না ঘুমানোর দল

নারকেলের ঐ লম্বা মাথায় হঠাৎ দেখি কাল ডাবের মতো চাদঁ উঠেছে ঠান্ডা ও গোলগাল । ছিটকিনিটা আস্তে খুলে পেরিয়ে এলেম ঘর ঘুমন্ত এই মস্ত শহর করছিলো থরথ । মিনারটাকে দেখছি যেন দাড়িয়ে আছেন কেউ, পাথরঘাটার গির্জেটা কি লাল পাথরের ঢেউ ? চৌকিদারের হাক শুনে যেই মোড় ফিরেছি বায় – কোত্থেকে এক উটকো পাহাড় ডাক দিল […]

ত্যাগে দুঃখে

আজকাল চোখে আর অন্য কোনো স্বপ্নই জাগে না। কবিতার কথা বুঝি, কবিতার জন্য বহুদূর একাকী গিয়েছি পদচারণার স্মৃতি সারাদিন দুঃখবোধ ঐকান্তিক সখ্যতা ভেঙেছে ত্যাগে দুঃখে ভরে আছে সামান্য পড়ার ঘর সন্তানসহ দুঃখী সঙ্গিনীর মুখ। অবোধ বাল্যেও নাকি একটা ছোট কাপও ভাঙিনি– আমার আম্মা প্রায়ই আমার বোনের কাছে শৈশব শোনান। সুন্দর ফ্লাওয়ার ভাসে জ্যান্ত পাখির ডানা […]

কালের কলস

অনিচ্ছায় কতকাল মেলে রাখি দৃশ্যপায়ী তৃষ্ণার লোচন ক্লান্ত হয়ে আসে সব, নিসর্গও ঝরে যায় বহুদূর অতল আঁধারে আর কী থাকলো তবে হে নীলিমা, হে অবগুণ্ঠন আমার কাফন আমি চাদরের মতো পরে কতদিন আন্দোলিত হবো কতকাল কতযুগ ধরে দেখবো, দেখার ভারে বৃষের স্কন্ধের মতো নুয়ে আসে রাত্রির আকাশ? কে ধারালো বর্শা হেনে অসংখ্য ক্ষতের সৃষ্টি করে […]

কাঁপুনি

শেষ হয়নি কি, আমাদের দেয়া-নেয়া? হাত তুলে আছে, পাড়ানি মেয়েটি বিদায়ের শেষ খেয়া, ডাকছে আমাকে হাঁকছে আমাকে আমিই শেষের লোক। শ্লোক শেষ হলো, অন্ত-মিলেরও শেষ। কাঁপছে নায়ের পাটাতন বুঝি ছেড়ে যেতে উৎসুক। আমি চলে গেলে এ পারে আঁধারে কেউ থাকবে না আর সব ভেসে গেছে এবার তবে কি ভাসাবো অন্ধকার? আলো-আঁধারির এই খেলা তবে আমাকে […]

কবিতা এমন

কবিতা তো কৈশোরের স্মৃতি। সে তো ভেসে ওঠা ম্লান আমার মায়ের মুখ; নিম ডালে বসে থাকা হলুদ পাখিটি পাতার আগুন ঘিরে রাতজাগা ভাই-বোন আব্বার ফিরে আসা, সাইকেলের ঘন্টাধ্বনি–রাবেয়া রাবেয়া– আমার মায়ের নামে খুলে যাওয়া দক্ষিণের ভেজানো কপাট! কবিতা তো ফিরে যাওয়া পার হয়ে হাঁটুজল নদী কুয়াশায়-ঢাকা-পথ, ভোরের আজান কিম্বা নাড়ার দহন পিঠার পেটের ভাগে ফুলে […]

কদম ফুলের ইতিবৃত্ত

আমি তোমাকে কতবার বলেছি আমি বৃক্ষের মতো অনড় নই তুমি যতবার ফিরে এসেছ ততবারই ভেবেছ আমি কদমবৃক্ষ হয়ে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকব কিন্তু এখন দেখ আমি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে থাকলেও হয়ে গিয়েছি বৃক্ষের অধিক এক কম্পমান সত্তা বাঁশি বাজিয়ে ফুঁ ধরেছি আর চতুর্দিক থেকে কেঁদে উঠেছে রাধারা আমি কি বলেছিলাম ঘর ভেঙে আমার কাছে এসো আমি […]

একুশের কবিতা

ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ দুপুর বেলার অক্ত বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায় ? বরকতের রক্ত। হাজার যুগের সূর্যতাপে জ্বলবে এমন লাল যে, সেই লোহিতেই লাল হয়েছে কৃষ্ণচূড়ার ডাল যে ! প্রভাতফেরীর মিছিল যাবে ছড়াও ফুলের বন্যা বিষাদগীতি গাইছে পথে তিতুমীরের কন্যা। চিনতে না কি সোনার ছেলে ক্ষুদিরামকে চিনতে ? রুদ্ধশ্বাসে প্রাণ দিলো যে মুক্ত বাতাস কিনতে ? […]

ঊনসত্তরের ছড়া- ১

ট্রাক ! ট্রাক ! ট্রাক ! শুয়োরমুখো ট্রাক আসবে দুয়োর বেঁধে রাখ। কেন বাঁধবো দোর জানালা তুলবো কেন খিল ? আসাদ গেছে মিছিল নিয়ে ফিরবে সে মিছিল। ট্রাক ! ট্রাক ! ট্রাক ! ট্রাকের মুখে আগুন দিতে মতিয়ুরকে ডাক। কোথায় পাবো মতিয়ুরকে ঘুমিয়ে আছে সে ! তোরাই তবে সোনামানিক আগুন জ্বেলে দে।

আমি আর আসবো না বলে

আর আসবো না বলে দুধের ওপরে ভাসা সর চামোচে নিংড়ে নিয়ে চেয়ে আছি। বাইরে বৃষ্টির ধোঁয়া যেন সাদা স্বপ্নের চাদর বিছিয়েছে পৃথিবীতে। কেন এতো বুক দোলে? আমি আর আসবো না বলে? যদিও কাঁপছে হাত তবু ঠিক অভ্যেসের বশে লিখছি অসংখ্য নাম চেনাজানা সমস্ত কিছুর। প্রতিটি নামের শেষে, আসবো না। পাখি, আমি আসবো না। নদী আমি […]

অবুঝের সমীকরণ

কবিতা বোঝে না এই বাংলার কেউ আর দেশের অগণ্য চাষী, চাপরাশী ডাক্তার উকিল মোক্তার পুলিস দারোগা ছাত্র অধ্যাপক সব কাব্যের ব্যাপারে নীরব! স্মাগলার আলোচক সম্পাদক তরুণীর দল কবিতা বোঝে না কোনো সঙ অভিনেত্রী নটী নারী নাটের মহল কার মনে কাতোটুকু রঙ? ও পাড়ার সুন্দরী রোজেনা সারা অঙ্গে ঢেউ তার, তবু মেয়ে কবিতা বোঝে না! কবিতা […]