"জন্মের অর্বুদে বসে বসে"…… কাজী নাসির মামুন-এর দীর্ঘ কবিতা

 

//জন্মের অর্বুদে বসে বসে//

এক.
সংসার সভ্যতা আর আগুন..আগুন..যেন এক অঙ্গ ।
বিচূর্ণ শিল্পের মতো দারুণ অস্বস্থিকর; তবু তার গৌরাঙ্গ শরীর
 ……………………সোনার কুহক-পরা সৃজিত স্বপ্নের মতো জেগে আছে ।
আলোর গহনে তাই কুমড়ো ফুলের হলুদাভা ছাই হতে দেখি ।
পলি ও প্লাবন নিয়ে একাকার, শালুক বনের দিকে জল হয়ে যাই ।
গভীর অন্তরতম সাধনা ছাড়াই মেঘদূত উপজীব্য করে বেদনায়
ফলনে ফলনে ভাসি কালিদাস; শুকনো স্রোতের দিকে মুখ করে
……………………নদীর প্রচ্ছদে শুধু আবহ ছড়াইঃ শা শা শা শা; বুক ভরা তার
করুণ কীলক-পরা তারাদের জলছবি, হিরন্ময় যন্ত্র কল্পনার বেহিসাব, কান্না, শ্রুতি ।
অলঙ্ঘ্য উদরে রোজ পুরে দিয়ে সোনার পাঙ্গাস
আমার এখন কেন ঘুম নেই আর ?
আমি কি চঞ্চল পুঁটি ? ডানকিনে মাছ ?
নিভৃত হাওরে তড়পাচ্ছি ?
ভাবছি বিপুলপ্রস্থ জীবনের মানে নীরবতা নয়,
…………………রাত নয় ঘুমের জীবনীকার ?
 
দুই.
এখানে বিধৃত মহাকাল–স্থলদেহ পরিস্থিতি
 ………………কবর মৃদঙ্গ আর বালিহাঁস
নীরন্ধ্র দৃশ্যের মতো আবর্ত রচনা করে নাগরদোলায় ।
তখন আনন্দ হয় নির্বাণ; নদী ও পাখির ক্রেঙ্কারে যেন সুখ
কাতল মাছের পিঠে শিশুর স্বপ্নের মতো রূপালী ঝিলিক ।
এইসব জন্মজলা নদীঘোর আগুনে পুড়িয়ে এক ধূসর শেয়াল
কাঁধে করে নিয়ে যায় শ্রাবননৌকার জলছবি,
 ………………ভাগ্যলিপি পরাহত প্রেমিকের ।
তার জন্ম নির্মম শুল্কের মতো দুরন্ত চতুর এক জীবের নিকট
ধরাশায়ী; আহা কি সজীব জন্তু !
 ……………ধূর্ত আর মাধবী প্রকাশ এই পৃথিবীর !
সে এক নিপুণ কারুকাজ ! তার লেজ জলে ভরা গর্তে ঢুকে
পদানত জটিল কাঁকড়া ধরে আনে; আর
গোপন ডাঙায় নিয়ে সে খায়; শোনিত চক্রে সেই ইতিহাস,
মৃত্যু-পাদটিকা
বাতাসে নির্ভার বেঁচে থাকে ।
জন্মের অর্বুদে বসে বসে আমি ওইটুকু যন্ত্রণা, রঙ্গন-লাল জ্যান্ত অভিশাপ
চেয়ে চেয়ে দেখি; বুড়ো লাউ কেটে নিয়ে
বুকের সবজিটুকু ফেলে দিই; বাজাই..বাজাই ডুগডুগি….
দাউ দাউ জ্বলে ওঠে সময় গ্রন্থনা চাঁদ পাড়ার কারেন্ট আর নীল ছবি
আশ্রম সুড়ঙ্গ আর লাল গাভী, যার
সরু ঠ্যাং প্যাঁচিয়ে প্যাঁচিয়ে ওলানের দুধ খাবে এমন রূপক স্বপ্ন দেখে
চিকন দাঁড়াশ সাপ । আর জ্বলে বুকভরা নিমাই সন্নাস…
ধনে পাতা হাতে নিলে যে-সুঘ্রাণ আত্মীয়সুলভ মিহি বার্তা বয়ে আনে
প্রাণের ওপর, তার মতো সহৃদয় নম্র স্বদেশ একান্ত সহযোগে
গান হয়ে যায়, আনে সম্পর্ক সহায়; দেখি অবিশস্ত বেনিয়ারা
মৌলিক সৃষ্টির পাশে নিরাকৃতি বালকের মতো
আমার দেশকে নিয়ে খেলছে; টিকটিকির ডিমের মতন
একটি নিরন্ন কাঠি–পাটের শোলায় ওকে বসিয়ে ফুৎকারে
ওপরে তুলছে আর নামিয়ে আনছে
যখন যে-ভাবে ইচ্ছে; তবু এই ক্রম পরিনতি তন্ন তন্ন করে
নিষ্কন্ট উদ্ধার খোঁজে; নিজের ভেতর আমি দাঁতাল স্বপ্নের পাশে
 ………………………………..ব্রিজ হয়ে বসে থাকি ।
দেখি, দেশ–এই স্বর্ণমাতৃকা আমার
অনেক বিভূতিসহ কান্নার সোনালি
আঁচড়ের মতো; খচিত কম্পন হয়ে নামছে আমার বুকে; বলছে, সাবাস !
                                               বৌচি খেলা শেষ হলে তুমি
 ……………… কোথাও যেও না সোনা; তোমার হৃদয় আজ গোল্লাছুটে;
ফড়িঙের বিজন বিদেশ মাতিয়ে রাখছে ।
ধরে ফেলো কানামাছি । নইলে সে হারাবে কোথাও ।
নাগলিঙ্গমের ফণা হাতে
আমি সেই হারানো খোলস ?
পাতাকুড়ানির শেষ ব্যথা
সবুজ ছালায় ভরে বয়ে নিয়ে যাই ?
উলটকম্বল গাছে বসে শুধু প্যাঁচার আখ্যান শুনিঃ
 …………… আসুন ক্যামোথেরাপি । ঘৃতকুমারীর
…………………… সরল সঙ্গীত এই প্রায় বন্ধ হলো ।
এবার সঙ্গম যন্ত্র কল্পনার । মুঠোভর্তি যোগাযোগ বহুজাগতিক ?
তিন.
আর কত তর্কনাচ টিভির এন্টেনা ?
হৃদয় বৃত্তির
নতুন নতুন ভায়োলেন্স ? বিশ্বকাপ হলাহলে
এ দেশ হেরেছে– সেই বিষাদের করুণ ক্রিকেট
গ্রামের সুজলা সনাতনে ?
ব্যান্ডের ঋত্বিক আমি দৃশ্যমান কলাপাতা সবুজ ছাতার মতো
…………………মাথায় নিয়েছি, বৃষ্টি আমাকে ছুঁয়ো না ।
কুয়োতলা, আমাকে ছুঁয়ো না ।
শান্তির সজল
বালতি আমার, দড়ি বাঁধা,
ছুঁয়ো না আমাকে ।
ফুটো কলসের দুঃখ নিয়ে
কেবল যৌবন যার লীলাবতী– সেই প্রেম, জল নিবারণ
এখন কোথায় ? মরা শামুকের মতো
ঝিনুক রাজ্যের জলকন্যাদের হৃদয়ের পা কেটে দেখেছি
ওরা নারী, মিস্‌ডকল পরিবৃত ক্লিক করা সময়ের ডটকম ;
ক্ষুণ্নি, প্রেম, সুপ্তি , ক্ষুধা , শরীর, নিতম্ব আর মোবাইল হাতেই
কথার শ্রাবণ হয়ে ঝরে গেছে । ফলিত যৌবন
…………তার ছায়াসমতটে আজ বড়ো রিরাপত্তাহীন ।
ফেলে গেছে কসকোর গন্ধ বিফলতা,
 …………উপচানো হাসির মোড়ক পুকুরের ঘাটে ঘাটে ।
গন্ধরাজ তেলের সুরভিমাখা
বানিজ্যে লোপাট ওই জীবনের কুসুম শরীর
কত ভালো ছিলো । হে বর্ষাতি ছড়াকার,
তাহলে জীবন মানে হলুদ কদম ফুল ? নম্র বালিকার মতো চুলছাট ?
অভিলাষ কেটেকুটে কিছুটা স্পন্দন ধরে রাখা ? আর তার ব্যগ্র উচাটন ?
যেমন আমরা মাথা নাড়ি
উচ্ছল বিড়ম্বনায় ? মৃত্যুর মানে কি ?
পাখির স্বাস্থ্যের মতো নরম অভিবাদন ? কবরের মানে
শরীরের উপান্ত শহর ? অনিঃশেষ অন্ধকারে পল্লবিত
গার্মেন্টস, সুতার কারখানা ?
আর সব সেলাই মেশিন
সাদা কাফনের
বুনন রীতিকে জানে ? জানে অবিরল বৃষ্টি, ঝমঝম মৃত্যু-কলরব ?
শতেক টাকার লাল রিবনে জীবন বেঁধে নিয়ে
কেবল সেখানে যায় জন্ম-যোগিনীরা যারা আগুনে পুড়ছে
………আর নৃত্য পরাহত নায়িকার মতো ছবি হয়ে আছে
 ………………মুখরিত গ্রামের পৃষ্ঠায় ।
তাই ভাবি, চ্যবন ঋষির মতো উঁই ঢিঁবি বুকে নিয়ে দেহ কামনার
রেবন্তের সততায় ছুরি মেরে হয়ে যাই বিশ্বাসঘাতক; আর বলিঃ
সুকন্যার যৌবনে নিপুণ
হে মায়া, তুমুল নাগরিক সরোবর, পৃথিবী কি জানে কোথায় নিঃশেষ হবে দৌড় ?
খরগোশ ঘুমিয়ে পড়বে আর সীমান্ত কম্পাস জ্বেলে দেবে
মন্থর কচ্ছপ, এক সবুজ প্রেমিক, ধান-সুরুজের মাঝপথে হঠাৎ চড়ুই আর
 ……………………………………………………. একটি ছাতিম গাছ ?
(নোটঃ এখানে লাইন এলাইনমেন্ট ঠিক রাখার জন্য আমি ডট ডট ব্যবহার করেছি । মূল কবিতায় ডট ডট নেই )

 

রেটিং করুনঃ
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars ( votes, average: ৫.০০ out of ৫)
Loading...
কাজী নাসির মামুন- র আরো পোষ্ট দেখুন