আমাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন থেকেই আমরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোতে গিয়ে ‘ইত্যাদি’ ধারণ করে আসছি। বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠান করার কারণে বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়, কথা হয়। ভাব-বিনিময় হয়। ৫ বছর আগে আমরা এমনি একটি অনুষ্ঠান ধারণ করতে গিয়েছিলাম কুমিল্লার শালবন বৌদ্ধ বিহারে। ধারণ শেষে ১২-১৪ বছরের একটি শিশু হঠাৎ এসে আমাকে একটি প্রশ্ন করে_
:আপনি তো সাধারণ মানুষকে নিয়ে অনুষ্ঠান করেন। বলেন তো মানুষ কয় প্রকার?
ছোট্ট একটি শিশুর মুখে হঠাৎ এ ধরনের প্রশ্ন শুনে অবাক হলাম। একটু হেসে জিজ্ঞেস করলাম-
:হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন?
শিশুটি আমার পাল্টা প্রশ্নের জবাব না দিয়ে নিজেই উত্তর দিল_
:’শোনেন, মানুষ হচ্ছে দুই প্রকার। সাধারণ মানুষ এবং অসাধারণ মানুষ।
এবারে দ্বিতীয় প্রশ্ন_ বলেই সে আর একটি প্রশ্ন ছুড়ে দিল_
:বলুন তো, কোন মানুষ বেশি ভালো_ সাধারণ মানুষ, নাকি অসাধারণ মানুষ?
এ প্রশ্নেরও কী উত্তর দেব বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
আমাকে চিন্তিত দেখে শিশুটি হেসে ওঠে_
:বুঝেছি, এটাও পারবেন না। আপনি নিশ্চয়ই মনে মনে অসাধারণ মানুষের কথাই ভাবছেন। কিন্তু সঠিক উত্তর হচ্ছে_ সাধারণ মানুষ। কারণ সাধারণ মানুষকে ব্যবহার করেই তারা অসাধারণ মানুষ হন।
যাবার সময় বলে গেল_ প্রশ্নটা ‘ইত্যাদি’র দর্শক কুইজে দেবেন। শিশুটির হঠাৎ এ ধরনের প্রশ্ন আমাকে একটু ভাবনায় ফেলে দিল। এ প্রশ্ন তো ‘ইত্যাদি’তে করা যাবে না। কারণ এই প্রশ্ন এবং এর সঠিক উত্তর দিতে গেলে শিশুটির ভাষায় যারা অসাধারণ মানুষ, তারা বিষয়টি সহজভাবে নেবেন না। সাধারণ মানুষকে বোঝানো সহজ হলেও অসাধারণ মানুষকে বোঝানো কঠিন। কারণ এরা জেগে ঘুমান এবং যারা জেগে ঘুমান তাদের যেমন ঘুম ভাঙে না তেমনি যারা বুঝেও অবুঝ তাদেরও তেমনি বুঝ আসে না। তবে চাপে পড়লে পাপের কথা কাঁপতে কাঁপতে বেরিয়ে আসে। আর তাদের এই কাঁপাকাঁপির কিছু নমুনা বিশেষ বিশেষ সময়ে আমরা দেখেছি।
কিন্তু সাধারণ এবং অসাধারণ মানুষ নিয়ে শিশুটির মনে এই প্রশ্ন কেন_ ভেবে পাইনি। তবে আমাকে কিছু চিন্তার খোরাক দিয়ে গ্যাছে। আসলে আমাদের দেশে কোনো রাজনৈতিক নেতা যখন বক্তৃতা দেন তখন তাদের কথার সিংহভাগ জুড়েই থাকে সাধারণ মানুষের কথা। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের সুখের জন্য, সাধারণ মানুষের উন্নতির জন্য। আবার সাধারণ মানুষকে নিয়েই সকল অন্যায়ের মোকাবেলা করার কথা বলেন। কিন্তু এসব কথায় কি সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়?
টকশো আর পত্রিকায় দেওয়া বিবৃতির কথাই ধরুন। সবার কথার মধ্যেই জনগণ আর সাধারণ মানুষের কথা আছেই। অর্থাৎ যে যা বলছেন সবই সাধারণ মানুষের জন্য, তাদের অধিকার আদায়ের জন্য। কিন্তু যে সময়ে তারা টিভি পর্দায় এসব কথা বলেন, সে সময় দেশের অধিকাংশ সাধারণ মানুষ থাকেন ঘুমিয়ে। তবে এই সব অসাধারণ মানুষ যাদের সম্পর্কে বলেন কিংবা যাদের প্রশংসা বা সমালোচনা করে আলোচনা করেন তারাও কিন্তু অসাধারণ মানুষ এবং উভয় পক্ষের উদ্দেশ্যই সাধারণ মানুষের কল্যাণ। কিছুদিন আগে আমরা জনসংখ্যা বিষয়ক একটি অনুষ্ঠান করেছিলাম। অনুষ্ঠানটি করতে গিয়ে জানলাম দেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের বিভিন্ন দলের বিজ্ঞ নেতৃবৃন্দ (শিশুটির ভাষায় অসাধারণ মানুষ) যেভাবে ১৬ কোটি জনগণকে নিয়ে প্রায়ই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়া কিংবা অপর পক্ষকে সমুচিত শিক্ষা দেওয়ার কথা বলেন, তাতে মনে হয় দেশের জনসংখ্যা এখন ৩২ কোটি। যেমন ‘এ’ দল বলছে_ ১৬ কোটি জনগণ আমাদের সাথে আছে। আবার ‘বি’ দল বলছে, ১৬ কোটি জনগণই আমাদের শক্তি। আর হরতাল অবরোধ হলে তো ‘এ’ দল এবং ‘বি’ দলের দুটি বিবৃতি থাকবেই। হরতাল পালন করায় জনগণকে অভিনন্দন; আরেক দল বলবে, হরতাল প্রত্যাখ্যান করায় জনগণকে অভিনন্দন। এই অসাধারণ মানুষেরা আইন নিয়ে, মূল্যবোধ নিয়ে, সততা নিয়ে, দেশপ্রেম নিয়ে অনেক কথাই বলেন কেউ কাগজে, কেউবা টিভিতে। শুধু বলাই নয়, অনেক আইনের ধারা আছে যা বড় বড় বিলবোর্ডে কিংবা সাইনবোর্ডে শোভা পায়। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। সাইনবোর্ডে লেখা এসব আইন ভাঙার জন্য ফাইনও আছে। আবার ফাইন না দিয়ে আইন ভাঙার লাইনও আছে। সে লাইন সাধারণের নয়, অসাধারণ মানুষের।
যানবাহন দুর্ঘটনার কথাই ধরুন। প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রাণ হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। যাদের শুধু সংখ্যা জানা যায়। অমুক জায়গায় বাস দুর্ঘটনায় ৬ জন কিংবা ১০ জন নিহত। এদের অনেকেরই পরিচয় জানা যায় না। অজ্ঞাতপরিচয় বলা হয়। বলা বাহুল্য, এরা সবাই সাধারণ মানুষ। তবে হ্যাঁ, অসাধারণ মানুষ যদি দুর্ঘটনায় পড়ে কোমরে কিংবা হাতে, হাঁটুতে একটু চোট পান তাহলে ২৪টি চ্যানেল যেমন ব্রেকিং নিউজে মেতে ওঠে, তেমনি পত্রপত্রিকায়ও বেশ বড় করে খবর ছাপা হয়। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন মহল থেকে শোকবাণী আসতে থাকে। জানানো হয় শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা। এসব দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে কেউ চিহ্নিত করেন চালকের অপরিপকস্ফতাকে। তবে চালক অপরিপকস্ফ হলেও তার সমস্যা নেই। তিনি লাইসেন্সধারী। তাদের লাইসেন্স দেওয়ার ব্যাপারে হাত রয়েছে অসাধারণ মানুষের। এই লাইসেন্সধারী অনেক চালকই কিন্তু হেলপার। এই হেলপার যখন হেল্প করার বদলে সেলফ ড্রাইভিংয়ে রত হন এবং ড্রাইভিংয়ের সেন্স না থাকলেও লাইসেন্স পেয়ে যান, তখন যাত্রীদের সেন্স থাকার কথা নয়। তারপরও মানুষ গাড়িতে চড়ে, দুর্ঘটনায় পড়ে এবং বড় কিছু একটা ঘটলেই কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। অর্থাৎ চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে। এই যে ঈদ এসেছে, রাস্তায় যানজটে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। যানজটের জটিল যন্ত্রণায় রাস্তায় গাড়ি জমে যাচ্ছে। কাজের সময় কমে যাচ্ছে। কর্মস্পৃহা দমে যাচ্ছে, কিন্তু উপশমে যাচ্ছে না কেউ। টিভির খবরে উপশমের নানান উপায় দেখা গেলেও ভোগান্তির কমতি নেই। নিরাপত্তাহীন রাস্তায় রাস্তা পারাপার হতে গিয়েও পরপারে যাবার আশঙ্কা থাকে পদে পদে।
আবার ভেজালের কথাই ধরুন। ক’দিন আগে পত্রিকায় পড়লাম, ভ্রাম্যমাণ আদালত ১০০০ মণ দুধ ফেলে দিয়েছেন। কারণ মজুদ করা দুধ বিক্রি না হলে পচন রোধে দুধে দেওয়া হয় ফরমালিন। এই দুধই চলে যায় ঢাকার বড় বড় মিষ্টির দোকানে। তৈরি হয় ফরমালিন দেওয়া দুধে নানা মিষ্টান্ন। কেউবা বাচ্চার জন্য কিনে নিয়ে যান এসব দুধ। শুধু দুধই নয়, খাদ্যদ্রব্য থেকে শুরু করে মাছ-মাংস, ফলমূল_ প্রতিটি জিনিসেই ক্ষতিকারক কেমিক্যাল মিশিয়ে ভেজাল করা হচ্ছে। আর এসব খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশুরা। ভোগান্তি হচ্ছে সাধারণ মানুষের। যারা অর্থাভাবে চিকিৎসা নিতেও পারে না। এদের স্থান হয় অধিকাংশ মেডিকেল কলেজের বারান্দায় কিংবা কোনো ক্লিনিকের সাধারণ ওয়ার্ডে। কারণ তারা সাধারণ মানুষ। কোনো ভিআইপি কেবিন বা ভিআইপি হাসপাতালে থাকার সামর্থ্য তাদের নেই। আউটডোরের স্লিপ কেটে অসুস্থ শরীর নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় এসব মানুষের। ভেজাল নিয়ে বলতে গিয়ে ক’দিন আগে এক ভদ্রলোক আমাকে বলছিলেন, এখন আর মৃত্যুর পরে লাশ পচার আশঙ্কা নেই। কারণ যে পরিমাণ ফরমালিন আর বিষযুক্ত খাবার আমরা খেয়েছি এবং খাচ্ছি তাতে মৃত্যুর পরে আমাদের শরীরে পচন ধরবে না।
ঈদ এসেছে। বিভিন্ন এলাকার দেয়ালে দেয়ালে শোভা পায় রঙ-বেরঙের পোস্টার। লেখা থাকে অমুক ভাইয়ের ঈদের শুভেচ্ছা কিংবা ঈদ মোবারক। নিচে লেখা থাকে ‘প্রচারে :এলাকার জনগণ’। অর্থাৎ এখানেও সাধারণ মানুষকে ব্যবহার করা হয়েছে। সবাই বোঝেন, সাধারণ মানুষের নাম দিয়ে নেতা নিজেই এই পোস্টার ছাপান। নির্বাচন এলে জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে এসব নেতা লেকচার দিতে দিতে গলা ফাটিয়ে ফেলেন, কিন্তু তাতে সাধারণ মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন ঘটে না।
সাধারণ মানুষ প্রতিদিন সেই সকালে উঠে কর্মস্থলে যাবার উদ্দেশ্যে বাসের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। কেউবা ডবল ডেকার বাসের হ্যান্ডেল ধরে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অফিসের পথে ছোটেন, আর বাজারে গিয়ে দ্রব্যমূল্যের চাপে বিক্রেতার সঙ্গে ঝগড়া করেন। তবে তেল, গ্যাস, পানি, চাল, ডাল, আটার দাম বৃদ্ধি পেলেও কিছু জিনিস খুবই সস্তা। বক্তা সস্তা, বক্তৃতা সস্তা, অনেক রাজনীতিবিদ সস্তা, বিবৃতিও সস্তা। এরা মানুষকে নানান উপদেশ দিয়ে থাকেন। সাথে বাণীও। কাউকে যদি প্রশ্ন করা হয়, বলুন তো, আমাদের এখানে সবচেয়ে সস্তায় কোন জিনিস পাওয়া যায়?
সহজ উত্তর_ উপদেশ।
উপদেশ কাকে বলে? নিজে যা কখনোই করবে না কিন্তু অন্যকে করতে বলবে, তাহাই উপদেশ। আসলে আমরা যা বলি তা করি না। আর যা করি তা বলি না। অদ্ভুত হিপোক্রেসি, যা থেকে সাধারণ মানুষ মুক্ত। যা বলেন সোজা-সাপ্টা। কাগজের পাতা খুললেই দেখা যায় কত দ্রুত অকালে জীবন ঝরে যাচ্ছে। হত্যা, খুন, গুম লেগেই আছে। এই তো ক’দিন আগে টিভিতে দেখলাম সিসিটিভিতে ধরা পড়া ফিল্মি স্টাইলে খুনের দৃশ্য। আমার এক বন্ধু সেদিন বলছিল, সকালে বাসায় পত্রিকা পড়ার আগেই ‘প্রথম ইন্নালিল্লাহ্ পড়ে নিই’। জিজ্ঞেস করলাম, কেন?
বন্ধু বললো, পত্রিকা খুললেই তো দেখব বিভিন্ন দুর্ঘটনার সংবাদ নইলে মৃত্যু সংবাদ। তাই আগে থেকেই ইন্নালিল্লাহ্ পড়ে নিই।
বলা বাহুল্য, এসব দুর্ঘটনার শিকারও হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। দু’দলের আন্দোলনের সময় দেখা যায় অসাধারণ মানুষেরা বক্তব্য দিচ্ছেন, পিটুনি খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কাঁদানে গ্যাসে কাঁদছেন সাধারণ মানুষ। ক্যাডারদের হাতের পিস্তল বা চাপাতি দেখে ভয়ে দৌড়াচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তারপরও কি তারা নিরাপদ? না। তার অনেক উদাহরণ তো আমাদের সামনেই রয়েছে। অথচ এরাও সাধারণ মানুষকে নিয়ে কথা বলেন।
ঈদে বাড়ি যাবেন? কমলাপুর স্টেশনে হাজার হাজার মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন একটি টিকিটের জন্য। এরাই অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে লঞ্চে ওঠেন। কত যাত্রী উঠল সেটা তাদের কাছে বিবেচ্য বিষয় নয়। যে করেই হোক বাড়িতে যেতে হবে। এসব সাধারণ মানুষ জীবিকার তাগিদে ঢাকায় এসেছেন। ঢাকায় তাদের কোনো ফ্ল্যাট নেই। নেই গুলশান-বারিধারায় আলীশান বাড়ি। এরা অপেক্ষায় থাকেন কবে ঈদ আসবে। বোনাস পাবেন, বেতন পাবেন, মা-বাবা-ভাই-বোনের জন্য নতুন কাপড় কিনবেন। যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী কেনাকাটা সেরে নাড়ির টানে ছোটেন বাড়ি। লঞ্চটি নিরাপদ কিনা, অতিরিক্ত যাত্রী নিল কিনা_ এসব চিন্তা তাদের মাথায় নেই। তাদের একটিই চিন্তা সময়মতো বাড়ি যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে যারা অসাধারণ মানুষ তাদেরই দায়িত্ব এসব সাধারণ মানুষকে নিরাপদে বাড়িতে পেঁৗছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। কারণ সবাই তো সাধারণ মানুষের জন্যই কথা বলছেন।
আমাদের চারদিকে বিভক্তির ছড়াছড়ি। কোথায় বিভক্তি নেই! বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে বিভক্তি, শিক্ষকদের মধ্যে বিভক্তি, চিকিৎসকদের মধ্যে বিভক্তি, সাংবাদিকদের মধ্যে বিভক্তি, শিল্পীদের মধ্যে বিভক্তি। যে বিভক্তিগুলো অনাকাঙ্ক্ষিত। তবে হ্যাঁ, সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো বিভক্তি নেই। তারা ৫টি বছর নীরবে সহ্য করেন। তারপর যথার্থভাবেই রায় দেন। রাজনীতিবিদদের ক্ষমতার স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। ৫ বৎসরের কোর্স। যিনি ভালো করবেন তিনি পাস করবেন। যিনি খারাপ করবেন তিনি ফেল। সাধারণ মানুষ কখনও রায় দিতে ভুল করেন না। তারা মিটিং-মিছিলে নেই। নেই আন্দোলনে। নীরব দর্শক হয়ে প্রত্যক্ষ করেন সব।
সুতরাং বলা যায়, এই মুহূর্তে দেশের সবচাইতে আলোচিত চরিত্র হচ্ছে ‘সাধারণ মানুষ’। অধিক ব্যবহৃত শব্দ হচ্ছে ‘সাধারণ মানুষ’। এদের নিয়েই শুরু হয় ভোটের রাজনীতি, ক্ষমতার লড়াই। অথচ দুর্ভাগ্য হচ্ছে, এই সাধারণ মানুষদের কোনো দল নেই। তারা নির্বাচনে দাঁড়াতে পারেন না। কেউ তাদের কোনো টক শোতে অতিথি হিসেবে ডাকেন না। পত্রিকায় ছাপা হয় না তাদের কোনো বিবৃতি। তবে হ্যাঁ, একটি সময় সাধারণ মানুষ জেগে ওঠেন। সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেন না। নীরব বিপ্লব ঘটিয়ে দেন ব্যালটের মাধ্যমে। আর তখনই বোঝা যায় কে বেশি ক্ষমতাবান। সে জন্যই বলা হয় জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। অর্থাৎ সাধারণ মানুষ।
পাদটীকা :একটি প্রবাদ আছে ‘দশে মিলি করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ’।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে_ কোন কাজ? দশে মিলে আমরা অনেক কাজই করি। সব কাজই কি শুভ? না।
আসুন, দশে মিলে করি আজ সৎ কাজ, শুভ কাজ
কারণ ‘অসৎ হলে রাত্রি-দিন
সোনার খাটেও নিদ্রাহীন,
সৎ হলে শূন্য খাটে
চিন্তাবিহীন রাত্রি কাটে’।