সে

আমাকে সে নিয়েছিলো ডেকে; বলেছিলো: ‘এ নদীর জল তোমার চোখের মত ম্লান বেতফল: সব ক্লান্তি রক্তের থেকে স্নিগ্ধ রাখছে পটভূমি; এই নদী তুমি।’ ‘এর নাম ধানসিঁড়ি বুঝি?’ মাছরাঙাদের বললাম; গভীর মেয়েটি এসে দিয়েছিলো নাম। আজো আমি মেয়েটিকে খুঁজি; জলের অপার সিঁড়ি বেয়ে কোথায় যে চলে গেছে মেয়ে। সময়ের অবিরল শাদা আর কালো বনানীর বুক থেকে […]

সূর্যকরোজ্জ্বলা

আমরা কিছু চেয়েছিলাম প্রিয়; নক্ষত্র মেঘ আশা আলোর ঘরে ঐ পৃথিবীর সূর্যসাগরে দেখেছিলাম ফেনশীর্ষ আলোড়নের পথে মানুষ তাহার ছায়ান্ধকার নিজের জগতে জন্ম নিল- এগিয়ে গেল; – কত আগুন কত তুষার যুগ শেষ করে সে আলোর লক্ষ্যে চলার কোন্‌ শেষ হবে না আর জেনে নিয়ে নির্মল নির্দেশ পেয়ে যাবে গভীর জ্ঞানের, – ভেবেছিলাম, পেয়ে যাবে প্রেমের […]

পতিতা

আগার তাহার বিভীষিকাভরা, জীবন মরণময়! সমাজের বুকে অভিশাপ সে যে – সে যে ব্যাধি, সে যে ক্ষয়; … প্রেমের পসরা ভেঙে ফেলে দিয়ে ছলনার কারাগারে রচিয়াছে সে যে, দিনের আলোয় রুদ্ধ ক’রেছে দ্বার! সূর্যকিরণ চকিতে নিভায়ে সাজিয়াছে নিশাচর, কালনাগিনীর ফনার মতন নাচে সে বুকের পর! চক্ষে তাহার কালকুট ঝরে, বিষপঙ্কিল শ্বাস, সারাটি জীবন মরীচিকা তার […]

তোমাকে

একদিন মনে হতো জলের মতন তুমি। সকালবেলার রোদে তোমার মুখের থেকে বিভা– অথবা দুপুরবেলা — বিকেলের আসন্ন আলোয়– চেয়ে আছে — চলে যায় — জলের প্রতিভা। মনে হতো তীরের উপরে বসে থেকে। আবিষ্ট পুকুর থেকে সিঙাড়ার ফল কেউ কেউ তুলে নিয়ে চলে গেলে — নীচে তোমার মুখের মতন অবিকল। নির্জন জলের রঙ তাকায়ে রয়েছে; স্থানান্তরিত […]

নির্জন স্বাক্ষর

তুমি তা জানো না কিছু, না জানিলে- আমার সকল গান তবুও তোমারে লক্ষ্য ক’রে! যখন ঝরিয়া যাব হেমন্তের ঝড়ে, পথের পাতার মতো তুমিও তখন আমার বুকের ‘পরে শুয়ে রবে? অনেক ঘুমের ঘোরে ভরিবে কি মন সেদিন তোমার! তোমার এ জীবনের ধার ক্ষয়ে যাবে সেদিন সকল? আমার বুকের ’পরে সেই রাতে জমেছে যে শিশিরের জল, তুমিও […]

মনে হয় একদিন আকাশের শুকতারা দেখিব

মনে হয় একদিন আকাশের শুকতারা দেখিব না আর; দেখিব না হেলেঞ্চার ঝোপ থেকে এক ঝাড় জোনাকি কখন নিভে যায়;-দেখিব না আর আমি পরিচিত এই বাঁশবন, শুকনো বাঁশের পাতা-ছাওয়া মাটি হয়ে যাবে গভীর আঁধার আমার চোখের কাছে;- লক্ষ্মীপূর্ণিমার রাতে সে কবে আবার পেঁচা ডাকে জ্যোৎস্নায়;-হিজলের বাঁকা ডাল করে গুঞ্জরণ; সারা রাত কিশোরীর লাল পাড় চাঁদে ভাসে-হাতের […]

বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি

বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর : অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে চেয়ে দেখি ছাতার মতন বড়ো পাতাটির নিচে বসে আছে ভোরের দোয়েলপাখি — চারিদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ জাম — বট — কাঠালের — হিজলের — অশখের করে আছে চুপ; ফণীমনসার ঝোপে শটিবনে তাহাদের ছায়া পড়িয়াছে; মধুকর ডিঙা […]

আকাশলীনা

সুরঞ্জনা, অইখানে যেয়োনাকো তুমি, বোলোনাকো কথা অই যুবকের সাথে; ফিরে এসো সুরঞ্জনা : নক্ষত্রের রুপালি আগুন ভরা রাতে; ফিরে এসো এই মাঠে, ঢেউয়ে; ফিরে এসো হৃদয়ে আমার; দূর থেকে দূরে – আরও দূরে যুবকের সাথে তুমি যেয়োনাকো আর। কী কথা তাহার সাথে? – তার সাথে! আকাশের আড়ালে আকাশে মৃত্তিকার মতো তুমি আজ : তার প্রেম […]

বনলতা সেন

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে, সিংহল-সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয়-সাগরে অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার-অশোকের ধূসর জগতে সেখানে ছিলাম আমি; আরও দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে; আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন, আমারে দু-দন্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন । চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা, মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের […]

নাবিক

কবে তব হৃদয়ের নদী বরি নিল অসম্বৃত সুনীল জলধি! সাগর-শকুন্ত-সম উল্লাসের রবে দূর সিন্ধু-ঝটিকার নভে বাজিয়া উঠিল তব দুরন্ত যৌবন! পৃথ্বীর বেলায় বসি কেঁদে মরে আমাদের শৃঙ্খলিত মন! কারাগার-মর্মরের তলে নিরাশ্রয় বন্দিদের খেদ-কোলাহলে ভ’রে যায় বসুধার আহত আকাশ! অবনত শিরে মোরা ফিরিতেছি ঘৃণ্য বিধিবিধানের দাস! -সহস্রের অঙুলিতর্জন নিত্য সহিতেছি মোরা-বারিধির বিপ্লব-গর্জন বরিয়া লয়েছ তুমি, তারে […]