প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার

( ১৯৬৩ সালে রচিত এবং ১৯৬৪ সালে ‘হাংরি বুলেটিন’-এ প্রকাশিত এই কবিতাটির জন্য মলয় রায়চৌধুরী  গ্রেপ্তার হন– সাহিত্যে অশ্লীলতা ও সমাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে । তাঁর বিরুদ্ধে ৩৫ মাস ব্যাপী মকদ্দমা চলে চলে। কলকাতার নিম্ন আদালতে তাঁর সাজা হলেও উচ্চ আদালতে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন।  মলয়ের পক্ষে আদালতে সাক্ষী ছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, তরুণ সান্যাল, জ্যোতির্ময় […]

অন্নবিচার

মহিলাদের পোশাক পালটাবার মাংসল গন্ধে বুঁদ যে-ঘরটায় এক ডিভোরসি বোলতাবধু ডিম পার্ক করেছেন শহুরে পাখিদের ছ্যাঁচড়া জঞ্জালের ভজকট ভাষা ডানায় বয়ে ভেতরে ঢুকে ঝোড়ো ঝড় নিজে হাতে দরোজা বন্ধ করে দিয়ে দ্যাখে জোরকদমে চর্চা চলছে দিলদরিয়া ভালোবাসার ঘিজতাঘিজাং যদিও ফাটলপ্রিয় ছারপোকারা নিজেদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল যে-যার নিজের মতন ভালো বা খারাপ হবার স্বাধীনতার দরুন ছাদ-উঁচু […]

লিপিড প্রোফাইলের লিব্রেটো

কোলেসটেরলে তুই কবে থেকে লুকিয়ে রয়েছিস অবন্তিকা রাত দু’টোয় জেগে উঠে কড়া নাড়িস বুকে ট্রাইগ্লিসারাইডে তুই কবে থেকে ওড়নায় মুখ ঢেকে অবন্তিকা ছ’তলায় উঠতে দিসনা সিঁড়ি বেয়ে প্রস্টেট গ্ল্যান্ডে তুই কবে থেকে চেপে বসে গেলি অবন্তিকা বার-বার ঘুম ভাঙিয়ে ডাক দিয়ে চলে যাস রাতে ইউসেনোফিলিসে তুই কবে চলে এলি অবন্তিকা কাশির দমকে তুই যখন তখন […]

মলয় রায়চৌধুরী

মলয় রায়চৌধুরী (জন্ম ২৯ অক্টোবর ১৯৩৯ – ) [Malay Roychoudhury] বিশিষ্ট বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, প্রাবন্ধিক, অনুবাদক এবং সর্বোপরি হাংরি আন্দোলন –Hungryalism– তথা বাংলা সাহিত্যে প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার জনক। আধুনিক বাংলা কবিতার ইতিহাসে তিনি এক বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব। প্রচণ্ড বৈদুতিক ছুতার কবিতাটির জন্য গ্রেফতার ও কারাবরণ করেন। শয়তানের মুখ, জখম, ডুব জলে যেটুকু প্রশ্বাস,নামগন্ধ চিৎকার সমগ্র,কৌণপের লুচিমাংস অ্যালেন […]

পাঁকের মৃণ্ময়ী

তুই কি সত্যিই কুচ্ছিত ? সবাই তো তাই বলে  : পাঁকের মৃণ্ময়ী ! কোলে কালি চোখ তোর এত ছোট কী করে দেখিস চেয়ে ? ঠোঁটও বড্ড পুরু, বুক-পেট-কোমর তো একাকার , থলথলে মাংসঢলা বডি পিছন থেকেও তোর ঢিবি বুক দেখতে পেয়ে হাসাহাসি করে লোকে তাছাড়া শরীর জুড়ে নিমপাতা মাখা-গন্ধে মাছিরা বাসর পাতে চামড়ায়, এমনই পচন […]

নুন ও নিমকহারামি

তুই তো আমার ঘাম জিভ দিয়ে ছুঁয়ে বলেছিলি অবন্তিকা, ‘আহ কি নোনতা অন্তরতমের প্রাণ– পুরুষালি ঘ্রাণ’ ; সেইদিন, লক-আপ থেকে আদালতে হাতে হাতকড়া আর কোমরে দড়ির ফাঁসে বাঁধা, হেঁটেছি ডাকাত-খুনিদের সাথে, রাজপথে সার্কাসপ্রেমীদের ভিড়– বিশ্বাসঘাতক যারা, আমার বিরুদ্ধে আদালতে রাজসাক্ষী হয়েছিল, তারা কাঠগড়া থেকে নেমে বলেছিল, নুন তো পায়নি, মিষ্টি ছিল আমার ঘামেতে : তাই […]

রাবণের চোখ

শৈশবের কথা। সদ্যপ্রসূত কালো ছাগলির গা থেকে রক্ত-ক্বাথ পুঁছে দিতে-দিতে বলেছিল কুলসুম আপা, ‘এ ভাবেই প্রাণ আসে পৃথিবীতে ; আমরাও এসেছি একইভাবে’। হাঁস-মুর্গির ঘরে নিয়ে গিয়ে আপা আমার বাঁ-হাতখানা নিজের তপ্ত তুরুপে চেপে বলেছিল, ‘মানুষ জন্মায় এই সিন্দুকের ডালা খুলে’। রাবণের দশ জোড়া চোখে আমি ও-সিন্দুক আতঙ্কিত রুদ্ধশ্বাসে দ্রুত খুলে বন্ধ করে দিই ।

মেরু বিপর্যয়

অবন্তিকা, হিপি বিদেশিনী, স্লিপিং ব্যাগেতে তোর চুপচাপ ঢুকে যেতে দিয়েছিলি শুনে আমি কবি, টাইম পত্রিকা ফোটো ছাপিয়েছে , বিটনিকরাও লিখেছে আমার কথা বড়ো করে তাদের কাগজে– হ্যাশ টেনে ভোম মেরে দু-ঠ্যাং ছড়িয়ে সে-প্রণয় গিঁথে আছে চেতনায় কবিতা ভাঙিয়ে তোর শ্বাস না-মাজা দাঁতের ভাপ সোনালি শুকনো চুল ধরে বুকে  ময়লাটে তাপে মুখ গুঁজে কবিত্ব করেছি– বলেছিলি, […]

চলো গুলফিঘাট

কেউ মরলেই তার শব ঘিরে মৃত্যু উৎসব ছিল ইমলিতলায় বয়ঃসন্ধির পর দেহের ভেতর অহরহ উৎসব চলে তাই তারা মারা গেলে কান্নাকাটি চাপড়ানি নয় বিলাপ কেবল শিশুদের জন্য করো বাচা-বুতরুর জন্য কাঁদো যত পারো শবখাটে চারকোণে মাটির ধুনুচি বেঁধে গুলফি ঘাটের শমসানে ঢোলচি ঢোলকসহ সানাই বাজিয়ে নেচে আর গেয়ে পাড়ার ছেলেরা কুড়োতুম ছুঁড়ে-ফেলা তামার পয়সা প্যাঁড়া […]

দ্রোহ

এ নৌকো ময়ূরপঙ্খী তীর্থযাত্রী ব্যাঁটরা থেকে যাবে হরিদ্বার এই গাধা যেদিকে দুচোখ যায় যায় যাযাবর ঘাট বা আঘাটা যেখানে যেমন বোঝে ঘুরতে চাই গর্দভের পিঠে মাথায় কাগুজে টুপি মুখে চুনকালি পিছনে ভিড়ের হল্লা