ভোরের বেলা ফুল তুলে ছিলাম

বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে সুমিত লন্ডন থেকে ফিরেছে দেশে, প্রবাসে থাকলেও প্রায় প্রতি বছর দেশে যাওয়া আসা তার তবুও সময় এবং অলসতার কারনে অনেকের সাথে দেখা হয়ে উঠে না । একমাস ছুটি নিয়ে দেশে এসেছে তাই বাবার মৃত্যুর সমস্ত আনুষ্টানিকতা শেষ করার পর হাতে অনেক সময় কিন্তু সে সময় তার কিছুতেই কাটতে চায় না । এমনিতেই তার বন্ধুর সংখ্যা খুবই কম তা যেমন দেশে তেমন প্রবাসেও । সকাল বিকালের অলস সময় গুলো একা একা ডিসি হিলে হাটা হাটি ছাড়া তেমন কিছু করার নেই । ডিসি হিলের ঝালমুড়ি বিক্রেতা শাহেদ এর সাথে বন্ধুত্ব হয়ে উঠে ।শাহেদ এর সাথে গল্প করতে সুমিতের ভালোই লাগে । শাহেদ প্রতিদিন তার রিকসাভ্যান নিয়ে সকাল দশটার দিকে হাজির হয় ডিসি হিলে , শাহেদ এক কন্যা সন্তানের পিতা স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদ হওয়ার পর শাহেদ সেই সন্তানের লালন পালনের ভার নিয়েছে কিন্তু তার ব্যবসা উপলক্ষে চট্টগ্রাম থাকার কারনে দাদীর কাছেই থাকে তার মেয়ে …।
শাহেদ অনেক বিষয়ে কথা বলে মাঝে মাঝে রাজনীতির প্রসংগও চলে আসে সুমিত অবশ্য কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের সমর্থক নয় । সুমিতের কয়েকজন বন্ধুকে রাজনীতির জন্য প্রান দিতে হয়েছে আর সেই কারনেই রাজনীতির উপর একধরনের ভীতশ্রদ্ব ।
সুমিত যখন কলেজে পড়ে তখন এ সময়ের মত এত পত্রিকা ছিল না ।ফেসবুক টুইটার তো ছিলই না। তেমনি সবার হাতে হাতে মোবাইল ছিল না। দৈনিক ইত্তেফাকের একচেটিয়া রাজত্ব । সুমিত প্রায় সব দৈনিকই পড়তো কারন বেশ কয়েকটি পত্রিকা পড়লেই খবরের ভিতরের খবর বোঝা যায় । প্রতিটি পত্রিকারই একটি রাজনৈতিক আদর্শ আছে আর সেই কারনেই একই খবর এক এক পত্রিকায় একেক ভাবে উপস্থাপন করা হয় । সুমিতের ভাল লাগত দৈনিক সংবাদ । তার অবশ্য বিশেষ কারনও ছিল । দৈনিক সংবাদের উপসম্পাদকীয় গুলো ছিল চমৎকার । এত বছর পরও সুমিতের যে কলামের কথা মনে পড়ে তা গাছপাথর ছদ্মনামে লিখিত সময় বহিয়া যায় শিরোনামের লেখাগুলো । এখনো সুমিত দিগন্ত থেকে আলো সব পত্রিকাই পড়ে ।
যে সময়ের কথা বলছি সে সময় এরশাদের সামরিক শাসন চলছে পত্রিকার উপর হাজারো বিধি নিষেধ তারপরো এক আলোর ঝলকানি নিয়ে শফিক রেহমান ( নভেরা উপন্যাসে পড়েছিলাম উনার প্রকৃত নাম হচ্ছে শফিক রহমান) প্রকাশ করলেন সাপ্তাহিক যায়যায়দিন । যখন মাত্র দুই টাকা প্রতিটি দৈনিক তখন মাত্র তিন টাকায় একটি সাপ্তাহিক বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ।সাপ্তাহিকটিতে নানা মতের লেখকের সমন্বয় ঘটেছিল । লেখক হিসাবে একদিকে আব্দুল গাফফার চৌধুরী অন্যদিকে ছিলেন ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী দুজনের রাজনৈতিক মতাদর্শ ছিল বিপরীত ধর্মী । তারিক ইব্রাহিম,স্বদেশ রায়, সুমিত রেহমান আরও লিখতেন সাইদুর রহমান । সাইদুর রহমান হচ্ছেন শফিক রেহমানের পিতা আর সুমিত রেহমান ছেলে । আমার মনে হয় বাংলাদেশের কোন পত্রিকায় তিন প্রজন্মের লেখার প্রকাশ সেই প্রথম ।
আজকে বাংলাদেশে যে ভালোবাসা দিবস এত জনপ্রিয় হয়েছে তার সুচনা করেছিলেন শফিক রেহমান সে সময় ১৪ ফেব্রুয়ারী ভালোবাসা দিবস সংখ্যা প্রকাশ করতো যায় যায় দিন ।পাঠকেরাই ছিলেন যার লেখক। এধরনের প্রকাশনা আজকাল চোখে পড়ে না । এরশাদ সাহেবের সামরিক শাসনের বিরোধীতার কারনে অবশ্য বেশ কয়েকবার বন্ধ হয়ে যায় । শফিক রেহমান গড়ে তুলেছিলেন রিডার্স রাইটস কমিটি নামের সংগঠন ।
এরপরের ইতিহাস ভিন্ন যায়যায়দিন সাপ্তাহিক থেকে দৈনিকে রুপান্তরিত হলো শুরু হলো এর পতন আর সেই সাথে বদলে গেলেন শফিক রেহমান । অবশ্য বদলের আরেক নামই তো জীবন । সুমিতের সবচেয়ে খারাপ লেগেছে শফিক রেহমান যখন দৈনিক যায়যায়দিনের সাংবাদিকদের বেতন ভাতা না দিয়ে দেশ ত্যাগ করার পর আত্মপক্ষ সমর্থনে তিনি লিখেছিলেন বিমান বন্দরের বাহিরে সাংবাদিকদের বিক্ষোভ সম্পর্কে তিনি অজ্ঞাত ছিলেন । শফিক রেহমানের মত না হলেও পৃথিবীর বেশ অনেক গুলো বিমান বন্ধর দেখার সৌভাগ্য সুমিতের হলেও সুমিতের মনে হয়েছে ঢাকাই হচ্ছে একমাত্র বিমান বন্দর যেখান থেকে খুব সহজেই তার বাহিরে কি হচ্ছে স্পষ্ট দেখা যায় । অমন নির্লজ্জ মিথ্যাচার তিনি কিভাবে করলেন ।
এখন অবশ্য আরেকটি দিবসের সুচনা করা যায় । ১৪ মার্চ White Day এটি জাপানে চালু আছে । পৃথিবীর অনেক দেশেই ভ্যালেইন্টান দিবসে ফুল দেওয়ার প্রথা থাকলেও জাপানে চকোলেট দেওয়ার প্রথা আছে । হয়তো কাউকে ফুল উপহার দেওয়ার মধ্যে অনেক মানে থাকে তাই ! জাপানী সমাজে কেঊ কাউকে কিছু দিলে তার প্রতিদান দেওয়া হয় । আপনি যদি কারো বিয়ের অনুষ্টানে উপস্থিত হোন তো অবশ্যই কিছু উপহার দেবেন তাই নয় কি ? জাপানেও তাই আপনি যখন বিয়ের অনুষ্টান থেকে ফিরবেন আপনাকেও দেওয়া হবে তেমন একটি উপহার ।জাপানের ভালেন্টাইনের উপহার মেয়েদের পক্ষ থেকে ছেলেদেরকে দেওয়া হয় চকোলেট । সেই প্রথা পরিবার,স্কুল থেকে কর্মস্থলে সর্বত্র বিরাজিত । প্রাপ্ত চকোলেট বা উপহারের বিপরীতে উপহার দাতাকে ১৮ মার্চ হোয়াইট ডে তে উপহার দেওয়া হয় কুকি (Cookie) ।
আশির দশকের সে সময় মাঝে মাঝে সুমিত চলে যেত সুতপাদের বাসায় । সুতপা ছিল সুমিতের এক বছরের ছোট । সুতপা অবশ্য অনেক দুরের কলেজে পড়াশুনা করতো । তাই সুতপার সাথে সুমিতের খুব কমই দেখা হতো । সুতপার মা চিকিৎসা উপলক্ষে দেশের বাহিরে । সুতপা এবং সুতপার ছোট ভাই সুপ্রিয় মিলে চমৎকার আড্ডা দিতো সুমিত । অনেক বছর পর সুমিতের সে সব কথা তেমন মনে নেই । স্মৃতি মনে হয় তেমনই । মাঝে মাঝে রোমন্থন না করলে মুছে যায় । অনন্যা যেমন বলে স্মৃতির জাবর কাটা ।সুপ্রিয়ের একটা কথা সুমিতের এখনো মনে পরে -বাহিরে ভাল ভিতরে খারাপ । সুমিত এর মানে জানতে চেয়েছে অনেক বার সুপ্রিয়ের কাছে কিন্তু কোন জবাব পায়নি ।
সুমিতের সাথে সুতপার প্রথম দেখা হয়েছিল তারও বছর তিনেক আগে অনেক চেষ্টা করেও সুমিত সালটি মনে করতে পারে না তবে দিনটি কেন জানি মনে রয়ে গেছে । দিনটি ছিল ১৬ জুলাই।
(অসমাপ্ত)

রেটিং করুনঃ
1 Star2 Stars3 Stars4 Stars5 Stars (No Ratings Yet)
Loading...
মিতা- র আরো পোষ্ট দেখুন