ভিনগ্রহের প্রানীঃ অস্তিত্বে আশাবাদী মানুষ

bingroher1রাত তখন তিনটা । একটা রহস্যময় মহাকাশযান রক্তিম আলো ছড়িয়ে আকাশ থেকে নেমে এল পৃথিবীতে। তার ভিতরে দেখা গেল রুপালি রঙের পোষাকে আবৃত বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি সজ্জিত ভিনগ্রহের কয়েকটি অচেনা প্রানী । ২৭ ডিসেম্বর ১৯৮০ সালে পূর্ব ইংল্যান্ডের সাফোক অরণ্যে খুব কাছ থেকে গোপন সামরিক লোকজনসহ শ দুয়েক মানুষ এদৃশ্য প্রত্যক্ষ করে। পরবর্তীকালে ব্রিটেনের বহুল প্রচারিত রবিবাসরীয় পত্রিকা “দ্যা নিউজ অব ওয়াল্ড”এ খবরটি ছাপা হলে তা ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।বৃটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ও খবরটির সত্যতা স্বীকার করে। একই সময়ে ইংল্যান্ডের আরো কয়েকটি এলাকায় চাক্ তির মতো আকাশযানের দেখা পেল অনেকে এবং রাতে শস্য ক্ষেতের উপর আলোক বিন্দুর ছটাও অনেকের নজর এড়ায়নি ।রাত শেষে শস্য ক্ষেতে দেখা যেত বিভিন্ন অদ্ভুত সুন্দর,জটিল ও সুক্ষ্ম Corp Circle । রাতের বেলায় কে বা কারা জমির শস্য ক্ষেত মাড়িয়ে এসব দৃষ্টি নন্দন অভূতপূর্ব নক্ শার কারুকার্যমন্ডিত Corp Circle তৈরী করত! অন্তত মানুষের পক্ষে একরাতে এসব
নকশা তৈরী অসম্ভব।
অনেকে বলে থাকেন,ভিনগ্রহের প্রানীরা এসব Corp Circle করে দিয়ে যায় । হয়তো তাই! নাহলে একবার শস্য ক্ষেতের উপর দিয়ে এ ধরণের আলোক কণার ছটা চলন্ত অবস্থায় দেখা মাত্রই ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলের প্লেন ক্যামেরাসহ অজানা আলোক কণাকে তাড়া করলে তাদের ক্যামেরায় স্পষ্ট দেখা গেলো,অজানা আলোক কণা যে ক্ষেতের উপর দিয়ে যাচ্ছে এবং Corp Circle তৈরী হচ্ছে । অবশ্য এ আলোক কণা মাত্র কিছু সময়ের মধ্যেই অদৃশ্য হয়ে যায় । ২০০২ সালে ইংল্যান্ডে এ ধরণের শস্য ক্ষেতের এক Corp Circle এ ভিনগ্রাহী এলিয়নের মুখচ্ছবি বং তার হাতে রাখা একটি গোলক দেখা গিয়েছিল । তাহলে কি এসব ভিনগ্রহীর কাজ?

আরেকটি ঘটনা,সেটা ১৯৭৮ সালের । মেলবোর্নের আকাশে বিমান চালাচ্ছিলেন বৈমানিক ফ্রেডারিক ভ্যালেনটিচ্ । হঠাৎ আকাশে এক অদ্ভুত দৃশ্য অবলোকন করলেন তিনি ।সাথে সাথে রেডিওর মাধ্যমে তা তিনি গ্রাউন্ড কন্ট্রোল রুমে জানাচ্ছিলেন,”আকাশের ঠিক পুর্ব্দিক থেকে ওঠা এগিয়ে আসছে আমার দিকে। এত জোরে আসছে ,আমি বুঝতে পারছি না জিনিশতা কী! মনে হচ্ছে,লম্বা আকৃতির কিছু একটা । একটা আলো বেরুচ্ছে সবুজ রঙের । জিনিসটা ঠিক আমার মাথার উপর দিয়ে ঘুরে চলছে নিজের কক্ষপথে । আকাশে ভেসে আছে এই বস্তুটা । আমি নিশ্চিত যে ,কোন এয়ারক্রাফট নয় এটা ।” একথা বলতে বলতে হঠাৎ থেমে গেল রেডিও ট্রান্সমিশন । পরো প্লেনসহ তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন । তাঁকে আর পাওয়া গেল না । তবে এ ঘটনার পরই অষ্ট্রেলিয়ার আকাশে মহাকাশযানের উপস্থিতি লক্ষ করেছেন অনেকেই । তাহলে কি ভিনগ্রহের কোন প্রানী স্পেসশিপে করে তাঁকে নিয়ে গেল দূর অজানা কোন গ্রহে !
একই ধরণের আরো একটা ঘটনা । সময়টা ১৯৪৭ সাল । বৈমানিক আর্নল্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের আকাশে উড়ছিল নিজ বিমানে চড়ে । হঠাৎ লক্ষ করলেন,রুপোর মত চকচকে গোলাকৃতির ৯টি আকাশযান মালার মতো একটা বিন্যাসে আকাশে উড়ে চলছিল । ঠিক যেন জলের উপর দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে ভেসে চলা কতগুলো প্লেট । গতিবেগ ঘণ্টায় ১২০০ মাইল ।তার এই অভিজ্ঞতার কথা পরদিন ছাপা হয় বিভিন্ন সংবাদপত্রে । এরপর প্রায় ১ মাস ধরে বিভিন্ন সময়ে এ ধরণের আকাশযানের উপস্থিতি লক্ষ্য করলো পৃথিবীর মানুষ । এ বছরই নিউ মেক্সিকোর রসওয়েল শহরে ভেঙ্গে পড়লো এক রহস্যময় উড়ন্ত আকাশযান । বলা হলো ,এতা ভিনগ্রহের স্পেসশিপ । এর ভেতরে নাকি ভিনগ্রহের কয়েকটি প্রানীও ছিল ,যারা মুহুর্তেই অদৃশ্য হয়ে যায় । এসব আকাশযানের অস্তিত্ব এবং এসবে চড়া প্রাণী কয়টি ভিনগ্রহের না পৃথিবীর অথবা সেখানে আদৌ কোন প্রাণী ছিল কি-না তা রহস্যের চাদরে ঢাকা বিষয় হলেও একথা বলা যায়,পৃথিবীর মতো জীবন সৃষ্টি বিকাশের অনুকুল-উপযুক্ত পরিবেশ জগতের অন্যান্য গ্রহে থাকা অস্বাভাবিক নয় । বিজ্ঞানীরা মনে করেন,অন্তহীন এই মহাবিশ্বে রয়েছে অগনিত গ্রহ-নক্ষত্র । প্রখ্যাত জ্যোর্তিবিজ্ঞানী মার্কিন মহাকাশ প্রকল্পের শীর্ষ কার্ল সাগান (মৃত্যু ২০ ডিসেম্বর ১৯৯৬) জানান,”একমুঠো বালিতে থাকে ১০ হাজার বালুকণা…। আর পৃথিবীর সমস্ত সাগরের বেলাভুমিতে যে সংখ্যক বালুকণা আছে,তার
থেকেও বেশী নক্ষত্র আছে এ মহাবিশ্বে “। আর এ নক্ষত্রের কত গ্রহ-উপগ্রহ থাকতে পারে,প্রিয় পাঠক আপনারাই কল্পনা করুন ! বিজ্ঞানীদের অধিকাংশই বিশ্বাস করেন,অন্তহীন এই বিশাল মহাশুন্যে বিরাজমান এসব অগনিত গ্রহের কোন কোন্টিতে অবশ্যি ভিনগ্রাহী প্রানীর অস্তিত রয়েছে । ওখানকার প্রাণের ছোঁয়া হয়তো অন্যরকম । হতে পারে পৃথিবীর মানুষের কল্পনার বাইরের কোন সীমানায় এর পরিধি । প্রাণের সংজ্ঞাতে থাকতে পারে ভিন্নতা ।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই পৃথিবীতে যদি প্রাণ থাকতে পারে, তবে বিশাল মহাবিশ্বের অন্য কোথাও প্রাণ থাকবে না- এটা তো হতে পারে না ।
গানণিতিকভাবে হিসেব করলেও দেখা যায়, অন্যগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে । আসলে মহাবিশ্বে মানুষ একা নয় । চন্দ্রাভিযানে পাঠানো আ্যপোল-১৪ এর নভোচারী মিচেল এগার মনে করেন,”এ মহাবিশ্বে মানবজাতি কোনভাবেই একা নয়, তাদের স্বজাতিরা ভিন্ন কংরহে নিশ্চয়ই আছেন । তাদের সঙ্গে যোগাযোগও গড়ে তুলতে পারবে পৃথিবির বাসিন্দারা । সেদিন বেশী দূরে নয় । আমাদের এ প্রজন্মেই হয়তো এটা সম্ভব হবে ।” (২০০৯ সালের এপ্রিলে
ওয়ানশিংটনে জাতীয় প্রেসক্লাবে ৫ম বার্ষিক এক্স সন্মেলনে নভোচারী মিচেল এগার সাংবাদিকদের এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন )। ১৯৭৫ সালের নোবেল বিজয়ী আন্ত্ররজাতিক পদার্থবিদ সন্মেলনে দেয়া তথ্য অনুযায়ী,”অন্যগ্রহেও প্রাণের অস্তিত্ব থাকা সম্ভব । কোটি কোটি বছর আগে পৃথিবির মতো বিশ্বের অন্যান্য গ্রহেও বজায় ছিল একই ধরণের পরিবেশ । সেখানেও ঘটেছিল আদিম প্রানীর বিকাশ ” । শুধু তাই নয় ,আমাদের দৃষ্টি ও বোধসীমার বাইরে সুবিস্তৃত এসব গ্রহের কোন কোনটিতে হয়তো রয়েছে বুদ্বিমান প্রাণী-এমনকি তারা হতে পারে পৃথিবীর মানুষের চেয়েও বুদ্বিমান । বর্তমান বিশ্বের সেরা জ্যোতিপদার্থ-বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংও বিশ্বাস করেন,ভিনগ্রহে বুদ্বিমান প্রানী অর্থাৎ এলিয়নের অস্তিত্ব রয়েছে । ডিসকয়াভারি চ্যানেলের সাথে এক সিরিজ সাক্ষাতকারে তিনি বলেন,”আমার বিশ্বাস এলিয়েন আছে এবং তারা অবশ্যি বুদ্বিভিত্তিক জীবন যাপন করে । তবে বড় সমস্যা হল তাদের শারিরিক কার কিরকম হতে পারে,তা বের করা ।” ভিনগ্রহের প্রাণীর শারিরীক আকার কি রকম অথবা তারা দেখতে কেমন-এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা আজো দ্বিধান্বিত । কারণ অণু রসায়ন একই রকম হলে একই ধরনের প্রাণের উদ্ভব ঘটবে-তা ভাবার কোন কারন নেই । আমাদের এই পৃথিবীতে কত বিচিত্র ধরনের প্রাণীর বসবাস ,অথচ একেবারে অভিন্ন তাদের অণু জীববিজ্ঞান । বেতার টেলিস্কোপের মাধ্যমে আন্তনাক্ষত্রিক মহাশূন্যে গ্রহে,ধুমকেতুতে জৈব-অণুর সন্ধান পাওয়া গেছে।
অয়ামিন এসিড পাওয়া গেছে উল্কাপন্ডের মধ্যে । এ থেকে মনে হয় ,উপযুক্ত পরিবেশ পেলে জীবনের উদ্ভব ঘটতে পারে । তবে তার বিকাশ ,গঠন,পূর্ণতা নির্ভর করে অনুকুল পরিবেশ পরিস্থিতির উপর । এ প্রসঙ্গে মহাজাগতিক সভ্যতার স্বাপ্নিক কার্ল সাগান বলেন,”আমি বলতে পারি না একটা বহির্জাগতিক প্রাণী
কেমন দেখাবে আমি ভীষণভাবে এই সত্যে সীমাবদ্ব যে,প্রাণের কথা যাকে বলা হয় পৃথিবীর প্রাণ,যা কার্বণ জৈব অণুর ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে । অনেক সময় কল্পকাহিনী লেখক ও চিত্রশিল্পীরা অন্যজগতের প্রাণীদের বর্ণনা দেন অথবা ছবি আঁকেন । আমি বহির্জাগতিক প্রাণীগুলোর আকার – আকৃতি সংক্রান্ত তাদের ঐ দৃষ্টিভঙ্গির সাথে একমত নই । তারা পৃথিবীর প্রাণের ছায়া অবলম্বনে এই ধরণের প্রাণের কাঠামো তৈরী করেন । প্রাণের বিকাশ ঘতার জন্য একটা দীর্ঘ ধারার স্বতন্ত্র প্রায় অসম্ভব কিছু পদক্ষেপের প্রয়োজন হয়ে পড়ে । আমি মনে করি না, অন্যগ্রহের প্রাণ দেখতে অনেকটা সরীসৃপ অথবা কীটপতঙ্গ অথবা মানুষের মতো-সঙ্গে থাকবে ক্ষুদ্র কসমেটিক প্রলেপ হিসেবে সবুজ চামড়া,রঙ লাগানো কান ও অ্যান্টেনা বা হুল “।আসলে এরা যে কন রকমের হতে পারে । হয়তো এরা হতে পারে মানুষের আদলের কাছাকাছি বুদ্বিমান প্রানী অথবা এরা হতে পারে আকারে খুব ছট নিরীহ প্রানী অথবা মাঝারী কৌশলী শিকারী প্রানী-যাদের চামড়ায় থাকবে কিছু অভিযোজনক্ষম পরিবর্তনশীল প্যাটার্ণ। এরা (Folater)
প্রাণীও হতে পারে যাদের শরীর হবে বিশাল হাইড্রোজেন বেলুনের মতো। আবার ভিনগ্রহীরা এদ্র কারো মতো নাও হতে পারে। আসলে ভিনগ্রহীরা কি রকম-তা বলা মুশকিল।

(অসমাপ্ত)

রেটিং করুনঃ
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars ( votes, average: ৫.০০ out of ৫)
Loading...
Alternative Textতৌফিকুল ইসলাম চৌধুরী- র আরো পোষ্ট দেখুন