মন্টুর জীবন

এই মরা শহরেও পাতা গজায়,ফুল ফোটে,প্রজাপতি ওড়ে
সোনালি রোদে ভরে ওঠে দু একটা মিষ্টি ফল খুব উঁচুতে ।
দুপুরের আস্তাকুড়ে একটা নেড়ি কুত্তার সভাপতিত্বতে কাকেরা যখন
অধিবেশন চালায় —
বাবুদের ছেলেরা লম্বা জুলপি,দুখানা বাঁধানো খাতা,ডান হাতে ঘড়ি,বাঁ হাতে সিগারেট নিয়ে মা লক্ষীর
চোরাই সিন্দুক থেকে বেড়িয়ে মা সরস্বতীর ফর্সা পায়ে তেল মাখায়,
তখনই
মন্টুর হাত থেকে কাচের গ্লাসটি খসে যায়।
কালিপদ কোমরের কষিটা আঁট করতে করতে চেয়ার থেকে উঠে এসে বেদম একটা
লাথি ঝাড়ে মন্টুর পাছায় ।
চামেচ টা প্লেটে নামিয়ে রেখে ,অমৃতবাজার থেকে আহ্লাদী আঁখি তুলে
চশমা খুলে,ঠোঁটের কোণা থেকে জিভের ডগা দিয়ে আল গোছে
অমলেটের কচি টুকু সুড়ুৎ করে টেনে নিয়ে অধ্যাপক বলেন,
“আ কালি অত জোরে মার কেন, তবে যাই বলো —
পোল্ট্রির ডিমে কিন্তু তেমন টেষ্ট নেই ।”
মন্টু ভাঙা ডিমের খোলা,পচা চা-পাতা,পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ফুসলানি
এবং আনন্দবাজারের সম্পাদকীয়ের উপর হুমড়ি খেয়ে গোঙায় —
দু চোখের জল গাল বেয়ে নেমে আসে ।
“অ্যাই মন্টে হারামজাদা,অ্যাকটিং রাখ উঠে রুটি কাট।”
মন্টু রুটি কাটে। কোয়াটার পাউন্ড রুটি ঠিক মাঝকানে কেটে ,সেঁকে,
দুধের সর মাখিয়ে ডি এম নাথবাবুকে দেয় … ডি এম অর্থাৎ কিনা
দেবেন্দ্র মোহন—
মালগাড়ি নিঃসৃত লোহাড় রড বেচে লাল …
এখন পৌরপিতা।
ভোর পাঁচটায় উনুন ধরিয়ে ঘুগ নির হাঁড়িটা চাপিয়ে,
ঘুম চোখে বাসন মাজে।
লাল গোলা থেকে সদ্য নামা ঝুড়ি যার বাজারে
বরফের মধ্যে মাথা গুঁজে
ল্যাজ উঁচিয়ে দিয়ে
ইলিশের চলন্ত ছায়া
এবং সামনের দোকানে
সুতোর ঝোলা আপেলের দিকে চোখ রেখে মন্টু ডিস কাপ ধোয়।
একে একে বাবুরা আসেন
অমৃতবাজার এবং আনন্দবাজার টেবিল থেকে টেবিলে ওড়ে।
লম্বা ছুরিটা ময়লা ন্যাকড়ায় দুবার ঘসে নিয়ে মন্টু চার হাতে রুটি কাটে,
একটাতে সর মাখায় আড়তদার কেসববাবুকে দেয়,
অন্যটাতে সর মাখিয়ে শ্রমিক নেতা দীনবন্ধুকে …।
মাখন মাখায় হেডমাষ্টার বিপ্লববাবুকে,
সর মাখিয়ে রিপোর্টার তরুণ মখুজ্যেকে
দুধের সর নন্দীবাবু,মাখন…তলাপাত্র,মাখন… ঘোষবাবু,
সর সমাজপতি … সর মাখন..সর মাখন……
বাসি পচা ঘুগনি ছাড়া মন্টুর আর কিছুই থাকে না ।
কিন্তু পাউরুটি কেটে দুটুকরো করে দুজনকে দিয়ে দিলেও তার হাতে থাকে
আর একটি জিনিস থাকে…
ভারতবর্ষের অন্ধকার আকাশে হঠাৎ লাফিয়ে ওঠা বিদ্যুতের মতো
আঁট ইঞ্চি লম্বা ঝক্ ঝকে একখানা ছুরি ।

      Montu R Jibon - Kamrul Hasan Monju And Sharmin Nahar Laki;