বেশ কিছুদিন আগে শিশুদের শিক্ষা বিষয়ে লিখেছিলাম । লেখার শেষ অংশে জাপানী কার্টুন ডোরেমন (যার জাপানী উচ্চারন ডরাইমন) প্রচার বিরোধী এক ব্যক্তির ইউটিউব ভিডিও র প্রতিক্রিয়া হিসাবে লেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম ।ইউটিউবে কত রকম ভিডিওই তো আছে তা নিয়ে লিখতে হবে কেন – এ ভেবে আর লেখা হয় নি ।
গত ৩ফেব্রুয়ারী ২০১৩ সংসদে একজন সাংসদের বক্তব্য দেখে মনে হলো বিষয়টি ফেলে দেওয়ার মতো নয় ।
হিন্দিতে প্রচারিত জাপানি কার্টুন ডোরেমন নিয়ে জাতীয় সংসদে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এক সাংসদ। আজ রোববার সাংসদ শাহরিয়ার আলম বিষয়টি স্পিকারের দৃষ্টিতে আনেন। শাহরিয়ার আলম বিষয়টি উত্থাপন করলেও জরুরি জনগুরুত্বপূর্ণ নোটিশ হিসেবে সেটি গৃহীত হয়নি।
তবে শাহরিয়ার আলম তাঁর যুক্তিতে বলেন, ডিশ চ্যানেলের মাধ্যমে বর্তমানে হিন্দি কার্টুন ‘ডোরেমন’ দেখানো হচ্ছে। বাংলাদেশের সব শিশু এই কার্টুন দেখছে। এই কার্টুন শিশুদের হিন্দি আর মিথ্যা বলা ছাড়া কিছুই শেখাতে পারবে না। এই কার্টুন বন্ধ না হলে বাংলার চেয়ে হিন্দি বলার সংখ্যা বেড়ে যাবে। যেসব চ্যানেল এই কার্টুন দেখাচ্ছে, সেগুলোর অনুমোদনও বন্ধ করা দরকার।
শাহরিয়ার আলম বলেন, এমন কার্টুন দেখাতে হবে যেগুলো শিশুদের নৈতিক শিক্ষা দেয়। সময়মতো পড়াশোনায় আগ্রহী করে, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দেয়, এমন বিদেশি ভাষার বাংলায় অনূদিত কার্টুন দেখানো যেতে পারে। সুত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো ৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৩
সাংসদের বক্তব্যটিতে যে বিষয়গুলি আমার কাছে গুরুত্বপুর্ন মনে হয়েছে তা হলো বাংলাদেশের সব শিশু, হিন্দী ভাষা, মিথ্যা কথা বলা, নৈতিক শিক্ষা , ডোরেমন ।
সংবাদটি শুনার পর আমার ১৪ বছরের ছেলে ( ডোরেমন সহ অনেক জাপানী কার্টুন দেখে বড় হচ্ছে) ডোরেমন বন্ধ করার সংবাদের প্রতিক্রিয়ায় যা বলল তার বাংলা করলে যা দাঁড়ায় তার মানে হচ্ছে – মাথা মোটা মানুষের চিন্তা।
আসলেই কি বাংলাদেশের সব শিশু ডোরেমন দেখছে , কখনোই নয় । এটি সম্ভব নয় । হতে পারে বাংলাদেশের বেশীর ভাগ শিশু ডোরেমন দেখছে । তারাই দেখছে যাদের টিভিতে কেবল সংযোগ আছে শুধু তারাই । মাননীয় সাংসদ আপনি কখনো ডোরেমন এর ১ বা ২ টি পর্ব মনোযোগ দিয়ে দেখেছেন কি ? আমি বলব অবশ্যই নয় ।একথা কেন বলছি তা পরে ব্যাখা করব ।
ডোরেমন হিন্দীতে প্রচার হচ্ছে এটি আমাদের ব্যার্থতা । আমরা আমাদের আকাশ উন্মক্ত করে দিয়েছি নিঃশর্ত ভাবে । ডোরেমন ই কি শুধু হিন্দীতে প্রচার হচ্ছে ? হিন্দী নাটক থেকে শুরু করে সমস্ত হিন্দি বিনোদন আমাদের বেডরুম পর্যন্ত ডুকে গেছে , বড়রা হিন্দী ভাষার অনুষ্টান দেখবে আর ছোটদের জন্যই সমস্যা এ দ্বিমুখী নীতি থেকে আপনার শিশুটি কি নৈতিকতা শিখবে।
বাংলাদেশে ডোরেমন প্রচার করা হয় কার্টুন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে , কার্টুন নেটওয়ার্ক একসময় ইংরেজীতে প্রচারিত হত আমাদের দেশে আমরা যদি ভারতীয় কার্টুন নেটওয়ার্ক ব্যবহার না করি তাহলে আবার ইংরেজীতে কার্টুন নেটওয়ার্ক দেখা যেতে পারে । জাপানে কার্টুন নেটওয়ার্কে বিদেশী ভাষার কার্টুন একই সময়ে জাপানী ভাষাতে প্রচার হয়ে থাকে রিমোর্ট কন্ট্রোলের মধ্যে ভাষা বেছে নেওয়ার অপশন আছে । বাংলাদেশ কার্টুন নেটওয়ার্ক হিন্দি ভাষাতে ডোরেমন ছাড়া আরো অনেক কার্টুন প্রচার করে সে সব কার্টুন দেখে বাচ্চারা হিন্দি না শিখে শুধু ডোরেমন দেখেই শিখছে তা ই যদি সত্যি হয় বুঝতে হবে এই কার্টুনের মধ্যে এমন কিছু আছে যা আমার আপনার মত মোটা মাথার মানুষের বোধগম্য নয় । শেষ অংশে ডোরেমন এবং জাপানী কার্টুন সম্পর্কে বিস্তারিত লিখব।
বিদেশী ভাষা শেখার মধ্যে খারাপ কিছু তো আছে বলে মনে হয় না । ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলেও দেখা যাবে আমাদের আপত্তি ছিল রাষ্ট্র ভাষা নিয়ে উর্দু ভাষা শেখা নিয়ে নয়। আমরা যদি ইংরেজী ,আরবী, জাপানীজ, কোরীয়ান শিখতে পারি তাহলে হিন্দি শেখাতে দোষের কি আছে ? (আমি হিন্দি ভাষা তেমন একটা বুঝি না বলা তো দূরে থাকুক ) বরং আমরা চিকিৎসা,শিক্ষা,ভ্রমনসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে প্রতিবেশী এই দেশটিতে ভ্রমন করে থাকি হিন্দি জানা থাকলে অনেক উপকারে আসতে পারে । সাংসদ আরো একটি কথা বলেছেন -এই কার্টুন শিশুদের হিন্দি আর মিথ্যা বলা ছাড়া কিছুই শেখাতে পারবে না। এই কার্টুন বন্ধ না হলে বাংলার চেয়ে হিন্দি বলার সংখ্যা বেড়ে যাবে। সত্যিই যদি তাই হতো তাহলে তো বাংলাদেশে বাংলা ভাষা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার কথা কারন আমরা আড়াইশ বছর ধরে ইংরেজী শিখেছি , তা তো হয় নি । বাংলাদেশীদের হিন্দি ভাষা সহজে বুঝতে পারার সবচেয়ে বড় কারন হচ্ছে বাক্য গঠন এবং উচ্চারনগত মিল।
ইউরোপের দেশগুলোতে একই দেশে ২/৩টি ভাষার প্রচলন আছে । যেমন ইটালীর অধিবাসীরা ইটালীর ভাষা ছাড়াও ফ্রেন্স , ইংরেজী বলতে পারে । তেমনি ফ্রান্সের অধিবাসীরা ইটালীয়ান সহ বিভিন্ন ভাষাতেও পারদর্শী।
পড়ে বেশ মজা পেলাম । আমাদের দেশে শিক্ষাব্যবস্থা একেবারে ইংরেজীর কাছে নতি স্বীকার করে নিয়েছে । অলি-গলি-পাড়ায় সব জায়গায় কিন্ডারগার্টেন স্কুল । নিজেদের ভাষাই এরা ভালো করে বলতে পারেনা এই ইংরেজীর জন্যে । সেসবে কি কারো খেয়াল আছে ? বরং ইংরেজী মিডিয়ামে না দিলেই সম্মানহানি ।
ধন্যবাদ আপনাকে মিতা । সুন্দর একটি বিষয় খুব সহজ করে তুলে ধরেছেন ।