মতিন সাহেবের মা

মতিন সাহেব বুক হাতাতে হাতাতে বিছানায় বসে পড়লেন। মুখে দুশ্চিন্তার ছায়া। ডানহাতে বুকের বাঁ পাশটা হাতাচ্ছেন। নাশতার পরের অষুদ আর পানি নিয়ে এসেছেন রেখা। স্বামীর অবস্থা দেখে বললেন, কী হল, এমন করছ কেন?
মতিন সাহেবের চোখে ঘন ঘন পলক পড়ছে। চিন্তিত গলায় বললেন, বুকটা ব্যথা করছে। বেশ ভালো রকমের ব্যথা।
হঠাৎ বুক ব্যথা? নাশতার আগের অষুদগুলো খাওনি?
খেলাম তো! হেঁটে এসেই গ্যাস্ট্রিকের অষুদ খেলাম, ডায়াবেটিসের অষুদ খেলাম। নাশতার আগে গ্যালভাস খেলাম। কোনও অষুদ বাদ যায়নি।
ব্যথা কি বেশি? প্রেসার আর হার্টের অষুদটা খেয়ে নাও। হঠাৎ এরকম একটু আধটু ব্যথা হতে পারে। চিন্তা করো না। কমে যাবে।
মতিন সাহেব হাত বাড়িয়ে অষুদ নিলেন, পানি নিলেন। খেয়ে ছোট্ট একটা ঠেঁকুর তুললেন। তার বয়স সাতষট্টি। ডায়াবেটিস হয়েছে বছর দশেক। গ্যাস্ট্রিক রোগটা আগেই ছিল। ডায়াবেটিসের পর হল প্রেসার। দু’বেলা প্রেসারের অষুদ খান। ডাক্তার আজিজ তার পুরনো বন্ধু। মেডিসিন ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ। খুবই ভালো ডাক্তার। কার্ডিকর নামের একটা অষুদ দিয়ে রেখেছেন হার্টের জন্য। হার্ট ঠিক রাখবে। সকালবেলা একটা খেতে হয়। প্রেসারের অষুদের সঙ্গে রাতে দিয়েছেন রসুভা। এই সব অষুদে মতিন সাহেব বেশ ভালো আছেন। ইনসুলিন নিতে হয় না। ডায়াবেটিস কন্ট্রোলে থাকে।

মতিন সাহেব সচেতন লোক। মিষ্টি মুখে দেন না। রেডমিট এভয়েড করেন। ভারি খাবার খান না। স্ত্রী দুই ছেলে আর ছেলের বউরা ভালোই দেখাশোনা করে তার। স্ত্রীর বয়স হয়েছে একষট্টি। মাইগ্রেনের সমস্যা ছাড়া অন্য কোনও সমস্যা তার নেই। ডাক্তার আজিজ তাকেও দেখেন। আজিজের অষুদে রেখাও ভালো আছেন। রেখার একটা বিরাট গুণ হল ঘুম। শোয়ার মিনিটখানেকের মধ্যে গভীর ঘুমে ডুবে যান। যারা ভালো ঘুমাতে পারে, রোগবালাই তাদের কম হয়।

মতিন সাহেবের ঘুমও মন্দ না। রাত দশটার দিকে শুয়ে পড়েন। ভোর পাঁচটায় উঠে মসজিদে গিয়ে ফজরের নামাজ পড়েন। বাড়ি ফিরে একগ্লাস পানি আর তিনটা সুগার ফ্রি বিস্কুট খেয়ে হাঁটতে বেরোন। প্রায় ঘণ্টাখানেক হেঁটে বাড়ি এসে ডায়াবেটিস আর গ্যাস্ট্রিকের অষুদ খেয়ে আধঘণ্টা রেস্ট নিয়ে নাশতা করেন। খুবই সাদামাটা নাশতা। একবাটি সবজি, লালআটার পাতলা তিনটা রুটি, একটা সেদ্ধ ডিম আর কয়েক টুকরা পাকা পেঁপে। সবজির সঙ্গে এক টুকরা লেবু থাকে। লেবুর রস ডায়াবেটিস রোগিদের জন্য ভালো।

মতিন সাহেব কাপড়ের ব্যবসায়ি। ইসলামপুরের জনাকয়েক বড় ব্যবসায়ির তিনি একজন। শুরু করেছিলেন ছোট একটা দোকান দিয়ে। সে সব অনেক আগের কথা। স্বাধীনতার তিন-চার বছর পর। ধীরে ধীরে ব্যবসা বড় হয়েছে। ইসলামপুরে চারতলা একটা বিলডিংই কিনে ফেলেছেন। নিচতলায় বিশাল শোরুম, দোতলায় অফিস। তিনতলা চারতলায় গোডাউন। নিজেদের মিলের কাপড় বিক্রি করেন। তার মিলের কাপড়ের খুব ডিমান্ড। মিল কাঁচপুরে। ছোট ছেলে মিল সামলায়। তিনি আর বড় ছেলে সামলান ইসলামপুরের ব্যবসা।

সকাল দশটায় বড় ছেলেকে নিয়ে ইসলামপুরে আসেন মতিন সাহেব। ছেলে গিয়ে বসে দোতলার অফিসে, তিনি বসেন শোরুমে। বসেন এক কাপ লাল চা আর মোবাইল নিয়ে। মেয়েদের ফোন করেন। নাতি-নাতনির খোঁজ-খবর নেন। অল্প বয়সে বিয়ে করেছিলেন। প্রথম ছেলের পরে হল এক মেয়ে তারপর এক ছেলে আর দুই মেয়ে। পাঁচ ছেলে-মেয়েরই বিয়েশাদি হয়ে গেছে। বড়মেয়ে থাকে বনানীতে। জামাই গার্মেন্টস ব্যবসায়ি। দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে রাজরানীর মতো জীবন সেই মেয়ের। মেজোমেয়ে থাকে কানাডায়, ছোটমেয়ে অস্ট্রেলিয়ায়। তাদের অবস্থাও ভালো। সব মিলিয়ে খুবই গোছানো জীবন তার।

বারোটার দিকে ডাবের পানি আর ফল খান মতিন সাহেব। ভাত খান দেড়টায়। খাবার বাড়ি থেকেই আসে। খাওয়ার পর ঘণ্টা দেড়েক ঘুমান। দোতলায় সুন্দর একটা রুম আছে রেস্ট নেয়ার। আরামদায়ক বিছানা, এসি ফ্রিজ চেয়ার-টেবিল, নামাজের ব্যবস্থা। একেবারে বাড়ির মতো অবস্থা। যদিও তার বাড়িটা পুরনো। হাল আমলের বাড়ির মতো আধুনিক না। তবে সে বাড়িতে আরামের কমতি নেই। রেনোভেসান করে যতটা আধুনিক করা যায়, করা হয়েছে।

স্বাধীনতার পর পরই বাড়িটা কিনেছিলেন বড়ভাই। লক্ষ্মীবাজার এলাকার পুরনো হিন্দুবাড়ি। পনরো কাঠার ওপর বিশাল তিনতলা বিলডিং। তেষষ্টি-চৌষষ্টি সালের দিক থেকে পুলিশ বিভাগে সাপ্লাইয়ের ব্যবসা করতেন বড়ভাই। ভালো টাকা রোজগার করতেন। বিক্রমপুর থেকে মা আর ভাইদের নিয়ে, বোন নিয়ে এই বাড়িতেই এসে উঠেছিলেন। ভাড়া থাকতেন তিনতলায়। তারপর থেকে উন্নতি আর উন্নতি। যেখানে হাত দিচ্ছেন, সোনা ফলছে।

বাবা মারা যাওয়ার পর মা দুইভাই আর এক বোনের সংসার চেপেছিল বড়ভাইর কাঁধে। বোন ছিল সেজো। মতিন সাহেব সবার ছোট। এই বাড়িতেই ধুমধাম করে বিয়ে হয়েছিল বোনের। জামাই নারায়ণগঞ্জে সুতার ব্যবসা করে। পাবনার লোক। সংসারে কেউ ছিল না। অল্প বয়সে এতিম হয়ে চাচার কাছে মানুষ। নারায়ণগঞ্জে বাসা ভাড়া করে থাকে। ব্যবসা মন্দ না। বোনের নাম রানি। মা বলেছিলেন, জামাই লইয়া এই বাড়িতেই থাকুক রানি। ভালো হইব।

জামাইও রাজি ছিল। বড়ভাই রাজি হলেন না। তিন বছরের মাথায় বোন চলে গেল। কোলে ছিল দেড় বছরের ছেলে। কী হয়েছিল কেউ বুঝতেই পারল না। রাতে সুস্থ মানুষ ঘুমিয়ে আছে, সকালে লাশ। আশ্চর্য মৃত্যু! মেয়ের শোকে কাঁদতে কাঁদতে মা বলেছিলেন, এই বাড়িত থিকা রানিরে বিদায় করন ঠিক হয় নাই…

বড়ভাই মেজোভাইয়ের ছেলে-মেয়েরা বড় হচ্ছে। দুই ভাবিই উচ্চাকাক্সিক্ষ। বড়ভাই টাকা-পয়সায় বিশাল হয়েছেন। মতিঝিলে অফিস। নানা রকমের ব্যবসা। বাড়ি কিনে চলে গেলেন গুলশানে। মেজোভাই শুরু করেছিলেন আলাদা ব্যবসা। তার অবস্থাও বিরাট। তিনি বাড়ি কিনলেন ইস্কাটনে। মা সব দেখেন আর কাঁদেন। দুই ছেলেকেই বললেন, যাইছ না বাজান। এই বাড়িতেই থাক। রানিরে দেখলি না, এই বাড়িত থিকা গিয়া মরলো…

এ সব কুসংস্কারের কথা কে শোনে? ভাইরা চুপ করে রইলেন, ভাবি বাচ্চা-কাচ্চারা হাসাহাসি করে। দুই ভাইই চেয়েছিলেন মাকে নিয়ে যেতে। মা যাননি। না আমি যামু না। আমি মতিনের লগে এই বাড়িতেই থাকি…

কয়েক বছর পর বড়ভাইয়ের গুলশানের বাড়িতে ঘটল প্রথম দুর্ঘটনা। কিডনি রোগে মারা গেলেন ভাবি। তার কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করা হয়েছিল মাদ্রাজে। তার পরও বাঁচলেন না। ভাবি চলে যাওয়ার পর বছরও ঘোরেনি, স্ট্রোক করে পঙ্গু হয়ে গেলেন বড়ভাই। দেড় বছর পর গেলেন তিনি। তার দুই ছেলে ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়ে এখন আমেরিকায়। সেখানেও ব্যবসাই করে। ভালোই আছে। গুলশানের বাড়িটা ছিল পুরনো। সেটা ডেভেলপারকে দিয়েছিল। একেক ভাই তিনটা করে ফ্ল্যাট পেয়েছে। পুরনো ম্যানেজার ভাড়া তুলে ব্যাংকে জমা দেয়।

মেজোভাইয়ের মেয়ে লন্ডনে গিয়েছিল ব্যারিস্টারি পড়তে। একটাই মেয়ে। সেখানে বিয়ে করে থেকে গেল। ভাই চাইছিলেন মেয়ে দেশে চলে আসুক। বাঙালি জামাই। সেও ব্যারিস্টার। দেশেই প্রাকটিস করুক। পাশপাশি বাবার ব্যবসা দেখুক। তাঁর সিএন্ড এফের বিজনেস, কনস্ট্রাকসানের বিজনেস। মেয়ে এল না। ভাবি গেছেন মেয়ের কাছে। ভাইয়ের দেখাশোনার জন্য কাজের লোকজন আছে। এক সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে বেডরুমে মাত্র ঢুকেছেন, বুক ব্যথা। বুকে হাত দিয়ে বসে পড়লেন। তারপর গড়িয়ে পড়লেন বিছানায়। মুখ দিয়ে ফেনা উঠল। শেষ। বাড়ি ভাড়া দিয়ে ভাবি এখন মেয়ের কাছে লন্ডনেই থাকেন।

এইভাবে একেকজন যায় আর মা বুক চাপড়ে কাঁদেন। কইছিলাম এই বাড়ি থিকা যাইছ না। এই বাড়ি তগো আগলাইয়া রাখবো। আমার কথা কেউ শুনলো না…

এই বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার আগে বাড়িটা ছোটভাইকে লিখে দিয়েছিলেন দুইভাই। বাড়ির একক মালিক এখন মতিন সাহেব। তখন ইসলামপুরে দোকান করে তাঁর অবস্থাও ঘুরছিল। ছোটছেলে একবার আওয়াজ তুলেছিল পুরানা টাউনে থাকবে না। শুনে কঠিন গলায় মতিন সাহেব বলেছিলেন, এখানেই থাকতে হবে। আমার মা আর আমি যতদিন আছি, এখান থেকে নড়তে পারবি না। আমার কাছে আমার মা-ই সব। মা এই বাড়ি থেকে যাবেন না, আমিও যাব না। আমার ছেলেরাও যাবে না। সম্ভব হলে আমি আমার মেয়েদেরও এই বাড়িতেই রেখে দিতাম। বড়মেয়ে দেশে আছে, দেখছিস না তাকে প্রায়ই এই বাড়িতে আসতে বলি। সেও যখন ইচ্ছা চলে আসে…

বুক হাতাতে হাতাতে একসময় বিছানায় শুয়ে পড়েছেন মতিন সাহেব। ব্যথা এখন আরও বেড়েছে। তিনি ছটফট করছেন। রেখা দিশাহারা। কাজের মেয়েদের পাঠিয়ে ছেলে ছেলের বউদের ডাকিয়ে আনলেন। ছোটছেলে থাকে তিনতলায়, বড়ছেলে দোতলায়। মতিন সাহেব থাকেন নিচতলায়। সবাই দৌড়ে এল। রেখা ফোন করলেন বড়মেয়েকে। বেশ একটা হুলুস্থুল পড়ে গেল বাড়িতে। মতিন সাহেবের মা থাকেন উত্তর দিককার একটা রুমে। মতিন সাহেব কোনও রকমে বললেন, মার কানে যেন না যায় আমার এই অবস্থা। আর আজিজকে ফোন করে।

মা ছাড়া এই ঘরে এখন সবাই। নাতি নাতনিরা স্কুলে। বাড়িতে থাকলে তারাও নিশ্চয় ছুটে আসতো। দাদুর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক দারুণ।

ততোক্ষণে ডক্টর আজিজকে ফোন করা হয়ে গেছে। আজিজ বললেন, এক মিনিটও দেরি করা যাবে না। গেণ্ডারিয়াতে আজগর আলী হসপিটাল হয়েছে। খুবই ভাল হসপিটাল। ওখানে নিয়ে যাও। হার্টের ভাল ডাক্তার আছেন। আমি বলে দিচ্ছি। বিকালে আমিও আসবো…

ছোটছেলে গাড়ি রেডি করে ফেলল।

নাশতার পর পরই দোকানে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছিলেন মতিন সাহেব। পরনে সাদা পাজামা পানজাবি। বড়ছেলে আর ছেলের বউ তাঁকে ধরে তুলল। ছোটবউ আর রেখা দাঁড়িয়ে আছেন সামনে। রেখার মুখ ভয়ে শুকিয়ে গেছে। চিন্তিত চোখে স্বামীর দিকে তাকিয়ে আছেন। মতিন সাহেব রেখার দিকে তাকালেন। মুমূর্ষু গলায় বললেন, আমাকে একটু মার রুমে নিয়ে যাও। মাকে বলে যাই…

ছোটবউ বলল, আপনার যাওয়ার দরকার কী? দাদিকেই এই রুমে নিয়ে আসি?

না না, আমাকে নিয়ে যাও। বাড়ি থেকে বেরোবার আগে রোজই মার সঙ্গে দেখা করে যাই…

দুজন দুদিক থেকে ধরে রেখেছে মতিন সাহেবকে। তিনি ঝুকে ঝুকে হেঁটে এলেন মার রুমে। মা বসে আছেন বিছানায়। পরনে সাদা থান, চোখে মোটা কাচের চশমা। পাশে বসে আছে ফরিদা। মা নিচুগলায় কী কী যেন বলছে তাকে। এ সময় মতিন সাহেব এলেন। এই অবস্থা তাঁর, সঙ্গে এত লোকজন, ফরিদা দিশাহারা হয়ে গেল। কেউ তার দিকে তাকাল না। মতিন সাহেব কোনও রকমে মার পাশে বসলেন। বসেই কেঁদে ফেললেন। মা মাগো, আমার বুকটা খুব ব্যথা করছে মা। সহ্য করতে পারছি না…

মা শান্ত চোখে ছোটছেলের দিকে তাকালেন। বুক বেদনা করতাছে বাজান? কিছু হইব না। তুমি এত ঘাবড়াইছো ক্যা? আসো, আমার কাছে আসো।

দুহাতে ছেলেকে বুকের কাছে টেনে আনলেন মা। যেন মতিন সাহেব সাতষট্টি বছরের মতিন সাহেব না। যেন তাঁর বয়স সাত আট বছর। ওইটুকু শিশুকেই যেন বুকে টেনেছেন মা।

মতিন সাহেব তখন শিশুর মতন কাঁদছেন। মা মাগো, আমার মনে হয়, হার্ট এটাক করেছে। আমি মনে হয় বাঁচবো না মা…

কিচ্ছু হয় নাই তোমার। কিচ্ছু হয় নাই বাজান। তুমি শুইয়া পড়ো, আমার এহেনে শুইয়া পড়ো। তোমার মনে নাই, ছোটকালে পেট বেদনা করলে তুমি আমার কাছে আইসা শুইয়া পড়তা আর আমি তোমার পেট হাতাইয়া দিতাম। লগে লগে পেট বেদনা কইমা যাইতো তোমার। শোও বাজান, শোও। আমি তোমার বুক হাতাইয়া দেই, দেখবা অহনই বেদনা কইমা গেছে…

ছেলে ছেলের বউরা বলল, দেরি করা ঠিক হবে না। আজিজ আংকেল বলেছেন হাসপাতালে নিয়ে যেতে…

এবার কথা বললেন রেখা। না, মা যা বলছেন তাই করতে হবে।

তিনি এগিয়ে এসে স্বামীকে মার কোলের কাছে শুইয়ে দিলেন। মতিন সাহেব চোখ বুজে শুয়ে পড়লেন আর মা ধীরে ধীরে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন তার বুকে। সবাই দমবন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে সামনে। ছেলে ছেলের বউদের চোখে মুখে বিরক্তি। দেরি করা ঠিক হচ্ছে না। যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নেয়া দরকার। কিন্তু কেউ কোনও কথা বলতে পারছে না।

পাঁচ-সাত মিনিট এই অবস্থা চলল। হঠাৎ চোখ খুললেন মতিন সাহেব। মুখটা উজ্জ্বল হয়েছে তার। স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন, ব্যথাটা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। হ্যাঁ অনেকখানি কমে গেছে…

মা বললেন, একদমই কইমা যাইব। বেদনা থাকবোই না। তুমি শুইয়া থাকো বাজান। ঘাবড়াইয়ো না। কিচ্ছু হয়নি তোমার…

মিনিট পনেরো পর মতিন সাহেব একদম সুস্থ। দিব্যি উঠে বসলেন। বুকের এদিক-ওদিক হাতাতে হাতাতে বললেন, ব্যথা নেই। একটুও ব্যথা নেই। একদম সেরে গেছে।

মা বললেন, কইলাম না তোমারে, কিচ্ছু হয়নি তোমার। যাও বাজান, ঘরে যাও। আইজ আর দোকানে যাইয়ো না। বাড়িতেই থাকো। বিকালবেলা গিয়া ডাক্তার দেখাইয়া আইসো।

মতিন সাহেব মুগ্ধ শিশুর মতো মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।