শ্রীকান্ত মনিদাস

আমাদের পাড়ায় ফুটপাতের ধারে বসে জুতো পালিশ করে, সেলাই করে, তাপ্পি লাগায়। থাকে আজিমপুরের এক-কামরার এক ভাড়াবাড়িতে। ভাড়া মাসে ১৫০০ টাকা। দাদার জমিজিরেত ছিলো। কিশোরগঞ্জে। সেসব বেচে খেতে খেতে কিছুই আর নেই। বাপ বাধ্য হয়ে নামে মুচি হিসেবে। শ্রীকান্তও বাপের পথ ধরেছে। যে-দোকানগুলোর সামনে বসে, সেখানেই কোথাও রাত্রিবেলা রেখে দ্যায় ওর জিনিসপত্তর ওর জীবনসংগ্রামের সামান্য […]

অনিন্দিতার জন্যে আরো একটি

আমি হবো একটি প্রজাপতি, মাঠে মাঠে ঘুরব খানিক, ক্ষণিকের করব আরতি, সূর্যাস্তের করব বন্দনা। তারপর হারাব আনমনা। আমি হবো একটি মাছরাঙা, গাছে গাছে উড়ব খানিক, দেখব পুকুর আর ডাঙা আনন্দিত দুপুর-রোদ্দুরে। তারপর উড়ে যাব দূরে। কত প্রজাপতি, পাখি এলো। আমাদের ব্যাপ্ত পৃথিবীতে। কিছুক্ষণ থেকে-চলে গেল। কে তাদের, বলো, মনে রাখে? তোমরাও পাবে না আমাকে।।

রাত্রি

রাত্রি যতো বাড়তে থাকে, ততো আত্মমগ্ন হ’তে থাকি। ততোই সুড়ঙ্গ কেটে যেতে থাকি নিজের ভিতরে। হারানো টুকরোগুলো খুঁজে পাই। ততোই একাকী। আত্মা অব্দি কেঁদে ওঠে অদ্ভূত করুণ কন্ঠস্বরে। আশ্চর্য মধুর শব্দে হেসে ওঠে। কিন্তু জানি, পৃথিবীতে হাসা অসম্ভব। হাসি আনন্দের জন্যে নয়__প্রকৃতির চলিষ্ণুতায় ফুল ফোটে। রাত্রি যতো বাড়তে থাকে, হ’তে থাকি গভীর নীরব। ___কেন জন্ম […]

তমসা নদীর তীরে

দিন আসে, দিন যায়। গড়াতে-গড়াতে দিন যায়। রাত্রি আসে, রাত্রি যায়। সপ্তা, মাস, ক্রমিক ঋতুর অবিরল রেলোয়ে চলেছে। শুধু আমি জন্মহীন মৃত্যুর দিকে যাচ্ছি, অনিবারণীয়। পর-পর মলিন ও উজ্জ্বল আভায় ভ’রে যাচ্ছে চারপাশ। কেবল আমারই অর্কেস্টার সাত সুর নিভে আসছে সময়ের তীক্ষ্ম আঁচড়ে। কখন অজ্ঞাতে একটি-দুটি রুপা জাগছে চুলের শিখরে। কিন্তু গাছে-গাছে ঘুরে-ঘুরে আসে যায় […]

সত্যের মতো বদমাশ

তারা দুজন, মা আর ছেলে : মা-র মুখমণ্ডল তৈলাক্ত করুণ ও লম্বিত আর ছেলেটার গোলমুখ বিস্ময় আনন্দ ও কৌতূহলে ভরা, তারা দুজন এক মুষ্টি অথচ সমুদ্রসমান এই গ্রহের মেলার মধ্যে এসে ঢুকলো। এতো লোকজন, আলো হাসি-গান, বাঁশি বাজছে ঐদিকে, কুকী মেয়েদের নাচ দেখার জন্য সাতজন মহাহল্লা করতে করতে পরস্পরের পিঠে চড়ে চলে গেলো। তার পাশ […]

পাঁচটি উজ্জ্বল মাছ

পাঁচটি উজ্জ্বল মাছ ঝর্না থেকে নেমে এসেছিলো। এখন, রহস্যময় জলে, খেলা করে অবিরল। পদ্মায় গিয়েছে একটি– মেঘনায়-যমুনায়-সুরমায়– আর-একটি গোপন ইচ্ছায়। পাঁচটি উজ্জ্বল মাছ ঝর্না থেকে নেমে এসে সাঁতরে চলে বিভিন্ন নদীতে। পাঁচটি উজ্জ্বল মাছ জলের রহস্য ভেদ করে এখন একাকী এক শব্দহীন সমুদ্রে চলেছে।

সোনালি আর ডালিয়া

সোনালির সঙ্গে ডালিয়ার দেখা হয়ে গেল একদিন। ডালিয়াকে জড়িয়ে ধরল সোনালি। ডালিয়া বলল—আপনি কে? সোনালি বলল—আমি সোনালি। কত নাম শুনেছি তোমার। তোমাকে তো দেখামাত্র চিনে ফেললাম। ডালিয়া বলল—কার কাছে নাম শুনেছেন আপনি? নাম বলল সোনালি। ছায়া নামল ডালিয়ার দুধের মতো ফরসা মুখমণ্ডলে। বলল শুধু—ও। সোনালি বলে—মুখ কালো হয়ে গেল কেন তোমার? উনি সারাক্ষণই তোমার কথা […]

সেরগেই এসেনিন বলছে

ইসাডোরা, বার্লিনে তোমার সঙ্গে আছি আমি। আমার সঙ্গে আরেক কবি – গাধাও বলতে পারো – গলায় ঝোলানো গিটার, খামোখাই, বাজাতে-টাজাতে পারে না। কোত্থেকে এলেন আমাদের সেই মহাকথাশিল্পী, ম্যাকসিম গোর্কি। চেহারা ভাঙাচোরা হলে কী হবে, চোখ দুটিতে তাঁর যেন ছুরির ঝলক, সেই চোখ সব-কিছুর অন্তস্তলে ঢুকে যায়। আমার দিকে তাকিয়ে গোর্কি, চোখে স্নেহ ঝরে পড়ছে, বললেন, […]

গ্রিনরোড

একদিন কুলিরোড ছিলে। হাঁটু অব্দি ডোবানো ধুলোয় ছিলে এক নির্জন তাপস। অড়হরখেতে একদিন দেখেছিলাম তরুণ খরগোশ যেন কোন প্রাকৃতিক নিবিড় নিখিলে বিদ্যুচ্চমক তুলে মিশে গিয়েছিলো মটরশুঁটির খেতে। লাল-কালো কুঁচফল পেড়েছি একদিন সান্দ্র ঝোপ থেকে দেখেছি ধানখেত, কামময়, গভীর খোড়ল, কৈশোরক নিরুদ্বেগে, কৌতূহলে। তারপর সপ্তর্ষির নৈশ সংকেতে আমগাছ জামগাছ কাঁঠালগাছের শ্যাম ক্রমাগত মুছে মুছে উঠে আসছে […]

আলোক সরকার আর অন্ধকার রায়

‘একি, আপনি বাজারে? কবিশাহেব, আপনিও কি বাজার করেন?’ –হ্যাঁ, আমাকেও বাজার করতে হয়, আমাকেও তেল-নুন-মাংসের হিশেব কষতে হয়– আমি নই বায়ুভুক রবীন্দ্রনাথ। কবিতাকেও হতে হয় পৌরুষেয়– শুধু নারীলাবণিগ্রস্ত নয়। বসন্তের সংঘর্ষে জ্বলে উঠতে হয় আগুনের মতো। জীবনানন্দকেও একদিন খালি গায়ে দুই হাতে দুই ভরা পানির বালতি বয়ে নিয়ে যেতে দেখেছিলেন অনুজ কবি আলোক সরকার আর […]