স্বর্গ হতে বিদায়

সমুদ্র শেষ হ’লো, আজ দুরন্ত অন্ধকার ডানা ঝাড়ে উড়ন্ত পাখির মতো | সমুদ্র শেষ হ’লো গভীর বনে আর হরিণ নেই, সবুজ পাখি গিয়েছে ম’রে, আর পাহাড়ের ধূসর অন্ধকারে দুরন্ত অন্ধকার ডানা ঝাড়ে উড়ন্ত পাখির মতো | সমুদ্র শেষ হ’লো, চাঁদের আলোয় সময়ের শূণ্য মরুভূমি জ্বলে |

মেঘদুত

পাশের ঘরে একটি মেয়ে ছেলে-ভুলানো ছড়া গাইছে, সে ক্লান্ত সুর ঝ’রে-যাওয়া পাতার মতো হাওয়ায় ভাসছে, আর মাঝে মাঝে আগুন জ্বলছে অন্ধকার আকাশের বনে | বৃষ্টির আগে ঝড়, বৃষ্টির পরে বন্যা | বর্ষাকালে, অনেক দেশে যখন অজস্র জলে ঘরবাড়ি ভাঙবে, ভাসবে মূক পশু ও মুখর মানুষ, শহরের রাস্তায় যখন সদলবলে গাইবে দুর্ভিক্ষের স্বেচ্ছাসেবক, তোমার মনে তখন […]

বিরহ

রজনীগন্ধার আড়ালে কী যেন কাঁপে, কী যেন কাঁপে পাহাড়ের স্তব্ ধ গভীরতায় | তুমি এখনো এলে না | সন্ধ্যা নেমে এলো : পশ্চিমের করুণ আকাশ, গন্ধে ভরা হাওয়া, আর পাতার মর্মর-ধ্বনি |

বিস্মৃতি

ভুলে যাওয়া গন্ধের মতো কখনো তোমাকে মনে পড়ে | হাওয়ার ঝলকে কখনো আসে কৃষ্ণচূড়ার উদ্ধত আভাস | আর মেঘের কঠিন রেখায় আকাশের দীর্ঘশ্বাস লাগে | হলুদ রঙের চাঁদ রক্তে ম্লান হ’লো, তাই আজ পৃথিবীতে স্তব্ ধতা এলো, বৃষ্টির আগে শব্ দহীন গাছে যে-কোম

মুক্তি

হিংস্র পশুর মতো অন্ধকার এলো— তখন পশ্চিমের জ্বলন্ত আকাশ রক্তকরবীর মতো লাল সে-অন্ধকার মাটিতে আনলো কেতকীর গন্ধ, রাতের অলস স্বপ্ন এঁকে দিল কারো চোখে, সে-অন্ধকার জ্বেলে দিলো কামনার কম্পিত শিখা কুমারীর কমনীয় দেহে | কেতকীর গন্ধে দুরন্ত, এই অন্ধকার আমাকে কী ক’রে ছোঁবে ? পাহাড়ের ধূসর স্তব্ ধতায় শান্ত আমি, আমার অন্ধকারে আমি নির্জন দ্বীপের […]

উর্বশী

তুমি কি আসবে আমাদের মধ্যবিত্ত রক্তে দিগন্তে দুরন্ত মেঘের মতো ! কিংবা আমাদের ম্লান জীবনে তুমি কি আসবে, হে ক্লান্ত উর্বশী, চিত্তরঞ্জন সেবাসদনে যেমন বিষণ্ণমুখে উর্বর মেয়েরা আসে কত অতৃপ্ত রাত্রির ক্ষুধার ক্লান্তি, কত দীর্ঘশ্বাস, কত সবুজ সকাল তিক্ত রাত্রির মতো, আর কতো দিন !

নিরালা

বর্তমানে মুক্তকচ্ছ, ভবিষ্যৎ হোঁচটে ভরা, মাঝে মাঝে মনে হয়, দুর্মুখ পৃথিবীকে পিছনে রেখে তোমাকে নিয়ে কোথাও স’রে পড়ি | নদীর উপরে যেখানে নীল আকাশ নামে গভীর স্নেহে, শেয়াল-সংকুল কোনো নির্জন গ্রামে কুঁড়েঘর বাঁধি ; গোরুর দুধ, পোষা মুরগির ডিম, খেতের ধান ; রাত্রে কান পেতে শোনা বাঁশবনে মশার গান ; সেখানে দুপুরে শ্যাওলায় সবুজ পুকুরে […]

একটি বেকার প্রেমিক

চোরাবাজারে দিনের পর দিন ঘুরি | সকালে কলতলায় ক্লান্ত গণিকারা কোলাহল করে, খিদিরপুর ডকে রাত্রে জাহাজের শব্দ শুনি ; মাঝে মাঝে ক্লান্ত ভাবে কী যেন ভাবি— হে প্রেমের দেবতা, ঘুম যে আসে না, সিগারেট টানি ; আর শহরের রাস্তায় কখনো প্রাণপণে দেখি ফিরিঙ্গি মেয়ের উদ্ধত নরম বুক | আর মদির মধ্য রাত্রে মাঝে মাঝে বলি […]

একটি মেয়ে

আমাদের স্তিমিত চোখের সামনে আজ তোমার আবির্ভাব হ’লো স্বপ্নের মত চোখ, সুন্দর, শুভ্র বুক, রক্তিম ঠোঁট যেন শরীরের প্রথম প্রেম আর সমস্ত দেহে কামনার নির্ভিক আভাস আমাদের কলুসিত দেহে আমাদের দুর্বল, ভীরু অন্তরে | সে-উজ্জ্বল বাসনা যেন তীক্ষ্ণ প্রহার |

তুমি যেখানেই যাও

তুমি যেখানেই যাও, কোনো চকিত মুহুর্তের নিঃশব্ দতায় হঠাৎ শুনতে পাবে মৃত্যুর গম্ভীর, অবিরাম পদক্ষেপ | আর, আমাকে ছেড়ে তুমি কোথায় যাবে ? তুমি যেখানেই যাও আকাশের মহাশূণ্য হ’তে জুপিটারের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি লেডার শুভ্র বুকে পড়বে |