কেউ কথা রাখেনি

কেউ কথা রাখেনি, তেত্রিশ বছর কাটলো, কেউ কথা রাখেনি ছেলেবেলায় এক বোষ্টুমী তার আগমনী গান হঠাৎ থামিয়ে বলেছিল শুক্লা দ্বাদশীর দিন অন্তরাটুকু শুনিয়ে যাবে তারপর কত চন্দ্রভূক অমাবস্যা চলে গেলো, কিন্তু সেই বোষ্টুমী আর এলোনা পঁচিশ বছর প্রতিক্ষায় আছি। মামা বাড়ির মাঝি নাদের আলী বলেছিল, বড় হও দাদাঠাকুর তোমাকে আমি তিন প্রহরের বিল দেখাতে নিয়ে […]

কঙ্কাল ও শাদা বাড়ি

শাদা বাড়িটার সামনে আলো-ছায়া-আলো, একটি কঙ্কাল দাঁড়িয়ে এখন দুপুর রাত অলীক রাত্রির মতো, অররণা রয়েছে খুব ঘুমে- যে-রকম ঘুম শুধু কুমারীর, যে ঘুম স্পষ্টত খুব নীল; যে স্তনে লগৈনি দাঁত তার খুব মৃদু ওঠপড়া তলপেটে একটুও নেই ফাটা.দাগ, এ শরীর আজও ঋণী নয় এই সেই অরুণা ও রুনি নাম্মী পরা ও অপরা সুখ ও আসুখ […]

উত্তরাধিকার

নবীন কিশোর, তোমায় দিলাম ভূবনডাঙার মেঘলা আকাশ তোমাকে দিলাম বোতামবিহীন ছেঁড়া শার্ট আর ফুসফুস-ভরা হাসি দুপুর রৌদ্রে পায়ে পায়ে ঘোরা, রাত্রির মাঠে চিৎ হ’য়ে শুয়ে থাকা এসব এখন তোমারই, তোমার হাত ভ’রে নাও আমার অবেলা আমার দুঃখবিহীন দুঃখ ক্রোধ শিহরণ নবীন কিশোর, তোমাকে দিলাম আমার যা-কিছু ছুল আভরণ জ্বলন্ত বুকে কফির চুমুক, সিগারেট চুরি, জানালার […]

ইন্দিরা গান্ধীর প্রতি

প্রিয় ইন্দিরা, তুমি বিমানের জনলায় বসে, গুজরাটের বন্যা দেখতে যেও না এ বড় ভয়ঙ্কর খেলা ক্রুদ্ধ জলের প্রবল তোলপাড়ের উপড়ে গেছে রেললাইন চৌচির হয়েছে ব্রীজ, মৃত পশুর পেটের কাছে ছন্নছাড়া বালক তরঙ্গে ভেসে যায় বৃদ্ধের চশমা, বৃক্ষের শিখরে মানুষের আপৎকালীন বন্ধুত্ব এইসব টুকরো দৃশ্য- এক ধরনের সত্য, আংশিক, কিন্তু বড় তীব্র বিপর্যয়ের সময় এই সব […]

ইচ্ছে

কাচের চুড়ি ভাঙার মতন মাঝে মাঝেই ইচ্ছে করে দুটো চারটে নিয়ম কানুন ভেঙে ফেলি পায়ের তলায় আছড়ে ফেলি মাথার মুকুট যাদের পায়ের তলায় আছি, তাদের মাথায় চড়ে বসি কাঁচের চুড়ি ভাঙার মতই ইচ্ছে করে অবহেলায় ধর্মতলায় দিন দুপুরে পথের মধ্যে হিসি করি। ইচ্ছে করে দুপুর রোদে ব্লাক আউটের হুকুম দেবার ইচ্ছে করে বিবৃতি দিই ভাঁওতা […]

আরও নিচে

সিংহাসন থেকে একটু নিচে নেমে, পাথরের সিঁড়ির উপর বসে থাকি একা, চিবুক নির্ভরশীল চোখ লোকচক্ষু থেকে দূরে। ‘সম্রাটের চেয়ে কিছু কম সম্রাটত্ব’ থেকে ছুটি নিয়ে আজ হলুদ দিনাবসানে পরিকীর্ণ শব্দটির মোহে মাটির মানুষ হতে সাধ হয়। এক-একদিন একরকম হয়। আমার চোখের নীচে কালো দাগ ব্যান্ডেজের মধ্যে একটা পোকা ঢুকলে যে-রকম জাদুদন্ডসম কোনো মহিলার মতো নিয়তি […]

আথেন্‌‌স থেকে কায়রো

বিমানের মধ্যে টাই খুলে ফেলে, সিট্‌ বেল্ট বরিয়ে উঠে দাঁড়ালুম চিৎকার করে বললুম কে কোথায় আছো? পেঁজা তুলোর মতন তুলতুলে মুখ দু’জন হাওয়া-সখী ছুটে এলো- তখন মাথার ওপর ও নিচে ভূমধ্য আকাশ এবং রূপালি সাগর মাঝখানে নীল মেঘ ও ফড়িং পিছনে সন্ধেবেলার ইওরোপ জ্বলছে দাউ দাউ আগুনে সামনে প্রাচ্যদেশ জুড়ে অন্ধকার আমি কর্কশভাবে বললুম, কোথায় […]

আত্মা

প্রতিটি ট্রেনের সঙ্গে আমার চতুর্থভাগ আত্মা ছুটে যায় প্রতিটি আত্মার সঙ্গে আমার নিজেস্ব ট্রেন অসময় নিয়ে খেলা করে। আলোর দোকানে আমি হাজার হাজার বাতি সজিয়ে রেখেছি নষ্ট-আলো সঞ্জীবনী শিক্ষা করে আমার চঞ্চল অহমিকা। জাদুঘরে অসংখ্য ঘড়িতে আমি অসংখ্য সময় লিখে রাখি নারীর ঊরুর কাছে আমার পিঁপড়ে দূত ঘোরে ফেরে আমারই ইঙ্গিতে তারা চুম্বনের আগে কেঁপে […]

হঠাৎ নীরার জন্য

বাস স্টপে দেখা হলো তিন মিনিট, অথচ তোমায় কাল স্বপ্নে বহুক্ষণ দেখেছি ছুরির মতো বিঁধে থাকতে সিন্ধুপারে–দিকচিহ্নহীন– বাহান্ন তীর্থের মতো এক শরীর, হাওয়ার ভিতরে তোমাকে দেখছি কাল স্বপ্নে, নীরা, ওষধি স্বপ্নের নীল দুঃসময়ে। দক্ষিণ সমুদ্রদ্বারে গিয়েছিলে কবে, কার সঙ্গে? তুমি আজই কি ফিরেছো? স্বপ্নের সমুদ্র সে কী ভয়ংকর, ঢেউহীন, শব্দহীন, যেন তিনদিন পরেই আত্মঘাতী হবে, […]

স্বপ্ন, একুশে ভাদ্র

কোন্‌ দিকে? কোন্‌ দিকে? আমি চিৎকার করলাম অমনি ভিড়ের ভিতরে একটা মোহর এসে ছিট্‌কে পড়লো। তৎক্ষণাৎ নৈঋত বাদ দিয়ে সাতদিকে সাতটা রাস্তা খুলে গেল জ্যোৎস্নায় বড় চিত্তহারী সেই পথগুলি এবং জ্যোৎস্নায় ভিড়ের প্রতিটি টুকরো শত শত হুইস্‌ল বাজিলে ছুটে গেল ব্যক্তিগত পথে পথে। কোন্‌ দিকে? কোন্‌ দিকে? আমি তীব্র ধাবমান কয়েকটি কলার চেপে হেঁকে উঠি, […]