দামাল মেয়ে

দুরন্ত, দামাল, দস্যি মেয়ে
তার অনেক ডাক নাম।
পায়ে সরষে দিয়ে চড়কি কেটে বেড়াত সারা গ্রাম।
ওপাড়ার হারান কাকার বাগান থেকে
রোজ আমড়া চুরি করত
তারপর পুঁচকে সাগরেদদের নিয়ে বসতো দামোদরে তীরে
কাঁচা লঙ্কা, নুন সহযোগে জমে উঠত চরুইভাতি।
একবার তো নেপালদের বাগান থেকে
গোটা কলার কাঁদ কেটে নিয়ে এসেছিল।
নেপালের বাবা জানতে পেরে, সে কি হাঙ্গামা!
তুমুল ঝগড়া করে
শেষ অব্দি ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল সেই কাঁদ।
মায়ের হাতে জুটেছিল উত্তম মধ্যম।
তাতে তার বয়েই গেল!

রোজ তাকে দেখতাম
লুকিয়ে লুকিয়ে
শ্যামলা মুখে সারাক্ষন জড়িয়ে থাকতো ঝরনা হাসি
চোখে তার গভীর স্রোতের টান।
ভীষণ মন চাইতো একটিবার কথা বলতে,
ভয়েই কখনও বলা হয়নি।
বাব্বাহ! যা ঠোঁট কাটা মেয়ে!

সেদিন দেখি মালকোঁচা করে শাড়ি বেঁধে
তরতরিয়ে উঠে পড়ল নারকেল গাছে,
একের পর এক ডাব পরতে থাকল পাশের পুকুরে।
আমার বন্ধু গোপাল
এগিয়ে মানা করতেই
সে কি চোখ রাঙ্গানি!
আমার বেশ মজাই লাগত।
ভাল লাগত তার দুরন্ত হাসি
ভাল লাগত দামাল চোখ
সেই দস্যি প্রান।

বিকেল তখন পড়ন্ত
দিগন্তে ডুব দিচ্ছে ডিমের কুসুম
বন্ধ কারখানার উঁচু পাঁচিল পাশ কাটিয়ে
একা ঘরে ফিরছিল সেই মেয়ে।
ফেরা হয়নি তার।
মাদকাসিক্ত কামাতুর জন্তু গুলো
টেনে নিয়ে গিয়েছিল ভাঙা পাঁচিলের ওপাশে।
মুখে কাপড়, হাত পায়ে মোটা দড়ি বেঁধে
ছিঁড়ে খেয়েছে তার শরীর।
দুরন্ত দামাল দস্যি সেই মেয়েটা
আজ ভীষণ শান্ত।
মুখে তার ভীষণ যন্ত্রনা।
তার নিথর দেহ ধীরে ধীরে ছাই হয়ে উড়ে গেল।
সেই ছাই উড়তে উড়তে ঘুরে এল সারা গাঁ
সারা রাজ্য
সারা দেশ
সারা পৃথিবী
দাবানলের মতো ছড়িয়ে দিতে চায় আগুন
বুকে বুকে
পুড়িয়ে দিতে চায় সভ্য সমাজের অসভ্য মুখোশগুলো।
কিছুই পারেনা
শুধুই কান্না হয়ে ভেসে বেড়ায়
কখনো বা দিল্লী, কখনো বা কামদুনি।