছন থেকে কাঁধে হাত রেখে চিত্কার করে […]

স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো

একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে: ‘কখন আসবে কবি?’ এই শিশু পার্ক সেদিন ছিল না, এই বৃক্ষে ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না, এই তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবর্ণ বিকেল সেদিন ছিল না৷ তা হলে কেমন ছিল সেদিনের সেই বিকেল বেলাটি? […]

স্বাধীনতা, উলঙ্গ কিশোর

জননীর নাভিমূল ছিঁড়ে উল্ঙ্গ শিশুর মত বেরিয়ে এসেছো পথে, স্বাধীনতা, তুমি দীর্ঘজীবী হও। তোমার পরমায়ু বৃদ্ধি পাক আমার অস্তিত্বে, স্বপ্নে, প্রাত্যহিক বাহুর পেশীতে, জীবনের রাজপথে, মিছিলে মিছিলে; তুমি বেঁচে থাকো, তুমি দীর্ঘজীবী হও। তোমার হা-করা মুখে প্রতিদিন সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত অবধি হরতাল ছিল একদিন, ছিল ধর্মঘট, ছিলো কারখানার ধুলো। তুমি বেঁচেছিলে মানুষের কলকোলাহলে, জননীর নাভিমূলে […]

স্ত্রী

রান্নাঘর থেকে টেনে এনে স্তনগুচ্ছে চুমু খাও তাকে, বাথরুমে ভেজানো দরোজা ঠেলে অনায়সে ঢুকে যাও- সে যেখানে নগ্ন দেহে স্নানার্থেই তৈরি হয়ে আছে আলোকিত দুপুরের কাছে, মনে রেখো, তোমার রাত্রি নেই অন্ধকার বলে কিছু; বিবাহিত মানুষের কিছু নেই একমাত্র যত্রতত্র স্ত্রী-শয্যা ছাড়া। তাতেই শয়ন কর বাথরুমে, পুজোঘরে, পার্কে, হোটেলে, সন্তানের পাশ থেকে টেনে এনে ঠোটগুচ্ছে […]

সেই রাত্রির কল্পকাহিনী

তোমার ছেলেরা মরে গেছে প্রতিরোধের প্রথম পর্যায়ে, তারপর গেছে তোমার পুত্রবধূদের হাতের মেহেদী রঙ, তারপর তোমার জন্মসহোদর, ভাই শেখ নাসের, তারপর গেছেন তোমার প্রিয়তমা বাল্যবিবাহিতা পত্নী, আমাদের নির্যাতিতা মা। এরই ফাঁকে একসময় ঝরে গেছে তোমার বাড়ির সেই গরবিনী কাজের মেয়েটি, বকুল। এরই ফাঁকে একসময় প্রতিবাদে দেয়াল থেকে খসে পড়েছে রবীন্দ্রনাথের দরবেশ মার্কা ছবি। এরই ফাঁকে […]

শুধু তোমার জন্য

কতবার যে আমি তোমোকে স্পর্শ করতে গিয়ে গুটিয়ে নিয়েছি হাত-সে কথা ঈশ্বর জানেন। তোমাকে ভালোবাসার কথা বলতে গিয়েও কতবার যে আমি সে কথা বলিনি সে কথা আমার ঈশ্বর জানেন। তোমার হাতের মৃদু কড়ানাড়ার শব্দ শুনে জেগে উঠবার জন্য দরোজার সঙ্গে চুম্বকের মতো আমি গেঁথে রেখেছিলাম আমার কর্ণযুগল; তুমি এসে আমাকে ডেকে বলবেঃ ‘এই ওঠো, আমি, […]

রামপ্রসাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনাপূর্বক

ইতিহাস কী লিখবো মাগো, আমি তো আর শেষ জানি না। এই যে মহাকালের ধ্বজায় রাজার কথা লিখছে প্রজায় আমি সে-ইতিহাস মানি না। তোর মাঝে মা অনন্তকাল ফেলেছে মন মোহিনীজাল। সবাই যে জাল ছিঁড়তে জানে সময় কি আর সে জাল টানে? আমিও সেই জাল টানি না। তোর প্রেমের ঐ সিংহাসনে, সবাই কি আর বসতে জানে? কাব্যে-সাহিত্যে-গানে […]

যাত্রাভঙ্গ

হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে মন বাড়িয়ে ছুঁই, দুইকে আমি এক করি না এক কে করি দুই। হেমের মাঝে শুই না যবে, প্রেমের মাঝে শুই তুই কেমন কর যাবি? পা বাড়ালেই পায়ের ছায়া আমাকেই তুই পাবি। তবুও তুই বলিস যদি যাই, দেখবি তোর সমুখে পথ নাই। তখন আমি একটু ছোঁব হাত বাড়িয়ে জড়াব তোর বিদায় […]

মোনালিসা

চোখ বন্ধ করলে আমি দেখতে পাই সদ্য-রজঃস্বলা এক কিশোরীরে− যে জানে না, কী কারণে হঠাৎ এমন তীব্র তুমুল আনন্দ-কাতরতা ছড়িয়ে পড়েছে তার নওল শরীরে। মনুর ভাষায় গৌরী, এইটুকুনু মেয়ে চমকে ওঠে নিজের পানে চেয়ে− দেখে তার অঙ্গজুড়ে ফুলের উৎসব। মনে হয় ছড়িয়ে পড়েছে মর্ত্যে নার্গিস আর বার্গিসের স্বর্গপুষ্পঘ্রাণ। মাকে ডেকে মেয়েটি শুধায়− ‘আমার শরীরে ফুলের […]

মানুষ

আমি হয়তো মানুষ নই, মানুষগুলো অন্যরকম, হাঁটতে পারে, বসতে পারে, এ-ঘর থেকে ও-ঘরে যায়, মানুষগুলো অন্যরকম, সাপে কাটলে দৌড়ে পালায় । আমি হয়তো মানুষ নই, সারাটা দিন দাঁড়িয়ে থাকি, গাছের মতো দাঁড়িয়ে থাকি। সাপে কাটলে টের পাই না, সিনেমা দেখে গান গাই না, অনেকদিন বরফমাখা জল খাই না । কী করে তfও বেঁচে থাকছি, ছবি […]