হে নটরাজ এবার তোমার নাচন থামাও

হে নটরাজ, এবার তোমার নাচন থামাও।
আর কতকাল নাচবে প্রভু? নাচন তোমার ভাল্লাগে না;
আর কতকাল?
আর কতকাল? এবার প্রভু ক্ষান্ত দেবে?
এখন তুমি আমায় ছাড়ো আমার কাছে।

আমার শরীর তোমারই মাল? তাও নিয়ে নাও,
ইচ্ছা হলে তাও নিয়ে যাও-
কেবল তুমি আমায় ছাড়ো আমার কাছে।
আমার দুঃখ আমার ঈর্ষা
আমার সেতার আমার শিরীষ-এবার তোমার নাচন থামাও।
এসব তোমার বিষয় আসয়? তোমার জিনিস? সব নিয়ে নাও।
আমার যত প্রশ্ন ছিল নিরুত্তরেই ফিরিয়ে নিলাম;
কোরান-কালো জিজ্ঞাসা আর ভূ- স্মৃতি,
কাঙ্গাল সকল সাব-সমাচার
১/১-এ হেয়ার স্ট্রিস্টের জানালা দিয়ে গড়িয়ে দিলাম।
তোমার বিষয়
তোমায় দিলাম। এবার প্রভু রেহাই দাও হে, রেহাই দেবে?

হে নটরাজ, রঙবাজি তো ঢের করেছো, আর কতকাল?
এখন তুমি আমায় ছাড়ো আমার কাছে।
সবটা তোমার জমিদারি? তাই নাকি হে? সবটা তোমার?
আমার আমি তোমার প্রজা?
তবে আর কিÑতাও নিয়ে নাও। কেবল তোমার পায়ে পড়ি,
তোমার নাচন থেকে এখন আমায় বাঁচাও।
হে নটরাজ, এবার তোমার নাচন থামাও ॥

ডিসেম্বরের বেলা
ডিসেম্বরের বেলা দেখতে দেখতে টেনে নেয় পাখা।
সূর্য পুরুষটি রোগা হাড্ডিসার, দিনমান গতরটা কুয়াশায় ঢাকা,
কখনো কখনো কাঁথা ছিঁড়ে গেলে পানসে রোদের ঘোলা জল
দেখা যায়, তাও চেটে খায়। কররেখা করে টলমল;
কিছুই তো করা হলো নাকো।
সন্ধ্যার নিয়মে আসে সন্ধ্যাকাল, সন্ধ্যাকাল রাত্রিতে গড়ায়।
‘জাগো’- এই অনুরোধ করে এক স্বপ্ন সাবালকদের ঠাসা ভিড়ে
কোথায় গা ঢাকা দিল। কোথায় যে খুঁজি তাকে! চেনা নেই রাস্তাঘাট,
যাইনি তো মাঠে নদীতীরে।
ঘুমের অন্তর্গত ঢুলুঢুলু জাগরণে হাই তুলি, খাঁ খাঁ শূন্য বুকে
ভয় পেয়ে ফের ঘন ঘুমের নিভৃতে ঢুকি। চোখের সুমুখে
দেওয়ালে বন্ধ ঘর, বারান্দা কি রক নেই, শুধু ঘেরা ঘর
ঘরের বাহিরে নেই, চারিদিকে দেখি শুধু ঘরের ভিতর।
হামাগুড়ি দাও আর এপিঠ ওপিঠ করো, ইচ্ছে হলে চিৎ হয়ে থাকো।
দিন কাটে, দিন-চাপা চুল থেকে রঙ ঝরে : কিছুই তো করা হলো নাকো।

মাঠের রাক্ষুসে হাঁয়ে শাঁসজল নিঙড়ে দিয়ে ভাগচাষী ছিবড়ে হয়ে ফেরে,
শাঁসজল অন্যদের খাদ্যদ্রব্য হয়ে ফের পাড়ি দেয় অচেনা বন্দরে।
নিঙড়ানো ফাঁকা চাষা অবশিষ্ট হাড়গোড় দেশমাতৃকার পায়ে দেয় অর্ঘ্যবলি
তুমি ভেবে রাগ করো, ঘুরে দ্যাখো ক্রোধটারই এ-গলি ও-গলি,Ñ
এইসব চাষাভুষো কোনোদিন ফেলবে না সশব্দ প্রবল থুথু? এইসব কালোকিষ্টি
মনুষ্যছায়ারা কবে শরীরপ্রাপ্ত হবে? পদাঘাত দেবে কবে? কবে দেবে অনাছিষ্টি?
ঘরে বসে ভেবে ভেবে প্রেশার বাড়িয়ে তোলো সুগারটা হাই করে রাখো।
ক্রোধ ক্রমে বিরক্তিতে খ্যাক করে, কিছুই তো করা হলো নাকো।
কঙ্কালের দেহতাপে কাঁচামাল পাকে, পাকা পণ্যে পুণ্যের শহর
টাল খায়। সব তাপ দিয়ে থুয়ে হিমদেহ কঙ্কালেরা শক্ত হিমতর
শয্যার জন্যে দিন গোনে। এইসব কঙ্কালের কাঠামোতে সেঁটে
দিতে হবে রক্তমাংস। আর কতকাল পায়ে চেটে
বেড়াব সায়েবদের? ঝড় তুলে রেষ্টুরেন্টে, পত্রিকায়, ব্যস্ত সেমিনারে সায়েবদের কত ছদ্ম বাকি? হঠাৎ কারেন্ট গেলে ইট চাপা বছর আঁধারে
এসে ফিসফিস করে, সব বন্ধ নারিন্দার ট্রাফিক জাম, নেই আর এতটুকু ফাঁকও।
বাখোয়াজি করে করে দিন গেলো, রাত কাটে, কিছুই তো করা হলো নাকো।

পদ্মানদীর মাঝি শ্রীচ্যুত কুবের এই জলের শ্যাওলা হয়ে ডাঙায় নেতিয়ে পড়ে রোজ
কোনো কোনো দিন খুব মাথা তুলি, একবার করে দেখি খোঁজ
তার জলেফাঁপা সব আঙুলে ফাঁক দিয়ে তারই ধরা শাদা ইলিশেরা
কী করে গলিয়ে পড়ে, কেন তার শূন্য দুই হাতে ঘরে ফেরা?
মাছ ধরা হয়ে গেলে মাছ আর তার মধ্যে কেন জোড়াহীন বিচ্ছিন্নতা?
এইসব ভেজা হাত আঙ্গুলিকে শক্ত করে দিতে চাই। অনন্তকালের সব প্রথা
ভেঙে ফেলি। উত্তরে অবসাদ। ধারালো কলমে জিভে যত হাঁকো ডাকোÑ
সংঘাত স্থগিত থাক। জীবন তো একবারই। কিছুই তো করা হলো নাকো ॥

ডিলান টমাস
আলো ভেঙে ভেঙে পড়ে যেখানে কোনো সূর্যই প্রজ্বলিত নয়
আলো ভেঙে ভেঙে পড়ে যেখানে কোনো সূর্যই প্রজ্বলিত নয়;
যেখানে সমুদ্র অপ্রবাহিত, হৃদয়ের জল
জোয়ারে এগোয়;
এবং, জোনাকি মাথায় কোরে অসম্পূর্ণ অশরীরিগণ,
আলোকের উপাদান
মাংসে সজ্জিত করে যেখানে কোনোই মাংস সাজায় না হাড়।

মোমবাতি উরুদের মাঝে
যৌবন এবং বীজ উত্তপ্ত করে আর দগ্ধ করে বয়েসের বীজ;
যেখানে কোনো বীজই আলোড়িত নয়,
মানুষের ফল হলো নিরুদ্বিগ্নÑ সমতল তারায় তারায়,
চকচকে, ডুমুরের মতো;
যেখানে কোনো মোমই নেই, মোমবাতি আপনার লোমকে দেখায়।

প্রত্যুষ ভেঙে পড়ে চোখের পেছনে;
করোটির মেরু আর পায়ের আঙ্গুল থেকে বাতাসিত রক্ত
সমুদ্রের নিঃশব্দে চলে;
অনাবৃত, রক্ষিত নয়, আকাশের আকস্মিক প্রবাহেরা সব
নলে বহির্গত
একটি হাসির মধ্যে কান্নার তৈলাক্তকে ঈশ্বরিত কোরে।
খাপে খাপে রাত্রি আবর্তিত,
কতিপয় অন্ধকার চাঁদের মতো, পৃথিবীর সীমা,
দিবস আলোক করে হাড়,
যেখানে কোনোই শীত নেই, চামড়া ছাড়ানো সব ঝড় খোলে শীতের গ্রন্থন;
চোখের পাতা থেকে দোলে বসন্তের ছবি।

আলো ভেঙে ভেঙে পড়ে গোপন বিস্তারে,
ভাবনার শীর্ষে শীর্ষে যেখানে ভাবনারা বৃষ্টিতে শোঁকে;
যুক্তিরা যখন গতায়ু,
চোখে হয় পৃথিবীও মাটির গোপন,
সূর্যে রক্ত লাফ দিয়ে ওঠে,
ভোর অবরুদ্ধ হয় নির্ধারিত নষ্ট সব, প্রান্তরের ’পরে।