সমবেত সকলের মতো আমিও গোলাপ ফুল খুব ভালোবাসি, রেসকোর্স পার হয়ে যেতে সেইসব গোলাপের একটি গোলাপ গতকাল আমাকে বলেছে, আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি। আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি। শহিদ মিনার থেকে খসে-পড়া একটি রক্তাক্ত ইট গতকাল আমাকে বলেছে, আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি। আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি। সমবেত সকলের […]
আমি আজ কারো রক্ত চাইতে আসিনি
আমার জন্ম
তপ শেষে যখন বাল্মীকি তাঁর মুদিত নয়ন খুলিলেন, দেখিলেন লব নেই; চোখের সমুখে দিগন্তবিস্তৃত ধু-ধু শূন্য তপোবন প’ড়ে আছে৷ ‘কোথা লব, কোথা লব? ফিরে আয়৷’ ডাকিলেন মুনি, ফিরে এলো প্রতিধ্বনি, শিশু লব দিলো না উত্তর৷ এ কোন্ বিধির লীলা, ভাবিলেন চিন্তক্লীষ্ট মুনি: ‘শুন্য হাতে কী মুখে যাইব আজ সেই পূণ্যাশ্রমে, – যেখানে অকল্পনীয় লব-হীন সীতার […]
আমাকে কী মাল্য দেবে, দাও
তোমার পায়ের নিচে আমিও অমর হব, আমাকে কী মাল্য দেবে, দাও। এই নাও আমার যৌতুক, এক-বুক রক্তের প্রতিজ্ঞা। ধুয়েছি অস্থির আত্মা শ্রাবণের জলে, আমিও প্লাবন হব, শুধু চন্দনচর্চিত হাত একবার বোলাও কপালে। আমি জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে উড়াব গাণ্ডীব, তোমার পায়ের কাছে নামাব পাহাড়। আমিও অমর হব, আমাকে কী মাল্য দেবে, দাও। পায়ের আঙুল হয়ে সারাক্ষণ লেগে আছি […]
আগ্নেয়াস্ত্র
পুলিশ স্টেশনে ভিড়,আগ্নেয়াস্ত্র জমা নিচ্ছে শহরের সন্দিগ্ধ সৈনিক।সামরিক নির্দেশে ভীত মানুষের শটগান,রাইফেল,পিস্তল এবং কার্তুজ,যেন দরগার স্বীকৃত মানত,টেবিলে ফুলের মতো মস্তানের হাত। আমি শুধু সামরিক আদেশ অমান্য করে হয়ে গেছি কোমল বিদ্রোহী,প্রকাশ্যে ফিরছি ঘরে অথচ আমার সঙ্গে হৃদয়ের মতো মারাত্তক একটি আগ্নেয়াস্ত্র,আমি জমা দেইনি।
আকাশ ও মানুষ
কবে থেকে আকাশ দাঁড়িয়ে আছে একা, তার বুক থেকে খসে পড়েছে কত তারা। বেঁচে থাকলে আরো কত তারাই খসবে, তা নিয়ে আকাশ কি দুঃখ করতে বসবে? না, বসবে না, আমি বলছি, লিখে নাও, আকাশকে তো মহান মানি এ-কারণেই। মনুষ্যবৎ হলে কি মানুষ তাকে মানতো? প্রিয়জন চলে গেলে মানুষই ব্যথিত হয়, আকাশ নির্বিকার, আকাশ কখনও নয়। […]
অনন্ত বরফবীথি
মৃত্যুর পর তোমরা আমাকে কংশের জলে ভাসিয়ে দিও। যদি শিমুলের তুলা হতাম, বাতাসে উড়িয়ে দিতে বলতাম, কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য, আমি বাতাসের চেয়ে হালকা নই। আমাকে তোমরা কাঠের আগুনে পুড়িয়ে ফেলো না, কিংবা মাটি খুঁড়ে কবর দিও না আজিমপুর বা বনানীতে। বর্জ্যপদার্থের মতো আমি চাই না মাটিতে মিশে যেতে। মৃত্যুর পর তোমরা আমাকে কংশের জলে ভাসিয়ে […]
স্বপ্নের কবিতা
আমি তো দাঁড়িয়েছিলাম পাশে, সামনে বিপুল জনস্রোত হলুদ আলোর রাস্তা চলে গেছে অতিকায় সুবর্ণ শহরে কেউ আসে কেউ যায়, কারো আঙুল থেকে ঝরে পড়ে মধু কেউ দাঁতে পিচ কাটে, সুবর্ণষ্ঠীবীর স্মৃতি লোভ ক’রে কেউ বা ছুঁয়েছে খুব লঘু যত্নে, সুখী বারবনিতার তম্বুরাযুগল হেন পাছা কারো চুলে রত্নচ্ছটা, কারো কণ্ঠে কাঁচা-গন্ধ বাঘনখ দোলে আমি তো দাঁড়িয়েছিলাম […]
সেদিন বিকেলবেলা
সাতশো একান্নতম আনন্দটি পেয়েছি সেদিন যখন বিকেলবেলা মেঘ এসে ঝুঁকে পড়েছিল গোলাপ বাগানে এবং তোমার পায়ে ফুটে গেল লক্ষ্মীছাড়া কাঁটা! তখন বাতাসে ছিল বিহ্্লতা, তখন আকাশে ছিল কৃষ্ণক্লান্তি আলো, ছিল না রঙের কোলাহল ছিল না নিষেধ- অতটুকা ওষ্ঠ থিকে অতখানি হাসির ফোয়ারা মন্দিরের ভাস্কর্যকে ম্লান করে নতুন দৃুশ্যটি। এর পরই বৃষ্টি আসে সাতশো বাহান্ন সঙ্গে […]
সে কোথায় যাবে
পৌষের পূর্ণিমা রাত ডেকে বললো, যা- সে কোথায় যাবে? নিঝুম মাঠের মধ্যে সে এখন রাজা একা-একা দুন্দুভি বাজাবে? ছিল বটে রৌদ্রালোকে তারও রাজ্যপাট সোনালি কৈশোরে আজ উল্লুকের পাল হয়েছে স্বরাট চৌরাস্তার মোড়ে দাঁতে দাঁত ঘষাঘষি, চোখের টঙ্কার এরকম ভাষা সে শেখেনি, তাই এই রূপকথায় তার জন্ম কীর্তিনাশা! গায়ে সে মেখেছে ধুলো, গূঢ় ছদ্মবেশে বোবা ভ্রাম্যমাণ […]
সুন্দরের পাশে
সে এত সুন্দর, তাই তার পাশে বসি রূপের বিভায় আমি সেরে নিই লঘু আচমন রূপের ভিতর থেকে উঠে আসে বুকভরা ঘুম আমি তার চোখ থেকে তুলে নিই মিহিন ফুলের পাপড়ি। গন্ধ শুঁকি, পুনরায় ঘুম থেকে জাগি উজ্জল দাঁতের আলো রক্তিম ওষ্ঠকে বহু দূরে নিয়ে যায় রূপের সুদূরতম দেশে চলে যাবে এই ভয়ে আমি দ্রুত সিঁড়ি […]