একটু উষ্ণতার জন্য-৪

১১-১২. বলা নেই কওয়া নেই বলা নেই কওয়া নেই, সেদিন সাত-সকালে শৈলেন এসে উপস্থিত। শৈলেন ঘোষ। গেট খুলে ঢুকতে ঢুকতেই চেঁচিয়ে বলল, দাদা, খাওয়ার কি আছে? ভীষণ ক্ষিদে পেয়েছে। যখন কাছে এসে পেয়ারাতলায় চেয়ার টেনে বসলো তখন বললাম, কি খাবে বল? ও বলল, কি খাব না তাই বলুন? আছে? বললাম, কি চাই? ইতিমধ্যে হাঁকাহাঁকিতে লালি […]

একটু উষ্ণতার জন্য-৩

০৯-১০. ছুটির একটা চিঠি কালকের ডাকে ছুটির একটা চিঠি এসেছিল। ছুটি লিখেছিল, আপনি লিখেছেন যে আমার তৈরি সোয়েটার গায়ে দিলেই আপনার মনে হয় যে আমি আপনাকে দুহাতে জড়িয়ে আছি। এ কথা ভাবতেই ভালো লাগছে। আমি এবার থেকে প্রতি বছর আপনাকে একটা করে সোয়েটার বুনে দেব, আমি যেখানেই থাকি না কেন। আপনি কেমন আছেন, আগের থেকে […]

একটু উষ্ণতার জন্য-২

০৬-৮. শেষ রাতে আমি শেষ রাতে আমি একবার উঠেছিলাম। ঐ পাশের বাথরুমে গেছিলাম। ছুটির ঘর থেকে সাড়াশব্দ পেলাম না। অসাড়ে ঘুমোচ্ছে শেষ রাতে। আবার গিয়ে যে শুলাম, সে ঘুম ভাঙল ছটার সময়। বালিশের নীচ থেকে হাতঘড়িটা বের করে সময় দেখলাম, তারপর বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লাম। এখনো বেশ ঠাণ্ডা। পুবের আকাশ পরিষ্কার হয়েছে, কিন্তু রোদ ওঠেনি। […]

একটু উষ্ণতার জন্য

০১-৫. দিনের শেষ গাড়ি দিনের শেষ গাড়ি মরা বিকেলের হলুদ অন্ধকারে একটু আগে চলে গেছে। এখন প্লাটফর্মটা ফাঁকা। এখানে ওখানে দু-একজন ওঁরাও মেয়ে-পুরুষ ছড়িয়ে আছে। কার্নি মেমসাহেবের চায়ের দোকানের ঝাঁপ বন্ধ হয়ে গেছে। আসন্ন সন্ধ্যার অস্তমিত আলোয় প্লাটফর্মের ওপারের শালবনকে এক অদ্ভুত রহস্যময় রঙে রাঙিয়ে দিয়েছে। চারদিক থেকে বেলাশেষের গান শোনা যাচ্ছে। স্টেশানের মাস্টারমশাই বললেন, […]

কুকুর-মেকুরের গল্প

মামা। অ মামা! দেকিচো, এরা ক্যানাল বানানও জানে না গো! ফটিক বলল, তার একমাত্র, শহুরে মামা পলানের পাঞ্জাবির পকেট আচমকা টেনে ধরে। কী কইরতেচিস ছোঁড়া। পাঞ্জাবিটা ছিঁড়বি নাকি? লজ্জা পেয়ে ফটিক বলল, না। কিন্তুক, ওই দেকো। একটু আগেই জাদুঘর থেকে বেরিয়েছে ওরা দু-জনে। কাকদ্বীপ থেকে কলকেতাতে এই প্রথমবার বেড়াতে-আসা বোনপোকে হাওড়া হাটের গামছার নগণ্য ব্যাপারি […]

ঋক-১

০১. কীসের গন্ধ বেরোচ্ছে? ঋক বলল। –কই? না তো! তৃষা বলল। ওপরে নাক তুলে। –স্পষ্ট পাচ্ছি যে, আমি। –কী জানি! কীসের গন্ধ! –নিশ্চয়ই গ্যাসের। গ্যাস সিলিণ্ডার লিক করেছে। শুনেই তৃষা লাফিয়ে উঠল বসবার ঘরের সোফা ছেড়ে। আতঙ্কিত গলায় একটি সংক্ষিপ্ত আওয়াজ করে রান্নাঘরের দিকে দৌড়োল। পরক্ষণেই বাড়ির পেছন দিকে গিয়ে উৎকণ্ঠিত গলায় জোরে ডাকল, মুঙ্গলীরে! […]

ঋক-২

৪-৮. রাত প্রায় ভোর ০৫. রাত বোধ হয় প্রায় ভোর হয়ে এল। নদীর দিক থেকে কী একটা পাখি ডাকছে থেকে থেকে। শেয়াল ডাকল একসঙ্গে অনেকগুলো। পাশ ফিরে শুল তৃষা। পরপুরুষের বিছানা, লেপ, বালিশে অনভ্যস্ত কিন্তু স্নিগ্ধগন্ধে এবং পরপুরুষের শরীরের ওম-এর উষ্ণতামাখা বিছানাতে যে, শুয়ে আছে একথা ভাবতেই ভীষণ উত্তেজিত বোধ করছিল ও। ওর পায়ের কাছে […]

যাওয়া-আসা-১

কমলা সবুজকে একটা প্লাস্টিকের ওয়াড্রোব কিনে দিয়েছিল। এটা যে, কমলাই কিনে দিয়েছিল এ-কথাটা সবুজ সাহস করে হাসিকে বলতে পারেনি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ও ঠেকে শিখেছে যে, নিজের ভালোর জন্যে, সংসারের শান্তির জন্যে কিছু কিছু মিথ্যেকথা বলা ভালো। মানে, শুধু ভালোই নয়, তা না বললে, সমূহ বিপদ। আজ অফিস থেকে ফিরে, নোনা-ধরা দেওয়ালে ঝুলতে-থাকা ওয়াড্রোবটা […]

যাওয়া-আসা-২

অফিস থেকে বেরোতে বেরোতেই প্রায় পাঁচটা বেজে গেল। অবশ্য খাতায়-কলমে ওদের অফিস সাড়ে দশটা থেকে সাড়ে পাঁচটা অবধি রোজ-ই-সপ্তাহে ছ-দিন। কিন্তু এগারোটার আগে কেউই বড়ো একটা আসে না। কেউ কেউ তো সাড়ে এগারোটায় আসে–আর বিকেলে সাড়ে চারটের পর-ই অফিস ফাঁকা হয়ে যায়। আজ দেরি হয়ে গেল, কারণ সাহেব দেরি করে উঠলেন। সবুজ ওঁকে বলে একটু […]

যাওয়া-আসা-৩

সবুজ অফিসে চলে যাওয়ার পর, হাসি খোকাকে স্কুলে পাঠিয়ে রান্নাঘরে ঢুকেছিল। ভালো করে কচুর শাক রেঁধেছিল ইলিশমাছের মাথা দিয়ে। টক রেঁধেছিল। কালকের ঝোল ছিল। দু টুকরো গাদার মাছে নুন-হলুদ মাখিয়ে রেখেছিল, ফণী এলে গরম গরম ভেজে দেবে। ফণীর সকালে আসার উপায় নেই। আসতে আসতে সেই একটা-দেড়টা। দোকানের পেছনের উঠোনে টিউবওয়েলে চান করে এতখানি পথ ভাদ্রমাসের […]