ক্রিকেটাঙ্গনে সাহিত্য কিংবা সাহিত্যাঙ্গনে ক্রিকেট

মার্কিন ঔপন্যাসিক বারনার্ড মালামুডের নেচারাল (১৯৮০) নামের উপন্যাসটি বেইসবল খেলার এক নায়ককে নিয়ে। বেইসবল যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান খেলা। বইটি পড়ার সময় আমি কানাডায় ছিলাম, তাই টিভির মাধ্যমে খেলাটির সঙ্গে ক্রমেই পরিচিত হয়ে উঠছিলাম। উপন্যাসটির মূল থিম ছিল নায়কের বেইসবল খেলায় বীরোচিত প্রত্যাবর্তন। সব মহৎ সাহিত্য বস্তুত বীরধর্মী। আর সব খেলাও মূলত বীরধর্মী। সে জন্য সাহিত্য আর খেলার মধ্যে আপাতবিরোধ থাকলেও তাদের মধ্যে মিল হলো, তারা দুজনেই বীরত্বপ্রসূত সৃজনীক্ষেত্র। ২০০৯ সালে সাকিব আল হাসানের ওয়েস্ট ইন্ডিজের গ্রেনাডার দ্বিতীয় টেস্টে লড়াকু অপরাজিত ৯৬ রানের একটি বিজয়ী ইনিংস দেখে একটি পত্রিকার কলামে লিখেছিলাম যে তাঁর খেলায় মুক্তিযোদ্ধার বীরত্ব প্রতিভাত ছিল। শেক্সপিয়ারের হ্যামলেট চরিত্রের যে উক্তিটি আমার প্রিয়, যেটি আমি আমার একটি বইয়ে এপিগ্রাফ বা সূচনা-উদ্ধৃতি হিসেবে ব্যবহার করেছিলাম, সেটি হলো জীবনের মহত্ব (গ্রেইটনেস) বড় ইস্যুর ওপর নির্ভর করে তা নয়, ছোটখাটো খড়ের মতো তুচ্ছ ইস্যুতেও বীরত্বজনক ভূমিকা পালন করে মহত্ব অর্জন করা যায়। খেলার কথাই বলি, ২০০৩ সালে মুলতান টেস্টে বাংলাদেশকে একটা বিরাট গৌরব অর্জন থেকে বঞ্চিত করলেন পাকিস্তানের ইনজামাম উল হক, যিনি শেষ পর্যন্ত উইকেটে অপরাজিত ১৩৮ রান করে পরাজয়ের মুখ থেকে পাকিস্তানের জন্য ছিনিয়ে আনেন বিজয়। ক্রিকেটীয় বীরত্বের এটি একটি অনন্য উদাহরণ, তবে ইনজামামের এই ইনিংসটির চেয়েও সেরা ছিল ১৯৯৯ সালে ব্রায়ান লারার বারবাডোজ টেস্টের সেই ১৫৩ রানের অপরাজিত ইনিংসটি, যেটি বাংলাদেশে আমরা রাত জেগে টিভিতে উপভোগ করেছিলাম এবং যে খেলায় তিনি শেষ দুই ঘণ্টা লড়েছিলেন গ্লেন ম্যাকগ্রা, জেসন গিলেস্পির পূর্ণ শক্তির অস্ট্রেলিয়ার বোমারু আক্রমণের বিরুদ্ধে শুধু দুই বোলারকে সঙ্গে করে—প্রথমে এমব্রোস ও পরে কোর্টনি ওয়ালশ, যে ওয়ালশের টেস্ট রেকর্ডে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গোল্লা আছে।
বিয়ন্ড আ বাউন্ডারি–এর প্রচ্ছদতবে ক্রিকেটের সঙ্গে সহজাত যে বীরত্ব লীন হয়ে আছে, তার ঐতিহাসিক ব্যাখ্যায় গেলে দেখা যাবে এর ঔপনিবেশিক উৎস যখন সাহিত্যে স্থান পেয়েছে, তখন এটি ইংরেজদের একটি জাতীয় খেলা থেকে ক্রমান্বয়ে পরিণত হয়েছে উপনিবেশিক দেশগুলোরও প্রধান একটি খেলায়। ইতিহাসটি এ রকম: ১৩০০ সালে যুবরাজ এডওয়ার্ডের (পরবর্তী সময়ে বিখ্যাত রাজা তৃতীয় এডওয়ার্ড) পোশাক খরচ বাবদ একটি তালিকায় পাওয়া যাচ্ছে যে ৬ পাউন্ড ১০০ শিলিং খরচ হয়েছে ‘ক্রিয়েগ’ ও অন্যান্য ক্রীড়ায় অংশ নেওয়ার জন্য। ক্রিকেট লেখক এ আর লিটলউডের মতে, ‘ক্রিয়েগ’ নিশ্চয় ক্রিকেটরই আদি নাম। রানি এলিজাবেথের সময় বালকেরা ‘ক্রেকেট’ খেলছে, এ রকম বর্ণনা আছে। ক্রিকেটের সঙ্গে সূচনাপর্বে রাজকীয় সত্তা জড়িত ছিল। এ জন্যই বলা হয় ‘ক্রিকেট ইজ আ রয়্যাল গেম’। খেলাটি যখন রাজন্যবর্গ থেকে নেমে এসে ক্রমেই সাধারণ স্তরের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে লাগল, তখন ইংরেজ শাসকবর্গ খেলাটিকে জাতীয় ক্রীড়ায় পরিণত করলেন এবং এ খেলার মাধ্যমে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্য বলা হলো, ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা বা ‘জেন্টলম্যানস গেম’। এই খেলার মধ্যে মিশ্রিত আছে আভিজাত্য, খেলোয়াড়সুলভ মনোভাব, চারিত্র্য ও চারিত্রিক গভীরতা। এতৎসত্ত্বেও তখন থেকে একটি শ্রেণিবিভাজন যে স্বীকার করা হয়নি, তা নয়। ‘জেন্টলম্যান’ বলতে বোঝাত সমাজের উঁচু শ্রেণির ব্যক্তিদের, যাঁদের কাছে ক্রিকেট খেলা ছিল একটি শৌখিন বিনোদন। আর যাঁরা পেশাদার ক্রিকেট খেলতেন, তাঁদের বলা হতো ‘প্লেয়ারস’। বলার কথা হলো, এই প্লেয়ারদের পক্ষাবলম্বন করে শৌখিন ক্রিকেটারদের খোঁচা দিতে ভুলতেন না কবি-সাহিত্যিকেরা। অষ্টাদশ শতাব্দীর ব্যঙ্গাত্মক কবি আলেকজান্ডার পোপ তাঁর কাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী লর্ড জন স্যাকভিলকে গুঁতো মেরে বলছেন, ‘দ্য সিনেটর অ্যাট ক্রিকেট আর্জ দ্য বল।’ অন্যদিকে চালর্স ডিকেন্সের প্রথম উপন্যাস দ্য পিকউইক পেপারস (১৮৩৬)-এ আছে অল মাগল্টন ও ডিঙ্গি ডেল—এই দুই ক্রিকেট ক্লাবের মধ্যে অনুষ্ঠিত একটি ক্রিকেট ম্যাচের বর্ণনা, যেখানে মি. জিঙ্গল নামের এক ধারাভাষ্যকার ওই খেলাটিকে কথিত করছেন ‘ক্যাপিট্যাল গেম, স্মার্ট স্পোর্টস, ফাইন এক্সারসাইজ’ হিসেবে। চালর্স ডিকেন্সের কথা যখন বললাম, তখন ঊনবিংশ শতাব্দীর অর্থাৎ ভিক্টোরীয় যুগের কথাই বলা হয়। যে সময়ে ইংল্যান্ড সাম্রাজ্যবাদী শক্তি হিসেবে বিস্তৃত হচ্ছে এবং ভারতবর্ষসহ পৃথিবীর বহু অঞ্চল পরিণত হয়েছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের উপনিবেশে। ইংরেজি সাহিত্যে তখন সাম্রাজ্যবাদী চেহারা ফুটে ওঠে দুভাবে। ইংরেজ যোদ্ধা কবি সিগফ্রিড সাসুন ১৯২৮ সালে প্রকাশিত মেমোয়ার্স অব আ ফক্স-হান্টিং ম্যান উপন্যাসে ইংল্যান্ডের নয়নাভিরাম গ্রামাঞ্চলের অপস্রিয়মাণ সৌন্দর্যের প্রতি কাতরতা ব্যক্ত করে গ্রামীণ সবুজ জমিতে ক্রিকেট খেলার আয়োজনের উল্লেখ করেছেন। সাসুনের মতো নিরেট কাব্যাক্রান্ত না হলেও উপন্যাসিক জর্জ ম্যাকডোনাল্ড ফ্রেজার ফ্ল্যাশম্যানস লেডি (১৯৭৭) শিরোনামের উপন্যাসে ১৮৪২ সালে ক্রিকেটের মক্কা বলে খ্যাত লর্ডস মাঠে অনুষ্ঠিত একটি খেলার কাল্পনিক বিবরণ দেন; যেখানে খেলেছিলেন সে সময়ের বিখ্যাত ক্রিকেটাররা। কিন্তু ফ্রেজারের লেখায়ও ফুটে ওঠে গ্রামীণ ক্রিকেটের মাহাত্ম্য। আবার ক্রিকেটের প্রবাদপ্রতিম লেখক স্যার নেভিল কার্ডাস ক্রিকেটের সবুজে ঘেরা কাব্যিকতার প্রতি লক্ষ রেখে বললেন, ক্রিকেটের মতো অন্য কোনো খেলা ইংরেজদের এতটা ভাবকাতর করে না। ভাবকাতরতার পরম বৈশিষ্ট্য হলো অতীতাক্রান্ত থাকা। তাই ক্রিকেট সাহিত্যের প্রধান সুর হলো স্মৃতিকাতরতা, যার থাকবে একটি বেদনাসিক্ত গৌরবোজ্জ্বল অতীত। যেমন কার্ডাসের প্রামাণিক লেখাগুলো তাঁদের নিয়ে, যাঁরা কাউন্টি ক্রিকেটে লড়াকু খেলোয়াড় হলেও সবাই যে টেস্ট খেলোয়াড় ছিলেন এমন নয়। বাংলা সাহিত্যে শংকরীপ্রসাদ বসু (রমণীয় ক্রিকেট) কিংবা মতি নন্দী (ননীদা নট আউট) কিংবা বদরুল হুদা চৌধুরীও (তবু ক্রিকেট ভালোবাসি) এ ঘরানার লেখক। তাঁদের রচিত ক্রিকেট সাহিত্যে এই খেলার গৌরবোজ্জ্বল অতীত নিয়ে স্মৃতিকাতরতা লক্ষ করা যায়।9d8639e0d0257fdfda51c2038a64ff2b-13

অন্যদিকে, ক্রিকেট এত কাব্যমণ্ডিত খেলা হওয়া সত্ত্বেও এবং সাহিত্যে এর অতীতাশ্রয়ী সুষমা থাকলেও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিস্তৃতির ইতিহাসে এর কিন্তু রয়েছে একটি আগ্রাসী রাজনৈতিক ভূমিকা। লেখক সেসিল হেডল্যামের মতে, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিস্তারে পর্যায়ক্রমে যেসব উপাদান সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছিল, তার তালিকায় প্রথমে শিকারি থেকে শুরু করে ধর্মযাজক, বণিক, সৈনিক, রাজনীতিবিদ ও শেক্সপিয়ারের পরেই হলো ক্রিকেটের অবস্থান। শেক্সপিয়ারের কথা হেডল্যাম বলেননি, বলেছিলেন কার্লাইল, অন্যভাবে, তাঁর ‘দ্য হিরো অ্যাজ পোয়েট’(১৮৪০) প্রবন্ধে।
ক্রিকেট ভারতে এল। তবে এখানেও ব্রিটিশ রাজ্যের শ্রেণি বিভাজনটা ব্যবহৃত হলো ঔপনিবেশিক ও উপনিবেশিতদের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণে। ভারত উপমহাদেশে ক্রিকেটের প্রচলন হলে সাহেবেরা শুধু ব্যাটিং করতেন আর ‘নেইটিভ’ অর্থাৎ ভারতীয়রা পেতেন কেবল বল করা আর বল কুড়ানোর কাজ।
ক্রিকেট, লিটারেচার অ্যান্ড কালচার-এর প্রচ্ছদঔপনিবেশিকতার মূল তত্ত্ব হলো, ঔপনিবেশিক দেশ উপনিবেশিত দেশগুলোর মানুষের মধ্যে হীনম্মন্যতা তৈরি করে দেয়, যার ফলে প্রতিষ্ঠিত হয় ঔপনিবেশিক জাতিগুলোর শ্রেয়তা। ক্রিকেটকে ইংরেজরা তাদের জাতীয় সত্তার সঙ্গে অঙ্গীভূত করে প্রচার করতে থাকলেও প্রথমে তারা খ্রিষ্টানধর্মের শ্রেয়তাবোধের সঙ্গে ক্রিকেটের শ্রেয়তাবোধ মিশিয়ে উপনিবেশিতদের মন দখলের জন্য একটি গুগলি বল চালায়। রেভারেন্ড জেমস পাইক্রফট নামের এক ধর্মযাজক ১৮৫১ সালে প্রকাশিত দ্য ক্রিকেট ফিল্ড বইয়ে লেখেন, প্রকৃত খ্রিষ্টানধর্ম হচ্ছে শারীরিক ও মানসিকভাবে অত্যন্ত দৃঢ় একটি ধর্ম, যে ধর্মের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য একজন ক্রিকেটারের মধ্যে দেখা যায়। কিন্তু মিশনারিরা ব্যর্থ হলে ক্রিকেটকে যুক্ত করা হয় নৈতিকতার সঙ্গে, অর্থাৎ ক্রিকেট খেলাকে নৈতিকতা বিধানের পন্থা হিসেবে বিবেচনা করার আরেকটি তরিকা প্রবর্তন করে সাম্রাজ্যবাদী শাসকেরা। চালু করা হয় একটি ফ্রেইজ—‘নট ক্রিকেট’, যেটি ব্যবহৃত হয় সাহেবদের শ্রেয়তা নিশ্চিত করা ও নেইটিভদের ইতরতা প্রকাশের জন্য। নেইটিভদের আচরণে আদর্শগত স্থান থেকে কোনো বিচ্যুতি হলে বলা হতো ‘নট ক্রিকেট’—অর্থাৎ আচরণটি বিধিসম্মত হয়নি। ক্রিকেটের সঙ্গে নৈতিকতার অস্তিত্বের প্রশ্নটি জুড়ে দিয়ে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি উপনিবেশিতদের মনে এ কথা ঢুকিয়ে দিল যে তাদের আচরণগত ও ব্যবহারিক ত্রুটি সংশোধন করে দেবে ঔপনিবেশিক শাসকেরাই এবং এ জন্য ক্রিকেট হলো অন্যতম একটি উপায়।ecd17e244fe8854df92d2fc88296ac1a-14
ক্রিকেটের রাজনীতি বা রাজনীতির ক্রিকেট সম্পর্কে যুগান্তকারী সাহিত্যিক গ্রন্থটি হচ্ছে ত্রিনিদাদের মার্ক্সবাদী লেখক সি এল আর জেমসের বিয়ন্ড আ বাউন্ডারি (১৯৬৩)। তাঁর বইটির আলোচনা করতে গিয়ে ক্রিকেটের ওপর এ পর্যন্ত রচিত সবচেয়ে তাত্ত্বিক গ্রন্থের লেখক অ্যান্টনি বেইটম্যান নিজের ক্রিকেট, লিটারেচার অ্যান্ড কালচার (২০০৯) বইয়ে বললেন যে জেমস নেভিল কার্ডাসদের মতো ইংরেজি ঘরানার ক্রীড়ালেখকদের ক্রিকেটের মাধ্যমে স্বাজাত্যপ্রেম প্রকাশ করার রীতিকৌশলটি গ্রহণ করে নিজেরই ক্যারিবিয়ান স্বাজাত্যবোধের প্রকাশ করলেন। সাম্রাজ্যবাদী ইংল্যান্ডের সঙ্গে ক্রিকেটের একটি দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেল এখানেই। যে ক্রিকেট আগে ছিল কেবল ইংরেজদের জাতীয় সত্তার প্রতীক, সেটি এখন হয়ে গেল উত্তর ঔপনিবেশিক স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর দেশপ্রেমের চূড়ান্ত প্রতীক, যা শেক্সপিয়ারের ব্যবহারের ক্ষেত্রেও হয়েছে দেখা যায়। একদা ইংরেজরা শেক্সপিয়ারকে বাইবেলের পাশাপাশি তাদের সংস্কৃতির শ্রেয়তার নিদর্শন হিসেবে প্রচার করেছিল, কিন্তু পরবর্তীকালে শেক্সপিয়ার পাঠ করেই উপনিবেশিতরা গ্রহণ করে উদার মানবতাবোধের শিক্ষা, যেটি তাদের উদ্বুদ্ধ করেছিল ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামে করতে। ইংরেজি ভাষার ক্ষেত্রেও এই দ্বিফলাবিশিষ্ট ছুরির উপমা দেওয়া যায়। ইংরেজি সাম্রাজ্যবাদী ভাষা, কিন্তু ইংরেজি শিক্ষার মাধ্যমে শাসিতরা শাসকের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর প্রশিক্ষণটা নেয়। এখানে সালমান রুশদির মন্তব্য গ্রহণযোগ্য। ১৯৮২ সালে দ্য টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত ‘দ্য এম্পায়ার রাইটস ব্যাক উইথ আ ভেনজিয়েন্স’ শীর্ষক প্রবন্ধে তিনি বললেন, অনুবাদে যা দাঁড়ায় এ রকম: ‘ইংরেজি আর ইংরেজির মধ্যে নেই; এটা অনেক শিকড় থেকে গজে উঠছে, তাই যাদের আগে তারা উপনিবেশ বানিয়েছিল, তারাই ওই ভাষা ব্যবহার করে নিজেদের জন্য বিস্তৃত অঞ্চল করায়ত্ত করছে।’
সেই যে বলেছিলাম সি এল আর জেমসের কথা। সেই জেমসের বক্তব্যের যাথার্থ এখানেও প্রমাণিত যে ভারতের যুবরাজ শ্রী রঞ্জিত সিংজি ও ত্রিনিদাদের স্যার লিয়ারি কনস্টানটাইন একান্তভাবেই ভারতীয় এবং ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান। আরেক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটারের উক্তিটিও স্মরণযোগ্য। জর্জ হেডলিকে ক্রিকেট জগৎ ‘কালো ব্র্যাডম্যান’ হিসেবে অভিহিত করতে থাকলে তিনি বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, তাঁকেই (ব্র্যাডম্যানকে) সাদা হেডলি বলেন না কেন! এর পাশাপাশি সম্প্রতি প্রকাশিত দুটি চমৎকার উপন্যাসের কথা বলতে হয়, যে উপন্যাস দুটির কাহিনিতে প্রকাশিত ক্রিকেটকে ঘিরে স্বাজাত্যবোধের চরম উদ্বোধন। একটি জোসেফ ওনিলের নেদারল্যান্ড (২০০৮), আরেকটি শেহান করুনাতিলকের চাইনাম্যান, যা পরে আমেরিকায় দ্য লিজেন্ড অব প্রদীপ ম্যাথ্যু (২০১০) নামে প্রকাশিত হয়।
তাই তো এখন আর আমাদের বলতে হয় না, বরং ক্রিকেটের ওপর আন্তর্জাতিক ধারাবিবরণকারীরাই বলেন যে বাংলাদেশে ক্রিকেট হলো দেশপ্রেম প্রকাশের বিরাট উপলক্ষ। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশের লোকদের ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা দেশের প্রতি ভালোবাসার সঙ্গে তুল্যমূল্য। দর্শকসারিতে দাঁড়িয়ে নগ্ন শরীরে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ডোরাকাটা রং গায়ে মেখে বাংলাদেশের পতাকা উঁচিয়ে যে যুবকেরা চিৎকার করেন, তাঁরা শুধু বাংলাদেশ ক্রিকেটের কথাই বলেন না, বাংলাদেশ রাষ্ট্রেরও তাঁরা চলমান উজ্জীবিত প্রতীক।

রেটিং করুনঃ
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (No Ratings Yet)
Loading...
মোহিত উল আলম- র আরো পোষ্ট দেখুন