বিষ্টি

আকাশ জুড়ে মেঘের খেলা বাতাস জুড়ে বিষ্টি, গাছের পাতা কাঁপছে আহা দেখতে কী যে মিষ্টি! কলাপাতায় বিষ্টি বাজে ঝুমুর নাচে নর্তকী, বিষ্টি ছাড়া গাছের পাতা এমন করে নড়তো কি? চিলেকোঠায় ভেজা শালিখ আপন মনে সাজ করে, চঞ্চু দিয়ে গায়ের ভেজা পালকগুলি ভাঁজ করে। হাঁসেরা সব সদলবলে উদাস করা দিষ্টিতে উঠানটাকে পুকুর ভেবে সাঁতার কাটে বিষ্টিতে। […]

বসন্তচিত্র

একজন চিত্রক্রেতার সবিনয় অনুরোধে আমি আঁকতে বসেছি একটি আমগাছের ছবি— যে তার দেহচ্ছায়া রামসুন্দর পাঠাগারের সবুজ টিনের চালের ওপরে বিছিয়ে দিয়েছে। গাছের সবুজ পাতারা সবইপ্রায় ঢাকা পড়েছে হালকা হলুদ রঙের অজস্র বোলের আড়ালে। এত আমের বোল আমি আমার জন্মে দেখিনি। একটা মদির-গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে বাতাসে। ফুলে ফুলে, ডালে ডালে, পল্লবে পল্লবে মৌমাছি ও লক্ষ-কোটি কীট-পতঙ্গের […]

ফুলদানি

যেকোনো বাগান থেকে যেটা ইচ্ছে সেই ফুল, যেকোনো সময় আমি তুলে নিয়ে যদি কভু তোমার খোঁপায়, আহা, অজগর তোমার খোঁপায় সাজাবার সুজোগ পেতাম–; তাহলে দেখতে লীলা, তোমার শরীর ছুঁয়ে লাবণ্যের লোভন ফুলেরা উদ্বেল হৃদয়ে নিত্য বিপর্যস্ত হতো, মত্ত মমতায় বলতো আশ্চর্য হয়ে, হতো বলতেইঃ ‘খোঁপার মতন কোনো ফুলদানি নেই৷’

প্রলেতারিয়েত

যতক্ষণ তুমি কৃষকের পাশে আছো, যতক্ষণ তুমি শ্রমিকের পাশে আছো, আমি আছি তোমার পাশেই। যতক্ষণ তুমি মানুষের শ্রমে শ্রদ্ধাশীল যতক্ষণ তুমি পাহাড়ী নদীর মতো খরস্রোতা যতক্ষণ তুমি পলিমৃত্তিকার মতো শস্যময় ততক্ষণ আমিও তোমার। এই যে কৃষক বৃষ্টিজলে ভিজে করছে রচনা সবুজ শস্যের এক শিল্পময় মাঠ, এই যে কৃষক বধূ তার নিপুণ আঙুলে ক্ষিপ্র দ্রুততায় ভেজা […]

পূর্ণিমার মধ্যে মৃত্যু

একদি চাঁদ উঠবে না, সকাল দুপুরগুলো মৃতচিহ্নে স্থির হয়ে রবে; একদিন অন্ধকার সারা বেলা প্রিয় বন্ধু হবে, একদিন সারাদিন সূর্য উঠবে না। একদি চুল কাটতে যাব না সেলুনে একদিন নিদ্রাহীন চোখে পড়বে ধুলো। একদিন কালো চুলগুলো খ’সে যাবে, কিছুতেই গন্ধরাজ ফুল ফুটবে না। একদিন জনসংখ্যা কম হবে এ শহরে, ট্রেনের টিকিট কেটে একটি মানুষ কাশবনে […]

নাস্তিক

নেই স্বর্গলোভ কিংবা কল্প-নরকের ভয়, অলীক সাফল্যমুক্ত কর্মময় পৃথিবী আমার৷ চর্মচোখে যা যা দেখি, শারীরিক ইন্দ্রিয় যা ধরে, তাকেই গ্রহন করি৷ জানি, নিরাকার অপ্রত্যক্ষ শুধুই ছলনা, বিশ্বাস করি না ভাগ্যে, দেবতার বরে৷ আমার জগৎ মুগ্ধ বাস্তবের বস্তুপুঞ্জে ঠাসা, তাই সে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য, অতীন্দ্রিয় নয়৷ অন্ধতার বধ্যভূমি আমার হদৃয়৷ সেই শ্রেষ্ঠ মানব-সন্তান, যার মন মুক্ত ভগবান৷ আমার […]

নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ

নেকাব্বর জানে তাঁর সম্পত্তির হিসাব চাইতে আসবে না কেউ কোনোদিন। এই জন্মে শুধু একবার চেয়েছিল একজন, ‘কী কইরা পালবা আমারে, তোমার কী আছে কিছু তেনা?’ সন্ধ্যায় নদীর ঘাটে ফাতেমাকে জড়িয়ে দু’হাতে বুকে পিষে বলেছিল নেকাব্বর; ‘আছে, আছে, লোহার চাককার মতো দুটা হাত, গতরে আত্তীর বল – আর কীডা চাস্ মাগী।’ ‘তুমি বুঝি খাবা কলাগাছ?’ আজ […]

তোমার চোখ এতো লাল কেন ?

আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক, শুধু ঘরের ভেতর থেকে দরজা খুলে দেবার জন্য। বাইরে থেকে দরজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত। আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই কেউ আমাকে খেতে দিক। আমি হাত পাখা নিয়ে কাউকে আমার পাশে বসে থাকতে বলছি না। আমি জানি এই ইলেকট্রিকের […]

তুলনামূলক হাত

তুমি যেখানেই স্পর্শ রাখো সেখানেই আমার শরীর৷ তোমার চুলের ধোয়া জল তুমি যেখানেই খোঁপা ভেঙ্গে বিলাও মাটিকে; আমি এসে পাতি হাত, জলভারে নতদেহ আর চোখের সামগ্রী নিয়ে ফিরি ঘরে, অথবা ফিরি না ঘরে, তোমার চতুর্দিকে শূন্যতাকে ভরে থেকে যাই৷ তুমি যেখানেই হাত রাখো, যেখানেই কান থেকে খুলে রাখো দুল, কন্ঠ থেকে খুলে রাখো হার, সেখানেই […]

টেলিফোনে প্রস্তাব

আমি জানি, আমাদের কথার ভিতরে এমন কিছুই নেই, অনর্থ করলেও যার সাহায্যে পরস্পরের প্রতি আমাদের দুর্বলতা প্রমাণ করা সম্ভব। আমিও তো তোমার মতোই অসম্পর্কিত-জ্ঞানে এতদিন উপস্থাপন করেছি আমাকে। তুমি যখন টেলিফোন হয়ে প্রবেশ করেছো আমার কর্ণে- আমার অপেক্ষাকাতর হৃৎপিণ্ডের সামান্য কম্পনও আমি তোমাকে বুঝতে দিই নি। দুর্বলতা ধরা পড়ে যায় পাছে। তুমিও নিষ্ঠুর কম নও, […]