বনভূমির ছায়া

কথা ছিল তিনদিন বাদেই আমরা পিকনিকে যাবো,
বনভূমির ভিতরে আরো গভীর নির্জন বনে আগুন ধরাবো,
আমাদের সব শীত ঢেকে দেবে সূর্যাস্তের বড় শাল গজারী পাতায়।

আমাদের দলের ভিতরে যে দুইজন কবি
তারা ফিরে এসে অরণ্য স্তুতি লিখবে পত্রিকায়
কথা ছিল গল্পলেখক অরণ্য যুবতী নিয়ে গল্প লিখবে নতুন আঙ্গিকে !

আর যিনি সিনেমা বানাবেন, কথা ছিল
তার প্রথম থীমটি হবে আমাদের পিকনিকপ্রসূত।

তাই সবাই আগে থেকেই ঠিকঠাক, সবাই প্রস্তুত,
যাবার দিনে কারো ঘাড়ে ঝুললো ফ্লাস্কের বোতল
ডেটল ও শাদা তুলো, কারো ঘাড়ে টারপুলিনের টেণ্ট, খাদ্যদ্রব্য,
একজনের শখ জাগলো পাখির সঙ্গীত তিনি টেপরেকর্ডারে তুলে আনবেন

বনে বনে ঘুরে ঠিক সন্ধ্যেবেলাটিতে
তিনি তুলবেন পাতার মর্মর জোড়া পাখির সঙ্গীত !
তাই টেপরেকর্ডার নিলেন তিনি।

একজন মহিলাও চললেন আমাদের সঙ্গে
তিনি নিলেন তাঁর সাথে টাটকা চিবুক, তার চোখের সুষমা আর
উষ্ণ শরীর !
আমাদের বাস চলতে লাগলো ক্রমাগত
হঠাৎ এক জায়গায় এসে কী ভেবে যেনো
আমি ড্রাইভারকে বোললুম : রোক্কো-

শহরের কাছের শহর
নতুন নির্মিত একটি সাঁকোর সামনে দেখলুম তীরতীর কোরছে জল,
আমাদের সবার মুখ সেখানে প্রতিফলিত হলো;
হঠাৎ জলের নীচে পরস্পর আমরা দেখলুম
আমাদের পরস্পরের প্রতি পরস্পরের অপরিসীম ঘৃণা ও বিদ্বেষ !

আমরা হঠাৎ কী রকম অসহায় আর একা হয়ে গেলাম !
আমাদের আর পিকনিকে যাওয়া হলো না,
লোকালয়ের কয়েকটি মানুষ আমরা
কেউই আর আমাদের এই ভয়াবহ নিঃসঙ্গতা একাকীত্ব, অসহায়বোধ
আর মৃত্যুবোধ নিয়ে বনভূমির কাছে যেতে সাহস পেলাম না !

রেটিং করুনঃ
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (No Ratings Yet)
Loading...
আবুল হাসান- র আরো পোষ্ট দেখুন